আইএসের কবল থেকে মুক্ত মসুলের ২০০ বর্গকিলোমিটার

সরকারি বাহিনী ও কুর্দি পেশমেরগা যোদ্ধাদের যৌথ অভিযানে ইরাকের মসুলে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে আইএস জঙ্গিরা। প্রথম দিনের অভিযানেই ২০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা আইএসমুক্ত করার দাবি করেছেন কুর্দিস্থানের আঞ্চলিক প্রেসিডেন্ট। উল্লেখযোগ্য প্রতিরোধ ছাড়াই মসুলের বিভিন্ন এলাকা থেকে পিছু হটেছে জঙ্গিরা। সোমবার ভোর থেকে শুরু হওয়া এই অভিযানে যোগ দিয়েছে মার্কিন যুদ্ধবিমান। পেন্টাগন বলছে, প্রথম দিনের লক্ষ্য নির্ধারিত সময়ের আগেই অর্জিত হয়েছে। এদিকে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান বলেছেন, মসুলকে আইএস-মুক্ত করার এ লড়াইয়ে তার দেশও অংশ নেবে।
পেন্টাগনের মুখপাত্র পিটার কুক বলেছেন, মসুলের লড়াই শেষ হতে বেশ সময় লাগতে পারে। কারণ আইএস রুখে দাঁড়িয়ে লড়াই করবে কিনা তা এখনও বোঝা যাচ্ছে না।

মসুল অভিযানে ইরাকি সেনাবাহিনীর সঙ্গে কুর্দি পেশমেরগা যোদ্ধাদের যৌথ অংশগ্রহণকে স্বাগত জানিয়েছেন ইরাকি কুর্দিস্তানের আঞ্চলিক প্রেসিডেন্ট মাসুদ বার্জানি।

ইরবিলের কাছে খাজির শহরে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, এরই মধ্যে আইএসের হাত থেকে অনেক এলাকা পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। এখনও পর্যন্ত ২০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা স্বাধীন হয়েছে। এটি মসুল অভিযানের প্রথম ধাপ। এখানে প্রথমবারের মত সন্ত্রাসী সংগঠন, দায়েশের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইরাকি সেনাবাহিনী এবং পেশমের্গা যোদ্ধাদের রক্ত মিশ্রিত হচ্ছে। আমি আশা করি উভয় পক্ষের মধ্যে ভবিষ্যৎ সম্পর্কের এটি একটি ভালো সূচনা।

ইরাকের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মসুল আইএসের দখলে যায় ২০১৪ সালে। শহরটির জনসংখ্যা ২৫ লাখ।

আইএস প্রধান, আবু বকর আল বাগদাদি তার তথাকথিত খিলাফত প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়ার জন্য মসুলকেই বেছে নেন। এ কারণে মসুল পুনরুদ্ধারের একটি প্রতীকী মূল্যও রয়েছে বলে মনে করছে পেন্টাগন।

কয়েক মাসের দীর্ঘ পরিকল্পনার পর ইরাকি, কুর্দি এবং সুন্নি বিভিন্ন গোত্রের প্রায় ৩০ হাজার যোদ্ধা ইরাকে আইএসের সর্বশেষ শক্ত ঘাঁটি মসুলে অভিযান শুরু করে। ধারণা করা হয় শহরটিতে এখনো চার হাজার থেকে আট হাজার আইএস যোদ্ধা অবশিষ্ট রয়েছে।

জাতিসংঘ বলছে, তারা মসুলে যুদ্ধের কারণে ঘরহারা মানুষদের জন্য আরও আশ্রয়শিবির তৈরি করছে। এখনও পর্যন্ত তাদের কাছে প্রায় চার লাখ মানুষকে আশ্রয় দেওয়ার মত তাঁবু ও খাদ্য রয়েছে।

১৭ অক্টোবর ২০১৬ সোমবার ইরাকের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে আনুষ্ঠানিকভাবে আইএসের হাত থেকে মসুলকে মুক্ত করার এ অভিযান শুরুর ঘোষণা দেন ইরাকের প্রধানমন্ত্রী হায়দার আল আবাদি। টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ইরাকের প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বিজয়ের মুহূর্ত অত্যাসন্ন। মসুল মুক্ত করার অভিযান শুরু হয়েছে। আজ আমি দায়েশের (আইএস) সহিংসতা ও সন্ত্রাসবাদ থেকে আপনাদের মুক্ত করার অভিযান শুরু করার কথা ঘোষণা করছি। অভিযানে নেতৃত্ব দেবে সাহসী ইরাকি সেনাবাহিনী ও জাতীয় পুলিশ। ইনশাআল্লাহ দায়েশের হাত থেকে আপনাদের মুক্তি উদযাপন করতে আমরা শিগগিরই মসুলে মিলিত হবো। সব ধর্মের মানুষ মিলে দায়েশকে পরাজিত করে আমরা প্রিয় শহর মসুলের পুনর্গঠন করবো।”
ইরাকের উত্তরাঞ্চলীয় নেইনাভা প্রদেশের রাজধানী মসুল পুনর্দখলের ক্ষেত্র সৃষ্টির জন্য গত আগস্টে নগরী থেকে ৬০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত কৌশলগত কাইয়ারা শহর দখল করে সরকারি বাহিনী। ইরাকে সেনা কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হায়দার ফাজলি বলেছেন, মসুল পুনরুদ্ধারের অভিযানে অন্তত ২৫ হাজার সেনা অংশ নিচ্ছে।

ইরাকের কর্মকর্তারা বলছেন, যদি মসুল থেকে আইএসকে পরাজিত করা সম্ভব হয় তাহলে তা হবে আইএসের জন্য একটি বড় ধাক্কা। সূত্র: বিবিসি, আল জাজিরা।

/এমপি/বিএ/