করবিন প্রশ্নে লন্ডনের মেয়র সাদিক খানের ইউটার্ন !

ফাইল ছবিএকেবারে ইউটার্ন নিয়েছেন লেবার পার্টির সদস্য ও লন্ডনের মেয়র সাদিক খান। গত জুনে তিনি করবিনকে বলেছিলেন সবচেয়ে যোগ্য ব্যক্তি। যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচন নিয়ে লেবারদের চিন্তা করতে বলার নামে পরোক্ষে তিনি করবিনের নেতৃত্ব চ্যালেঞ্জ না করতে প্ররোচিত করেছিলেন। তবে এবার তিনি দলীয় নেতৃত্বের চ্যালেঞ্জে ব্রিটিশ লেবার পার্টির বর্তমান নেতা জেরেমি করবিনকে হারিয়ে দিয়ে ওয়েন স্মিথকে জয়ী করার জন্য ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য অবজারভারে লেখা এক নিবন্ধে এ আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। লেবার পার্টির এ সদস্যের দাবি, ব্রেক্সিটের বিপক্ষে প্রচারণায় যুক্তরাজ্যের জনগণের সমর্থন পেতে করবিন যেভাবে ব্যর্থ হয়েছেন, সেই ধারবাহিকতায় সাধারণ নির্বাচনেও ব্যর্থ হতে পারেন।
গত জুন মাসে পরোক্ষভাবে করবিনের পক্ষে থাকারই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তিনি। সেসময়, প্রত্যক্ষভাবে জেরেমি করবিনের পক্ষে কোনও অবস্থান না নিলেও সাদিক খান দলীয় প্রধানের নেতৃত্ব চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ায় শঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন, দলের মধ্যকার বিভক্তির কারণে লেবাররা আসন্ন নির্বাচনে পরাজিত হতে পারে। আর এবার সাদিক খান শঙ্কা জানিয়েছেন, করবিনের নেতৃত্বে থাকলে দল পরাজিত হতে পারে। 

উল্লেখ্য, দলের তৃণমূল কর্মীদের নিরঙ্কুশ সমর্থন নিয়ে লেবারদের নেতা নির্বাচিত হয়েছিলেন করবিন। আর গত মে মাসে লন্ডনের মেয়র নির্বাচিত হন সাদিক খান। দলের প্রভাবশালীদের মতের বিরুদ্ধে লেবার পার্টির নেতা নির্বাচিত হওয়া বামপন্থী জেরেমি করবিনের জন্য এটা ছিল প্রথম কোনও নির্বাচনী পরীক্ষা। দীর্ঘ আট বছর পর সাদিকের হাত ধরে লন্ডনের কর্তৃত্ব ফিরে পাওয়াকে এ নির্বাচনে লেবারের সবচেয়ে বড় সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছিল। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের আলাদা না হওয়ার পক্ষে অর্থাৎ ‘রিমেইন’ শিবিরের হয়ে প্রচারণা চালিয়েছিলেন তিনি। তবে ব্রিটিশ জনগণের রায় এর বিপক্ষে যাওয়ার পর দলীয় নেতৃত্বের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েন এ লেবার নেতা। করবিনের বিপক্ষে দলীয় নেতৃত্বের চ্যালেঞ্জে নামেন ঈগল এবং ওয়েন স্মিথ। পরে অবশ্য স্মিথকে সমর্থন জানিয়ে ঈগল এ লড়াই থেকে সরে দাঁড়ান। করবিন আর স্মিথের মধ্যেই এখন নেতৃত্বের মূল লড়াইটা হতে যাচ্ছে। 

দ্য অবজার্ভার পত্রিকায় সাদিক খান লিখেছেন, ‘এরই মধ্যে জেরেমি প্রমাণ করে দিয়েছেন যে, তিনি একটি কার্যকর দল সংগঠনের সক্ষমতা রাখেন না। তিনি ব্রিটিশদের আস্থা ও শ্রদ্ধা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছেন। জেরেমির ব্যক্তিগত রেটিং এখন যেকোনও বিরোধী দলীয় নেতার মধ্যে সবচেয়ে নিচে। সেকারণে লেবার পার্টিকে খুব বাজেভাবে ভুগতে হচ্ছে। তিনি পার্লামেন্টে লেবার দলের শতকরা ৮০ ভাগেরও বেশি এমপির আস্থা হারিয়েছেন। আমি  এ নিয়ে উদ্বিগ্ন। এ অবস্থা আমরা চলতে দিতে পারি না’। 

স্মিথের প্রতি নিজের সমর্থন ব্যক্ত করতে গিয়ে সাদিক খান বলেন, ‘ইরাক যুদ্ধে বিরোধিতা করাসহ বড় বড় ইস্যুগুলোর ক্ষেত্রে আমি আর স্মিথ একই পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলাম’। সাদিকের সমর্থন পেয়ে ওয়েন স্মিথ বলেছেন, ‘আমি তার সমর্থনে ভীষণ সম্মানিত বোধ করছি’। 

গত জুন মাসে ব্রেক্সিট প্রশ্নে গণভোটের পর সাদিক খান বলেছিলেন, গণভোটে লেবারদের প্রচারণা সন্তুষ্ট করতে পারেনি তাকে। তিনি বলেছেন, ‘আমার নিজস্ব অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, গণভোটের ক্যাম্পেইনের ক্ষেত্রে ম্যানচেস্টার কিংবা লিডস অথবা ওল্ডহাম, কিংবা ব্রাডফোর্ডের ভোটাররা লেবারদের অবস্থান সম্পর্কে সচেতন ছিল না।’ নির্বাচন জয়ের কৌশল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘একটি বড় নির্বাচন জিততে, তা লন্ডনের মেয়র নির্বাচনের ক্ষেত্রেই হোক আর সরকার প্রতিষ্ঠায় হোক... শুধুমাত্র গত নির্বাচনের লেবার সমর্থকদের বিবেচনায় নিলেই চলবে না। আপনাকে রক্ষণশীল সমর্থক, উদার গণতন্ত্রের সমর্থক, গ্রীন মুভমেন্টের সমর্থকসহ সবার কাছেই ভোটের আহ্বান নিয়ে যেতে হবে।’ 

সেসময় করবিনের নেতৃত্ব নিয়ে সাদিক খান কোনও সংশয় প্রকাশ করেননি। বরং বলেছিলেন, ‘আমি মনে করি, সবথেকে যোগ্য ব্যক্তিকেই আমি সমর্থন দিয়েছিলাম।’ সূত্র: গার্ডিয়ান, টেলিগ্রাফ

/এফইউ/বিএ/