প্রতিবেদনে কিশোরীদের পাচার, যৌন নিপীড়ন এবং ঘটনার শিকার মেয়েদের ভাগ্যবিড়ম্বনার বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়। এতে যুদ্ধ, দারিদ্র্য এবং মানবিক সংকটকে মেয়েদের বাল্যবিবাহের প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। অথচ এ বাল্যবিবাহ কিশোরীদের জীবনের প্রতিটি ধাপে সংকট তৈরি করতে পারে।
প্রকাশিত প্রতিবেদনে ১৪৪টি দেশের একটি সূচক তৈরি করা হয়েছে। এতে সবার নিচে রয়েছে পশ্চিম আফ্রিকার দেশ নাইজার-এর নাম। এরপর যথাক্রমে শাদ, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক, মালি, সোমালিয়া ও সিয়েরা লিওন-এর নাম। তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ১১১। পাকিস্তান ও ভারতের অবস্থান যথাক্রমে ৮৮ ও ৯০। যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের অবস্থান ৩২ ও ১৫।
সূচকে সবার ওপরে রয়েছে সুইডেন। শীর্ষ ১০-এর মধ্যে থাকা বাকি দেশগুলো যথাক্রমে ফিনল্যান্ড, নরওয়ে, নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, স্লোভেনিয়া, পর্তুগাল, সুইজারল্যান্ড ও ইতালি।
বিশ্বজুড়ে মেয়েদের স্কুল শিক্ষা, বাল্যবিবাহ, কিশোরীদের গর্ভধারণ, মাতৃত্বজনিত মৃত্যু এবং পার্লামেন্টের নারী সদস্যদের সংখ্যার ওপর ভিত্তি করে এই সূচক করা হয়েছে।
যুদ্ধ আক্রান্ত মেয়েদের বাল্যবিবাহের আশঙ্কা বেশি থাকে। দারিদ্র্য এবং যৌন সন্ত্রাস মোকাবিলায় অনেক শরণার্থী পরিবার তাদের কন্যাদের অপরিণত বয়সে বিয়ে দিয়ে দেয়।
প্রতিবেদনে নাইজেরিয়ার চিবুক এলাকা থেকে বালিকাদের অপহরণ এবং ইরাকে ইয়াজিদি সম্প্রদায়ের মেয়েদের ওপর যৌন দাসত্ব চাপিয়ে দেওয়ার মতো বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, এসব মেয়েরা শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। তারা নিজেদের জীবনের ব্যাপারে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারে না।
ভূমধ্যসাগর হয়ে প্রতিনিয়ত পাচারের শিকার হচ্ছে মেয়েরা। বাধ্য হয়ে বাংলাদেশের পতিতা পল্লীতে বাস করছে অনেক ভাগ্যবিড়ম্বিত কিশোরী। নিষ্ঠুর বাস্তবতার শিকার হয় এসব কিশোরীরা।
সেভ দ্য চিলড্রেনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হেলি থ্রোনিং স্কিমিডট। তার ভাষায়, ‘বাল্যবিবাহের মাধ্যমে সংকটের চক্র শুরু হয়। এতে করে অধিকাংশ মেয়েরা শিক্ষা, বিকাশ এবং মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। পারিবারিক সহিংসতা, নির্যাতন ও ধর্ষণের শিকার হয়। অল্প বয়সে গর্ভধারণ করে এবং এইচআইভিসহ নানা যৌনবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়।
প্রতিবেদনে বাল্যবিবাহের উদাহরণ হিসেবে লেবাননে ১৩ বছরের এক সিরীয় শরণার্থী কিশোরীর উল্লেখ করা হয়। সাহার ছদ্মনামের ওই কিশোরীকে বিয়ে দেওয়া হয় ২০ বছরের এক পুরুষের সঙ্গে। বর্তমানে সাহারের বয়স ১৪। এ বয়সেই সে এখন সন্তানসম্ভবা।
জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ-এর আশঙ্কা, ২০৩০ সাল নাগাদ বাল্যবিবাহের শিকার কিশোরীদের এ সংখ্যা আরও বাড়বে। বর্তমানে যেখানে বিশ্বজুড়ে এ সংখ্যা ৭০ কোটি সেখানে ২০৩০ সাল নাগাদ এটি ৯৫ কোটিতে পৌঁছাবে। সূত্র: বিবিসি, সেভ দ্য চিলড্রেন-এর ওয়েবসাইট।
/এমপি/