কাশ্মিরের সরকারি ভবন জঙ্গিমুক্ত করতে ‘ডোর টু ডোর’ অপারেশন

দ্বিতীয় দিনের মতো জঙ্গিদের দখলে থাকা কাশ্মিরের এক সরকারি ভবনকে মুক্ত করতে ‘ডোর টু ডোর’ অপারেশনের প্রস্তুতি নিচ্ছে ভারতের নিরাপত্তা বাহিনী। ভারতীয় সংবদামাধ্যম দ্য হিন্দু খবরটি নিশ্চিত করেছে। তারা জানিয়েছে, সেখানে এখনও নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে জঙ্গিদের বন্দুকযুদ্ধ চলছে। এদিকে, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের খবরে এ ঘটনায় এ পর্যন্ত দুই নিরাপত্তারক্ষী এবং একজন পুলিশ সদস্যের আহত হওয়ার কথা জানানো হয়েছে।

কাশ্মির প্রশ্নে ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা যখন চূড়ান্ত তখন ধারাবাহিক জঙ্গি হামলার এই পর্যায়ে দ্বিতীয়বারের মতো পাম্পোরের সরকারি ভবন আক্রান্ত হলো। 

উল্লেখ্য, ফেব্রুয়ারিতে এক সরকারি ভবন নিজেদের দখলে নিয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর ৫ সদস্য এবং এক বেসামরিক মানুষকে হত্যা করেছিল জঙ্গিরা। গতকাল সোমবার সেই সরকারি ভবন আবারও দখলে নেয় জঙ্গিরা। নজর এড়াতে প্রথমে বহুতল ভবনটিতে আগুন ধরিয়ে দেয় তারা। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানায়, সোমবার সকাল সাড়ে ৬টা নাগাদ ভূস্বর্গের পাম্পোরের সেই সরকারি প্রতিষ্ঠান উদ্যোক্তা উন্নয়ন সংস্থায় হামলা চালায় বন্দুকধারীরা। প্রতিষ্ঠানটিতে ঢুকে পড়ে ৩ অস্ত্রধারী। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার খবরে বলা হয়েছে, ভবনের ভেতরে অন্তত ২ জঙ্গি লুকিয়ে আছে বলে নিজস্ব সূত্রে জানতে পেরেছেন তারা। আর ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে বলা হয়, পাম্পোরে উদ্যোক্তা  উন্নয়ন সংস্থার সরকারি ভবনটিতে গোলাগুলির শব্দ শোনার পর ভবনটিকে ঘিরে ফেলে সামরিক ও আধাসামরিক বাহিনীর সদস্যরা।

তবে উর্ধ্বতন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে আজ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের খবরে বলা হয়েছে, ‘জঙ্গিবিরোধী অভিযান বন্ধ রাখার পর তা আবারও শুরু করা হয়েছে। অন্ধকারে জঙ্গিরা যেন পালিয়ে যেতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে সার্চ লাইট ব্যবহার করা হয়েছে।’

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বলছে, ‘ডোর টু ডোর সার্চ অপারেশন’ চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে নিরাপত্তা বাহিনী। সতর্কতার সঙ্গে এই অপারেশন চালানো হচ্ছে যেন ভবনের কোনও কক্ষে কেউ আটকা পড়ে থাকলে তার কোনও ক্ষতি না হয়। একজন উর্ধ্বতন নিরাপত্তা কর্মকর্তার বরাত দিয়ে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বলছে, ‘৬০টি কক্ষে অভিযান চালাতে খানিকটা সময় লাগারই কথা। বোমা কিংবা বিধ্বংসী কোনও বিস্ফোরক থাকার আশঙ্কা রয়েছে ওই ভবনের কক্ষগুলোতে। আমরা খুবই সতর্কতার সঙ্গে অভিযান পরিচালনা করেতে চাইছি যেন আমাদের দিকে কোনও ধরনের হতাহতের ঘটনা না ঘটে। সুতরাং, অভিযানে নিয়োজিত বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে কাজ করছে।’ 

