যুক্তরাষ্ট্রে প্রশিক্ষণ নিতে গিয়ে ‘নিখোঁজ’ ৪৪ আফগান সেনা

nonameউন্নত সামরিক প্রশিক্ষণ নিতে যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়েছিলেন বেশকিছু আফগান সেনা কর্মকর্তা। এই সেনাদের মধ্যে অন্তত ৪৪ জন ‘নিখোঁজ’। তাদের কোনও খোঁজ জানা নেই কারও। গত দুই বছরেরও কম সময়ের মধ্যে এ ঘটনা ঘটে। প্রশিক্ষণার্থী আফগান সেনাদের এভাবে ‘হারিয়ে’ যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পেন্টাগনের মুখপাত্র অ্যাডাম স্ট্যাম্প। এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতর পেন্টাগন বলছে, সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের উদ্দেশ্যেই তারা এ কাজ করেছে। অবৈধ কর্মী হিসেবে তারা হয়তো সেখানে কাজও যুগিয়ে নিয়েছে।

২০০৭ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছে দুই হাজার ২০০ আফগান সেনা। কিন্তু সেনাদের এ ধরনের আচরণে সামরিক প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিব্রতকর অবস্থার মুখে পড়ছে বারাক ওবামা প্রশাসনও। কারণ ১৫ বছরের যুদ্ধে আফগান সেনাদের প্রশিক্ষণের পেছনে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

এদিকে আসন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগ মুহূর্তে এ ঘটনা ফাঁস হওয়ায় বিপাকে পড়তে পারে ডেমোক্রেট শিবির। এ থেকে সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করতে পারেন রিপাবলিকান পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। এরইমধ্যে অভিবাসী ও মুসলিমবিরোধী বক্তব্য দিয়ে ব্যাপক সমালোচিত হয়েছেন তিনি। এমনকি মুসলিমদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ বন্ধেরও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রে প্রশিক্ষণ নিতে গিয়ে বিভিন্ন দেশের সেনাদের এভাবে ‘নিখোঁজ’ হওয়ার বিষয়টি নতুন কিছু নয়। তবে আফগানিস্তানের ক্ষেত্রে বিষয়টা ভিন্ন। কারণ সংখ্যার বিচারে অন্যান্য দেশের তুলনায় এটা অনেক বেশি।

পেন্টাগনের একজন কর্মকর্তা বলেন, আফগান সেনাদের এভাবে নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি উদ্বেগজনক।

বিষয়টি নিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের সঙ্গে কথা বলেন পেন্টাগনের মুখপাত্র অ্যাডাম স্টাম্প। তিনি জানান, শুধু গত সেপ্টেম্বরেই বিনা অনুমতিতে সেনাশিবির ছেড়েছে আট আফগান সেনা। ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৪।

যুক্তরাষ্ট্রে প্রশিক্ষণরত আফগান সেনাদের সবসময় সামরিক ঘাঁটিতে থাকা বাধ্যতামূলক নয়। তবে টানা ২৪ ঘণ্টা অনুপস্থিত থাকলে তা ‘ছুটি ছাড়া অনুপস্থিত’ বিবেচনা করা হয়। তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগকে জানানো হয়।

নিখোঁজ ৪৪ জন আফগান সেনার মধ্যে কতজনের অবস্থান এ পর্যন্ত চিহ্নিত করা গেছে সে তথ্য জানা যায়নি। তবে তাদের এমন পলায়নপর প্রবণতার বিষয়ে কথা বলেছেন ওয়াশিংটনভিত্তিক উড্রো উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক বিশ্লেষক মাইকেল কুগম্যান। তিনি মনে করেন, আফগান সেনাদের তাদের নিজ দেশে খুব বাজে পরিস্থিতির মধ্যে থাকতে হয়। সময়মতো বেতন-ভাতা হয় না। ফলে উন্নত জীবনযাত্রার হাতছানি উপেক্ষা করাটা তাদের জন্য বেশ কষ্টসাধ্য।

২০০১ সালে আফগানিস্তানে হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। তখন থেকে দেশটিতে মার্কিন সেনারা অবস্থান করছে। নিজ দেশের সেনাদের সুরক্ষায় এবং আফগানিস্তানে স্থিতিশীলতা ফেরাতে দেশটির সেনাসদস্যদের এ প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।

/এমপি/