পুনরুদ্ধারের লড়াই: ‘আইএস-এর বাধা’ ডিঙিয়ে মসুল ছেড়েছেন ৯শ মানুষ

এলাকা ছাড়ছে মসুলবাসীমধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন আইএস-এর হাত থেকে ইরাকের মসুল শহরটি দখলমুক্ত করতে প্রথম পর্যায়ের অভিযান শেষ করার পর বড় ধরনের অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইরাকি বাহিনী। আর বড় ধরনের সেই লড়াইকে সামনে রেখে মসুল ছাড়ছেন সেখানকার বাসিন্দারা। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর-এর হিসেব অনুযায়ী, এরইমধ্যে ৯০০ মানুষ মসুল শহর ছেড়েছেন এবং সীমান্ত পার হয়ে তারা সিরিয়ায় প্রবেশ করেছেন। সোমবার থেকে মসুল পুনরুদ্ধারের লড়াই শুরুর পর কতজন মানুষ মসুল ছেড়েছেন তা নিয়েই এটাই প্রথম বড় পরিসংখ্যান। এদিকে ইরাকি বাহিনী মসুলের কাছাকাছি পৌঁছে গেলে আইএস সদস্যরা স্থানীয় বেসামরিকদের বর্ম হিসেবে ব্যবহার করার চেষ্টা চালাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের জুন মাসে জঙ্গিদের হাতে মসুল নগরীর পতন হয়। ইরাকের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই নগরী আইএসের হাত থেকে মুক্ত করার জন্য গত কয়েক মাস ধরে প্রস্তুতি চলছিল। সোমবার ভোরে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে আনুষ্ঠানিকভাবে মসুল পুনরুদ্ধার অভিযান শুরুর ঘোষণা দেন ইরাকের প্রধানমন্ত্রী হায়দার আল আবাদি। ইরাকি সশস্ত্র বাহিনীর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, সোমবারের অভিযান শুরুর পর প্রথম ২৪ ঘণ্টায় ২০টি গ্রাম পুনর্দখল করা হয়েছে।আর মঙ্গলবার কুর্দি বাহিনীর পক্ষ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়,মসুলের ৩০ কিলোমিটার পূর্ব পর্যন্ত যাওয়ার পর আপাতত আর অগ্রসর হচ্ছে না তারা। তবে পরবর্তী পর্যায়ের অভিযান শুরুর জন্য ইরাকি বাহিনী এগিয়ে যাচ্ছে।
২০টি গ্রাম দখলমুক্ত করার দাবি করেছে ইরাকি বাহিনী
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, ৫ হাজার আইএস যোদ্ধাসহ মসুলে ১৫ লাখ মানুষের বসবাস। ইউএনএইচসিআর-এর এক মুখপাত্রকে উদ্ধৃত করে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, ৯০০রও বেশি মানুষ মসুল ছেড়ে সিরিয়ায় প্রবেশ করেছে এবং একটি শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে।

ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্থানীয়রা ফোনে জানিয়েছেন- মসুলের সাধারণ মানুষ যখন শহর ছাড়ার চেষ্টা করছে তখন আইএস সদস্যরা তাদের বাধা দিচ্ছে। এলাকা ছাড়তে চাওয়া লোকজনকে তারা এমন সব ভবনে জড়ো হতে বলছে যেগুলো বিমান হামলার লক্ষ্যবস্তু। তবে ইউএনএইচসিআর-এর হিসেব বলছে, চাইলেও আইএস সব মানুষকে আটকে রাখতে পারছে না। অনেকেই পালিয়ে আসতে সক্ষম হচ্ছে। পালানোর জন্য আইএস সদস্যরাও একই রাস্তা ব্যবহার করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এদিকে ইরাকের মসুল শহরে সরকারি বাহিনীর তীব্র অভিযান থেকে নিজেকে রক্ষার জন্য জঙ্গি সংগঠন আইএস-এর সদস্যরা বেসামরিক নাগরিকদেরকে মানববর্ম হিসেবে ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। স্থানীয় লোকজনকে জোর করে ওই এলাকায় আটকে রাখা হয়েছে বলেও অভিযোগ করা হয়েছে।

মঙ্গলবার ওয়াশিংটনে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতর পেন্টাগনের মুখপাত্রের কাছে জানতে চাওয়া হয়, আইএস বেসামরিকদেরকে মানব বর্ম হিসেবে ব্যবহার করছে কিনা। জবাবে পেন্টাগনের মুখপাত্র জেফ ডেভিস বলেন, ‘এটা নিশ্চিত। তাদেরকে তাদের ইচ্ছের বিরুদ্ধে আটকে রাখা হচ্ছে। গত দিন আমরা জনসাধারণের এলাকা ছাড়ার ক্ষেত্রে কোন ধরনের পরিবর্তন দেখিনি।’

এদিকে মসুলের কাছাকাছি এলাকায় নতুন শরণার্থী কেন্দ্র চালু করতে কাজ শুরু করেছে জাতিসংঘ। ইরাকে নিয়োজিত জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা বিষয়ক কর্মকর্তা লিসে গ্র্যান্ডে বলেন, অভিযানের শুরুর দিনগুলোতে দুই লাখ মানুষকে আশ্রয় দেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ইরাকের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মসুল আইএসের দখলে যায় ২০১৪ সালে। আইএস প্রধান,আবু বকর আল বাগদাদি তার তথাকথিত খিলাফত প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়ার জন্য মসুলকেই বেছে নেন। এ কারণে মসুল পুনরুদ্ধারের একটি প্রতীকী মূল্যও রয়েছে বলে মনে করছে মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতর পেন্টাগন।

/এফইউ/