এরআগে দ্য হিন্দুর খবরে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার সকালেও সেখানে থেমে থেমে গুলির শব্দ শোনা গেছে। নিরাপত্তা বাহিনী দ্বিতীয় দিনের মতো তাদের অভিযান অব্যাহত রেখেছে। তবে সেখানে ঠিক কতোজন জঙ্গি রয়েছেন, তা নিশ্চিত করে বলতে পারেনি কোনও সংবাদমাধ্যম।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানাচ্ছে, জঙ্গিদের হটিয়ে ভবনটি দখলমুক্ত করতে সোমবার যৌথ অভিযান শুরু করে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। এতে অংশ নেয় ভারতীয় সেনাবাহিনী, রাজ্য পুলিশের স্পেশাল অপারেশনস গ্রুপ এবং সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স (সিআরপিএফ)। মঙ্গলবারের অভিযানে এ্ররইমধ্যে স্বয়ংক্রিয় ভারি যন্ত্রপাতি এবং রকেট ব্যবহার করা হয়েছে। সোমবারের এ সংক্রান্ত এক খবরে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানায়, ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের রাজধানী শ্রীনগরের ১০ কিলোমিটার বাইরে পাম্পের শহরের এই ঘটনায় একজন ভারতীয় সেনা আহত হয়েছেন। তবে মঙ্গলবার এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত দুই নিরাপত্তারক্ষী এবং একজন পুলিশ সদস্যের আহত হওয়ার কথা জানিয়েছে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।

উদ্যোক্তা উন্নয়ন সংস্থা নামের এই প্রতিষ্ঠানটিতেই গত ফেব্রুয়ারি মাসে হামলা চালিয়েছিল ৩ অস্ত্রধারী। ৪৮ ঘণ্টা লড়াইয়ে সেই তিন জঙ্গিকে হত্যার মধ্য দিয়ে একে জঙ্গিমুক্ত করা হয়েছিল। ওই ঘটনায ৫ জন নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট, একজন বেসামরিক নাগরিকও নিহত হয়েছিলেন। সেনাসূত্রের বরাত দিয়ে দ্য হিন্দুর খবরে বলা হয়েছে, সোমবার সন্ধ্যা থেকেই ভবনের একপাশ নিজেদের করে নিতে সমর্থ হয়েছে জঙ্গিরা।

উল্লেখ্য, (২৮ সেপ্টেম্বর) রাতে নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে ভারতের সেনারা সন্ত্রাসী ঘাঁটিগুলোতে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক চালানোর দাবি করে। ওই অভিযানে ৯ পাকিস্তানি সেনা ও ৩৫ থেকে ৪০ জঙ্গি নিহত হয়েছে বলে দাবি করা হয়। ঘটনার পর থেকে দুই সেনা সদস্য নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করে পাকিস্তান দাবি করে আসছে এটি সার্জিক্যাল স্ট্রাইক ছিল না, সীমান্ত সংঘর্ষ বা আন্তঃসীমান্ত গোলাগুলির ঘটনা ছিল। ঘটনাকে ভারতের দিক থেকে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ প্রমাণ করে তাদের সামরিক শক্তি জানান দেওয়ার চেষ্টা করা হলেও পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে ঘটনার পরপরই বলা হয়, ‘সন্দেহমূলক জঙ্গি ঘাঁটিগুলো লক্ষ্য করে সুনির্দিষ্ট হামলা চালানোর দাবিটি একটি ভ্রম। মিথ্যে প্রভাব তৈরির জন্য ভারতীয়রা ইচ্ছে করে এমনটা করছে। আন্তঃ সীমান্ত গোলাগুলিকে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে হামলা উল্লেখ করে ধোঁকা দিচ্ছে ভারত।’

এই প্রেক্ষাপটে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ এখন যতোটা না জঙ্গিবিরোধী অভিযানের সাফল্য-ব্যর্থতার প্রশ্ন, তার থেকেও বেশি করে ভারত ও পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ক্ষমতা-আত্মমর্যাদা আর দম্ভের প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে রাজনীতি বিশ্লেষকরা আগেই আশঙ্কা জানিয়েছিলেন, ভারত কথিত এই সার্জিক্যাল স্ট্রাইক পাকিস্তানের জঙ্গিদের আরও বেশি প্রতিশোধপরায়ণ করে তুলবে। সেই আশঙ্কাকে সত্যি প্রমাণল করে গত কয়েকদিনে সেনাঘাঁটিসহ বিভিন্ন স্থানে জঙ্গি হামলার শিকার হয় ভারত।

সূত্র: দ্য হিন্দু, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, এএফপি, রয়টার্স, আলজাজিরা।

/বিএ/

আপ - /এসএ/