ইরাকি বাহিনীর অভিযান ঠেকাতে মসুলে গণহত্যা চালাচ্ছে আইএস!

আইএস সদস্যপুনরুদ্ধার লড়াইয়ের অংশ হিসেবে ইরাকি বাহিনী যখন মসুল শহরের খুব কাছে পৌঁছে গেছে তখন জঙ্গি গোষ্ঠী আইএস শহরটির বাসিন্দাদের ওপর নির্বিচারে হতাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সাধারণ জনগণ ও সরকারি সূত্রের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কার্যালয়ের মুখপাত্র রুপার্ট কলভিলে এমন অভিযোগ ওঠার কথা জানিয়েছেন। তিনি জানান, গত বুধবার থেকে রবিবার পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গা থেকে বেশ কিছু মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। কারও শিরশ্ছেদ, আবার কাউকে কাউকে গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে। তাছাড়া জিম্মি থাকা পুলিশ কর্মকর্তাদেরও আইএস সদস্যরা হত্যা করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে অভিযোগগুলো এখনও ‘প্রাথমিক’ পর্যায়ে রয়েছে উল্লেখ করে কলভিলে বলেছেন এ ব্যাপারে নিশ্চিত হতে জাতিসংঘকে আরও তদন্ত করতে হবে।
জেনেভায় সাংবাদিকদের কলভিলে জানান, মসুল থেকে প্রায় ৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত সাফিনা গ্রামে ১৫ বেসামরিক নাগরিকের শিরশ্ছেদের পর মরদেহগুলো নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। আর এর জন্য আইএসকে দায়ী করা হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, স্থানীয় বাসিন্দাদের মনে আতঙ্ক ছড়াতে এ ধরনের হামলা চালানো হচ্ছে। সাফিনা গ্রামে ১৯ অক্টোবরও ছয় বেসামরিক নাগরিককে গাড়ির সঙ্গে বেঁধে টেনে টেনে পুরো গ্রাম ঘোরানো হয়েছে। ওই ছয় ব্যক্তি আদিবাসী নেতা এবং আইএস-এর বিরুদ্ধে তারা লড়াই করছিলেন বলে জানান কলভিলে।তিনি আরও জানান, গত ২০ অক্টোবর তুলুল নাসের শহরে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আরও ৭০টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে তাদের মৃত্যুর জন্য কারা দায়ী সে সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি বলে জানান কলভিলে।
গত শনিবার আইএস-এর বন্দুকধারীরা মসুলের দক্ষিণে রুফেইলা গ্রামে ছয় নারীকে গুলি করে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। তাছাড়া আইএস-এর হাতে জিম্মি থাকা ৫০ পুলিশ কর্মকর্তাকে গত রবিবার হত্যা করা হয়েছে বলেও খবর পাওয়া গেছে।
কলভিলে বলেন, ‘আমরা খুব শঙ্কার মধ্যে আছি। যে ঘটনাগুলোর কথা বললাম এগুলো যে আইএস-এর নৃশংসতার সর্বশেষ খবর এমনটা নয়।’
যে অভিযোগগুলো উঠেছে তা নিশ্চিত হতে জাতিসংঘকে ‘আরেকটু কাজ’ করতে হবে বলে জানান কলভিলে। ইরাকি বাহিনীর অভিযান থেকে নিজেদের রক্ষায় আইএস সাধারণ মানুষকে নিজেদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে পারে বলে আবারও উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘ।
উল্লেখ্য,২০১৪ সালের জুন মাসে জঙ্গিদের হাতে মসুল নগরীর পতন হয়। ইরাকের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই নগরী আইএসের হাত থেকে মুক্ত করার জন্য গত কয়েক মাস ধরে প্রস্তুতি চলছিল। সোমবার (১৭ অক্টোবর) ভোরে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে আনুষ্ঠানিকভাবে মসুল পুনরুদ্ধার অভিযান শুরুর ঘোষণা দেন ইরাকের প্রধানমন্ত্রী হায়দার আল আবাদি। বৃহস্পতিবার ইরাকের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে হায়দার আল-আবাদি বলেন, ‘সামরিক বাহিনী আমাদের ধারণার চেয়েও দ্রুত গতিতে নগরীর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, এমনকি আমরা যে পরিকল্পনা করেছিলাম, তা এর চেয়েও দ্রুতগতিতে এগোচ্ছে।’ সূত্র: আল জাজিরা
/এফইউ/