২০২০ সাল নাগাদ বিশ্বের দুই-তৃতীয়াংশ বন্যপ্রাণী বিলুপ্তির শঙ্কা

দ্য লিভিং প্ল্যানেট ইনডেক্স অনুযায়ী, ১৯৭০ সাল থেকে যে গতিতে বন্যপ্রাণী বিলুপ্ত হয়েছে, তাতে আশঙ্কা করা হচ্ছে ২০২০ নাগাদ দুই-তৃতীয়াংশ বন্যপ্রাণীই বিলুপ্ত হতে পারে। এক প্রতিবেদনে পরিবেশবাদী সংস্থা ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফান্ড (ডব্লিউডব্লিউএফ) এবং জুলজিক্যাল সোসাইটি অব লন্ডন-এর গবেষকরা এমনটাই দাবি করেছেন।

শিকারীরা কেনিয়ায় হাতিটিকে হত্যা করে

১৯৭০ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত বিশ্বে বন্যপ্রাণী কমেছে ৫৮ শতাংশ। পরিসংখ্যানে বলা হচ্ছে, যেসব প্রাণী নদী ও জলাভূমিতে বাস করে তারাই বেশি ক্ষতির মুখে পড়ছে। বন্যপ্রাণী বিলুপ্তির এই গতি অব্যাহত থাকলে ২০২০ সাল নাগাদ প্রায় ৬৭ শতাংশ বন্যপ্রাণীই বিলুপ্ত হবে।

গবেষকরা ‘দ্য লিভিং প্ল্যানেট রিপোর্ট’-এ বন ধ্বংস, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, মানুষের অতিরিক্ত শিকার বা মাছ ধরা এবং জলবায়ু পরিবর্তনকে এজন্য দায়ী করেছেন।

প্রতি দুই বছর পর পর এই প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এর উদ্দেশ্য বিশ্বের বন্যপ্রাণীদের অবস্থান তুলে ধরা। ২০১৪ সালে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, গত ৪০ বছরে বন্যপ্রাণী অর্ধেকে নেমে এসেছে।

ওই প্রতিবেদনে ১৪ হাজার প্রজাতির প্রাণীর ওপর বিশ্লেষণের পর দেখা গেছে, মাত্র তিন হাজার ৭০০ প্রজাতিরই প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।

পাহাড় থেকে জঙ্গল-নদী-সাগর সবখানেই বন্যপ্রাণীর সংখ্যা দিন-দিন কমছে। হাতি, গরিলা, শকুন, উভচর সরীসৃপ সব প্রাণীই বিলুপ্ত হতে পারে বলে ওই প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়েছে।

ডব্লিউডব্লিউএফ-এর বিজ্ঞান বিষয়ক পরিচালক ড. বেরেট বলেন, ‘কিছু কিছু প্রজাতির প্রাণীর অবস্থা অন্যান্যদের চেয়ে তুলনামূলক বেশি খারাপ। এদের মধ্যে আফ্রিকার হাতি ও হাঙ্গরের সংখ্যা দিন দিন কমছে।’

স্টকহোম রেজিলিয়েন্ট সেন্টারের নির্বাহী পরিচালক জোহান রকস্ট্রম বলেন, ‘এখন আমরা বিশাল বিশ্বে ক্ষুদ্র প্রাণীকূল নই। বরং এক ছোট্ট গ্রহের বিশাল প্রাণীকূল। যেখানে আমরা সম্পৃক্তির পর্যায়ে রয়েছি।’

ডব্লিউডব্লিউএফ-এর ম্যাক্রো ল্যাম্বার্টিনি বলেছেন, ‘পৃথিবীতে জীবন ব্যবস্থার উৎকর্ষ এবং বহুমুখিতা একটি জটিল ও মৌলিক বিষয়। জীবন নিজেই জীবনকে সহায়তা করে, আর আমরা ওই একই সমীকরণ অংশ। জীব বৈচিত্র্য, প্রকৃতি জগত এবং জীব সহায়ক ব্যবস্থা – যেমনটা আমরা জানি, পুরোপুরি ধসে পড়বে।’

মানবিক বিপর্যয়ের বিষয়ে সতর্ক করে তিনি আরও বলেছেন, ‘স্বচ্ছ বায়ু, পানি, খাদ্য এবং বস্তুগত বিষয়, এমন কি অনুপ্রেরণা ও সুখ – মানবতা পুরোপুরি প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে।’

প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়েছে, বন্যপ্রাণী হারাতে থাকলে, যে প্রাকৃতিক উৎসের ওপর মানবতা নির্ভর করে, তার মজুদ কমে আসবে। পানি ও খাদ্য ঘাটতি ভয়াবহ আকারে দেখা দেবে। এর ফলে মানুষের ওপর চাপ বৃদ্ধি পাবে এবং তা মানবকূলকে বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যাবে।

তবে প্রতিবেদনে আশার আলোও দেখানো হয়েছে – কিছু প্রজাতি নিজ থেকেই বিলুপ্তি প্রতিরোধ শুরু করেছে পরিবর্তিত অবস্থায় মানিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে। যেমন – বিশ্বব্যাপী বাঘের সংখ্যা বেড়েছে, বিশালাকার পান্ডাকে এখন বিপন্ন প্রজাতির তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে এই সংকট মোকাবিলা করা সম্ভব হবে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান।

/এসএ/