প্যারিসের ঐতিহাসিক জলবায়ু চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের আনুষ্ঠানিক অনুমোদন

obama-xi-climate-agreement

শেষ পর্যন্ত প্যারিস জলবায়ু চুক্তি আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন করেছে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র। জলবায়ু পরিবর্তন রোধে কার্বন নিঃসরণ কমানোর ব্যাপারে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজি হয়েছে তারা। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম খবরটি নিশ্চিত করেছে।

গত ডিসেম্বরে প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনে বৈশ্বিক উষ্ণতা ২ ডিগ্রির নিচে রাখার জন্য বিশ্বজুড়ে কার্বন নিঃসরণ কমানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। এটিই বিশ্বের প্রথম পূর্ণাঙ্গ জলবায়ু চুক্তি। চুক্তিটি আইনে পরিণত হতে কমপক্ষে ৫৫টি দেশ আইনসভার (পার্লামেন্ট)  অনুমোদন লাগবে, যারা নিঃসরিত কার্বনের অর্ধেকেরও বেশির জন্য দায়ী। শনিবার চীনের ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেস সপ্তাহব্যাপী আলোচনা শেষে এই চুক্তির অনুমোদন দেয়। একইদিন সকালে হোয়াইট হাউজ থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চুক্তি অনুমোদনের কথাও জানানো হয়।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ইন্ডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও চীনের প্রেসিডেন্ট জি জিংপিং জাতিসংঘ মহাসচিব বরাবর এ বিষয়ক দলিলপত্র দাখিল করেন।

উল্লেখ্য চীন ও যুক্তরাষ্ট্র সেই দুই দেশ, যারা পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে যৌথভাবে ৪০ শতাংশ কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণ করে থাকে। এর আগে যে ২৩টি দেশ জলবায়ু চুক্তি অনুমোদন করেছিল তারা মোট কার্বন নিঃসরণের মাত্র ১ শতাংশের জন্য দায়ী। কার্বন নিঃসরণের জন্য দায়ী বড় দুই দেশের অনুমোদন প্যারিস জলবায়ু চুক্তির বাস্তবতায় পরিণত হওয়ার দিকে অনেকটাই এগিয়ে গেল। তাদের এই অনুমোদন জি২০ ভুক্ত অন্য দেশগুলোর এই চুক্তি অনুমোদনের বিষয়ে চাপ সৃষ্টি হবে।

জি২০ সম্মেলনে যোগ দিতে চীনের হাংঝুতে অবস্থানরত মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেছেন, ইতিহাসে আজকের দিনটি স্মরণীয় থাকবে।  ওবামা বলেন, ‘এই যুদ্ধে কোন দেশ একা কাজ করে কিছুই করতে পারবে না, যত শক্তিশালী পদক্ষেপই নিক না কেন।’ তিনি আরও বলেন, প্যারিস চুক্তিকে ঐতিহাসিক ঘটনা হিসেবে স্মরণ করা হবে, কেননা এর মাধ্যমে বিশ্ববাসী পৃথিবীকে বাঁচানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।

 এদিকে চীনের প্রেসিডেন্ট জি জিংপিং একে একটি মাইলফলক হিসেবে মত প্রকাশ করে বলেন, ‘বৈশ্বিক সরকার পদ্ধতির উন্মেষ হতে যাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনে আমাদের পদক্ষেপ ভবিষ্যৎ মানুষদের ও মানবতার কল্যাণের জন্যই নেওয়া হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সহযোগিতা এক সময় অভাবনীয় ছিলো। কিন্তু এখন এই সহযোগিতাই এই দুই রাষ্ট্রের সম্পর্কের মধ্যে উজ্জ্বলতম দিক হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।’

উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে নানা প্রকার টানাপড়েন রয়েছে। দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের সেনা কর্মকাণ্ড থেকে শুরু করে সাইবার হ্যাকিং ও যুক্তরাষ্ট্রের মিসাইল বিরোধী সিস্টেম নিয়েও নানা ইস্যু রয়েছে। তা সত্ত্বেও জলবায়ু প্রশ্নে পরস্পরের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র।

/ইউআর/বিএ/