জাতিসংঘের ৭১তম অধিবেশনে প্রাধান্য পাবে সিরীয় সংকট

আগামী সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক শহরে শুরু হতে যাচ্ছে জাতিসংঘের ৭১তম সাধারণ অধিবেশন। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ওই আলোচনায় প্রাধান্য পাবে সিরীয় সংকট।

শুরু হতে যাচ্ছে জাতিসংঘের ৭১তম সাধারণ অধিবেশন

বিশ্বের অধিকাংশ নেতাই ৭১তম অধিবেশনে যোগ দিচ্ছেন। ৫ স্থায়ী সদস্যসহ ১৯৩টি সদস্যরাষ্ট্রের অন্তত ১৩৫ জন সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান এবং বেশ কয়েকজন মন্ত্রী অধিবেশনে অংশ নিচ্ছেন। এবারের সাধারণ অধিবেশনটি মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এবং জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি-মুনের জন্য শেষ অধিবেশন। বান কি-মুনের মহাসচিব পদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে চলতি বছরের শেষ নাগাদ আর ওবামার প্রেসিডেন্ট পদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে সামনের জানুয়ারিতে।

বুধবার বান কি-মুন বলেন, ‘যখন বিবিধ দুঃখজনক সংঘর্ষ আমাদের চারিদিকে, তখন আমরা দেখতে পাই, সিরিয়ার যুদ্ধের মতো এতো বেশি মৃত্যু, ধ্বংসযজ্ঞ এবং বিশাল মাত্রার অস্থিরতা অন্য কোথাও নেই।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্বের শক্তিশালী দেশগুলোকে এখন তাদের প্রভাব কাজে লাগিয়ে একটি রাজনৈতিক সমাধানের উপায় খুঁজে বের করতে হবে।’

রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্র্বসহ ইন্টারন্যাশনাল সিরিয়া সাপোর্ট গ্রুপ (আইএসএসজি)-এর দেশগুলো মঙ্গলবারের সাধারণ অধিবেশনের পাশাপাশি বুধবার নিরাপত্তা পরিষদের সঙ্গেও উচ্চ-পর্যায়ের বৈঠকে বসবে।

রাশিয়া চাইছিল যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে হওয়া অস্ত্রবিরতি চুক্তি যেন নিরাপত্তা পরিষদ সমর্থন করে। তবে শুক্রবার রুশ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মার্কিন পক্ষ ওই যুক্তির শর্তাবলী পাঁচ স্থায়ী সদস্যসহ ১৫ সদসের ওই পরিষদের সামনে প্রকাশ করতে চায় না।

এদিকে, সংশয়ের মধ্য দিয়েই কাটছে অস্ত্রবিরতির সময়টা, তার মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও তার পূর্ণ কার্যকর হওয়াটা সম্ভব হয়নি। জাতিসংঘ যুদ্ধরত গ্রুপগুলোকে অস্ত্রবিরতি কার্যকর করে দুর্গত এলাকায় ত্রাণ সহায়তা পৌঁছাতে সহায়তা করার আহ্বান জানিয়েছে। 

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ

রুশ-মার্কিনের মধ্যস্থতায় অস্ত্রবিরতির মেয়াদ আরও ৪৮ ঘন্টা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। বুধবার মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র মার্ক টোনার জানান, ‘সহিংসতার কথা শোনা গেলেও অস্ত্রচুক্তির ফলে ওই সহিংসতা উল্লেখযোগ্য হারে কমে এসেছে। আলোচনার মধ্যদিয়ে আরও ৪৮ ঘন্টা অস্ত্রবিরতি কার্যকরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’ টোনার বলেন, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি ও রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের মধ্যে ফোনে আলোচনার পর তারা অস্ত্রবিরতি বাড়ানোর বিষয়ে একমত হন।

মার্কিন ও রুশ বাহিনী মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) এবং জাবাথ ফাতেহ আল-শাম-এর ওপর হামলা চালানোর জন্য অস্ত্রবিরতি চুক্তি কার্যকর করতে চাইছে। তবে যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার পর্যবেক্ষক সংস্থা সিরিয়ার অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, এবারের অস্ত্রবিরিরতি চুক্তি কার্যকরের পর কিছু জায়গায় সংঘর্ষ হলেও প্রথম ৪৮ ঘন্টায় নিহতের কোনও খবর পাওয়া যায়নি। টোনার বলেন, ‘এখনও পর্যন্ত অনেক দুর্গত এলাকায় মানবিক সাহায্য পাঠানো সম্ভব হয়নি। আমরা রুশ কর্তৃপক্ষকে আসাদের ওপর চাপ দিতে বলেছি, যেন অবরুদ্ধ স্থানে ত্রাণ সহায়তা পৌঁছানো সম্ভব হয়।’

উল্লেখ্য, সিরিয়ায় ২০১১ সালের মার্চ থেকে শুরু হওয়া গৃহযুদ্ধে প্রায় চার লাখ মানুষ নিহত হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। ঘরহারা হয়েছেন ১০ লাখেরও বেশি মানুষ। সিরিয়ার চলমান সংকট নিয়ে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান বিপরীতমুখী। বর্তমান প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। এ জন্য তারা আসাদ সরকারের বিদ্রোহ ঘোষণাকারী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে সামরিক সহযোগিতা করছে। অভিযোগ রয়েছে, তারা মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বিরুদ্ধে বিমান হামলার নামে সরকারি বাহিনীর ওপর হামলা চালাচ্ছে। আর রাশিয়া বাশার আল আসাদকে ক্ষমতায় দেখতে চায়। তারা আসাদ সরকারের সমর্থনে আইএস ও বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে বিমান হামলা চালাচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধকে মার্কিন-রুশ ‘ছায়াযুদ্ধ’ বলেও মনে করছেন অনেকে।

সূত্র: আল-জাজিরা, রয়টার্স।

/এসএ/বিএ/