রয়টার্স-এর অনুসন্ধানী প্রতিবেদন

তালেবান ‘আমির’ হাইবাতুল্লাহ ইমামতি করতেন পাকিস্তানের মসজিদে

চলতি বছরের মে মাসে অজ্ঞাতবাসে চলে যাওয়ার আগমুহূর্ত পর্যন্ত প্রায় ১৫ বছর ধরে আফগানিস্তানের তালেবান প্রধান হাইবাতুল্লাহ আখন্দজাদা পাকিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় বালুচিস্তানের একটি মসজিদে নামাজ পড়াতেন এবং ধর্মীয় শিক্ষা দিতেন। ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স-এর এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে ওই মসজিদে তার সহযোগী এবং শিক্ষার্থীদের বরাত দিয়ে এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়।

তালেবান ‘আমির’ হাইবাতুল্লাহ আখন্দজাদা

বালুচিস্তানের রাজধানী কুয়েটার নিকটবর্তী ছোট্ট শহর কুচলাকের আল-হাজ মসজিদেই কেটেছে আখন্দজাদার ১৫ বছর। প্রকাশ্যেই তিনি তালেবানের পক্ষে প্রচারণা চালাতেন। পাকিস্তান সরকার জঙ্গি-বিরোধী অভিযান চালালেও কুয়েটা ও আশেপাশের অঞ্চলে তালেবানি মতানুসারে ধর্মচর্চা এখনও অব্যাহত রয়েছে বলে জানা গেছে।

তবে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ এশিয়া ব্যুরোর এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, হাইবাতুল্লাহ আখন্দজাদার অতীত বা বর্তমান ঠিকানা সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে কিছু বলার মতো তথ্য তাদের কাছে নেই।

মার্কিন ড্রোন হামলায় মোল্লা আখতার মনসুর নিহত হওয়ার পর আখন্দজাদাকে তালেবানের ‘আমির’ নিযুক্ত করা হয়। এর আগে পাঁচ বছর আগে পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদের নিকটবর্তী অ্যাবোটাবাদে মার্কিন কমান্ডো অভিযানে তৎকালীন তালেবান প্রধান ওসামা বিন-লাদেনকে হত্যা করা হয়।

বর্তমানে আল-হাজ মসজিদটি পরিচালনার দায়িত্বে থাকা হাফিজ আবদুল মজিদ জানান, ‘আমির হওয়ার পর তিনি তার পুরো পরিবার নিয়ে চলে যান।’ হাফিজ আরও জানান, তিনি নিজেও আখন্দজাদার ছাত্র ছিলেন।

এখানেই শিক্ষার্থীদের পড়াতেন আখন্দজাদা

তবে তিনি মনে করেন, ‘আপনি একইসঙ্গে তালেবান সরকার চালিয়ে ধর্মীয় শিক্ষা দিতে পারেন না। আর এমন অবভস্থায় তিনি এখানে থাকলে তা এই মসজিদ ও তার শিক্ষার্থীদের জন্য হতো বিপজ্জনক।’

মজিদ আরও জানান, আখন্দজাদা সকাল ৮টা থেকে দুপুর পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের পড়াতেন। আর এজন্য তিনি প্রতিমাসে ১০ হাজার পাকিস্তানি রুপি করে বেতন পেতেন।

তিনি বলেন, ‘তিনি চলে যাওয়ায় আমরা ব্যথিত, কারণ তিনি খুব ভালো শিক্ষক ছিলেন।’

মজিদ ছাড়াও মসজিদের আরো অনেকেই আখন্দজাদার পরিচয় নিশ্চিত করেছেন। তবে তারা নিজেদের নাম প্রকাশ করতে চাননি বলে রয়টার্স জানিয়েছে।

মজিদ আরও বলেন, “তিনি ছিলেন একজন বিশ্বাসী মানুষ। একজন ‘শাইখ-উল-হাদিস’। আর যখন তিনি আমির হলেন, তখন এখান থেকে চলে যান। আমরা এটুকুই জানি।”  

জানা গেছে, ২০০১ সালে আফগানিস্তানে চালানো মার্কিন আগ্রাসনে তিনি পরিবারের কয়েকজন সদস্যকে হারিয়েছেন।

আখন্দজাদা যে রুমে থাকতেন, সেখানে এখন শিক্ষার্থীদের পড়ানো হচ্ছে। তবে রুমের দরজায় এখনও তার নামটি লেখা আছে।

তার সহকর্মী এবং শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, আখন্দজাদার বয়স আনুমানিক ৫৫/৫৬, আর জন্মস্থান আফগানিস্তানের কান্দাহারে। তালেবান প্রধান হিসেবে তার নাম ঘোষণা দুইদিন আগে তিনি কুচলাক থেকে চলে যান।

আল-হাজ মসজিদ

তালেবানপন্থী কুয়েটার কট্টর রাজনৈতিক দল জমিয়ত উলেমা-ই-ইসলাম-এর মুখপাত্র সৈয়দ আবদুল সাত্তার শাহ চিশতি রয়টার্স-কে জানিয়েছেন, ‘আখন্দজাদা দীর্ঘদিন ধরে কুচলাকে ছিলেন। আমি তার সঙ্গে বহুবার দেখা করেছি। তিনি মাঝে মাঝেই কুয়েটায় আসতেন।’ কুয়েটায় তালেবানের শুরা কমিটিও সক্রিয় রয়েছে বলে তিনি নিশ্চিত করেছেন।

পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা জঙ্গি নির্মূলে সম্ভাব্য সবকিছুই করছেন। তবে কুচলাকে আখন্দজাদার বসবাসের বিষয়ে লিখিত প্রশ্নের  কোনও জবাব দেয়নি দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। পাকিস্তানের সেনা মুখপাত্রও কোনও মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।

বালুচিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সরফরাজ বুগতি রয়টার্সের কাছে বালুচিস্তানে তালেবানের সাংগঠনিক উপস্থিতির বিষয়টি নাকচ করেছেন।

তিনি আরও বলেন, ‘সীমান্ত পার হয়ে আসা জঙ্গিদের দমন করতে সীমান্তে নজরদারি বাড়ানোসহ বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে পাকিস্তান।’

তবে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, ‘প্রায় ৪০ লাখ আফগান শরণার্থী রয়েছেন এ অঞ্চলে। যাদের মধ্যে অনেকে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এখানে রয়েছেন। তাদের মধ্যে কেউ আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট বা তালেবানের নেতা হবেন কিনা, তা আগে থেকে ধারণা করা সম্ভব নয়।’

সূত্র: রয়টার্স।

/এসএ/