‘মসুলে ৪৮ ঘণ্টায় ২৮৪ জনকে হত্যা করেছে আইএস’

২০১৪ সাল থেকে আইএসের এমন সহিংসতা প্রত্যক্ষ করছেন মসুলের বাসিন্দারা।ইরাকের মসুলে দেশটির সরকারি বাহিনীর অভিযানে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে আইএস। নিজেদের বাঁচাতে তাই শেষ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে জঙ্গিরা। আইএস-এর বিভিন্ন স্থাপনা বা আস্তানার কাছাকাছি এলাকায় মসুলের অন্তত ৫৫০ পরিবারের বেসামরিক মানুষজনকে রাখা হয়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়ের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন সম্ভাব্য মানবঢাল হিসেবে তাদের ব্যবহার করা হচ্ছে। গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার-এ দুই দিনে আইএসের মানবঢাল হিসেবে ব্যবহৃতদের মধ্যে অন্তত ২৮৪ জনকে হত্যা করেছে জঙ্গিরা। এদের মধ্যে শিশুরাও রয়েছে। গুলি করে হত্যা করা নিহতদের গণকবর দিয়েছে আইএস। ইরাকের গোয়েন্দা সূত্রের বরাত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম সিএনএন এ খবর জানিয়েছে।

এদিকে, মসুলকে আইএসের থাবা থেকে মুক্ত করতে যুক্তরাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতায় কুর্দিদের নিয়ে ইরাকি বাহিনীর অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে তারা শহরটির কাছাকাছি অবস্থানে চলে গেছে। তাদের ঠেকাতে ক্রমাগত আত্মঘাতী বোমা হামলা ও চোরাগুপ্তা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে আইএস। তবে ইরাকি বাহিনীর দাবি, আইএস-এর সংগ্রহে থাকা অস্ত্রও সীমিত হয়ে পড়েছে। তাদের কাছে এখন স্নাইপার ও আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলা চালানোর উপকরণ ছাড়া আর কোনও অস্ত্র নেই।

এদিকে ইরাক সফররত মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী অ্যাশটন কার্টার জানিয়েছেন, মসুলে পরিকল্পনা অনুযায়ী অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।

ইরাকি বাহিনী মসুলের কাছাকাছি চলে আসলে আইএস যোদ্ধারা সেখানকার বেসামরিক নাগরিকদের মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে পারে বলে ইতিপূর্বে আশঙ্কা করেছিল বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা।

সম্প্রতি ইরাকের সামরিক বাহিনী দেশটিতে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) সর্বশেষ শক্ত ঘাঁটি মসুলে এ অভিযান শুরু করে। প্রাণ বাঁচাতে সেখানকার বেসামরিক নাগরিকরা দলে দলে পালিয়ে যেতে শুরু করেন। বর্তমানে মসুলে বসবাসকারী প্রায় ১৫ লাখ মানুষের মধ্যে পাঁচ হাজারের বেশি আইএস যোদ্ধা।

মসুল অভিমুখে কুর্দি পেশমের্গা বাহিনী।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাও মসুলের বেসামরিক নাগরিকদের নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এরই মধ্যে যারা মসুল ছেড়ে পালিয়েছে তারা পশ্চিম সীমান্ত বরাবর সিরীয় শরণার্থী শিবিরগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে।

বৃহস্পতিবার ইরাকি সরকারের  পক্ষ থেকে জানানো হয়, তাদের সেনারা দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে অগ্রসর হচ্ছে এবং কুর্দি পেশমার্গা বাহিনী অগ্রসর হচ্ছে উত্তর-পূর্ব দিক থেকে। আইএস ঘাঁটি লক্ষ্য করে হেলিকপ্টার থেকে বোমা হামলা চালানো হচ্ছে। ইরাকের বিশেষ বাহিনী এরইমধ্যে বারতেল্লা শহরে প্রবেশ করেছে। শহরটি মসুল শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত।

মেজর জেনারেল ফাদিল বারওয়ারি বলেন, ‘আমরা তাদেরকে বারতেল্লায় পরাস্ত করতে পারলে সব জায়গাতেই তারা ভেঙে পড়বে।’ তার দাবি, আইএস-এর কাছে এখন প্রতিরোধ করার মতো কিছু নেই। তাদের কাছে কিছু স্নাইপার আর গাড়িবোমা রয়েছে।

মসুল অভিযানে ইরাকি সেনাবাহিনীর ১৮ হাজার সদস্য এবং কুর্দি পেশমেরগা বাহিনীর ১০ হাজার সদস্য অংশ নিচ্ছেন। সেই সঙ্গে পাঁচ হাজার মার্কিন সেনা সদস্যও তাদের সহযোগিতার জন্য এখন ইরাকে অবস্থান করছেন। এদিকে এ অভিযান শুরুর পর প্রথমবারের মতো বৃহস্পতিবার এক মার্কিন সেনা নিহত হওয়ার কথা জানিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী।  ইরাকের উত্তরাঞ্চলে রাস্তার পাশে পুঁতে রাখা বোমা হামলায় আহত হওয়ার পর মারা যান তিনি। তবে ঠিক কোন জায়গায় এ ঘটনা ঘটেছে তা জানানো হয়নি।

উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের জুন মাসে জঙ্গিদের হাতে মসুল নগরীর পতন হয়। ইরাকের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই নগরী আইএসের হাত থেকে মুক্ত করার জন্য গত কয়েক মাস ধরে প্রস্তুতি চলছিল। সোমবার (১৭ অক্টোবর) ভোরে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে আনুষ্ঠানিকভাবে মসুল পুনরুদ্ধার অভিযান শুরুর ঘোষণা দেন ইরাকের প্রধানমন্ত্রী হায়দার আল আবাদি। বৃহস্পতিবার ইরাকের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে হায়দার আল-আবাদি বলেন, ‘সামরিক বাহিনী আমাদের ধারণার চেয়েও দ্রুত গতিতে নগরীর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, এমনকি আমরা যে পরিকল্পনা করেছিলাম, তা এর চেয়েও দ্রুতগতিতে এগোচ্ছে।’ সূত্র: সিএনএন, রাশিয়া টুডে, আল জাজিরা।

/এমপি/