এবার পাকা ছাদের নিচে থাকবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আর টালির ঘরে থাকছেন না। এবার তার সেই বাড়ি সংস্কার করে কংক্রিটের ছাদ দেওয়া হবে, সংস্কার করা হবে পুরো বাড়িটি। কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির সংস্কারও করবে রাজ্য পূর্ত দফতর।

শুক্রবার রাজ্যের সচিবালয় ‘নবান্ন’-এর মুখ্যমন্ত্রীর অফিস থেকে জানানো হয়েছে, এ সবই মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তার জন্য করা হচ্ছে।

জানা গেছে, ২০১১ সালের ২০ মে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে প্রথম বার শপথ নিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তখন থেকেই তার বাড়ি সংস্কারের কথা বলা হতো। কারণ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী থাকেন টালির চাল‌ দেওয়া এক চিলতে ঘরে। আর চলতি বছর ২৭ মে দ্বিতীয় বার দ্বিতীয়বারে মতো শপথ নেন তিনি। দ্বিতীয় দফায় মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার ছ’মাসের মধ্যে টালির চালের সেই চিরাচরিত ঘর বদলাতে চলেছেন মমতা। ওই টালির চালই বদলে এবার পাকা ছাদ তৈরি হবে। শুধু তাই নয়, গোটা বাড়িটারই আমূল সংস্কার করা হবে।

মুখ্যমন্ত্রীর অফিস বা সিএমও-র এক কর্মকর্তা এ দিন বলেন, ‘কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা সংস্থা এনএসজি (ন্যাশনাল সিকিওরিটি গার্ড) মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবন নিয়ে একটি পর্যালোচনা রিপোর্ট সম্প্রতি রাজ্যকে পাঠিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীর হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটের বাড়ি তাঁর নিরাপত্তার পক্ষে আদৌ উপযুক্ত নয়। বিশেষ করে টালির চালের জন্য। দেওয়ালও মজবুত নয়। কিন্তু মমতা ওই ঠিকানা ছেড়ে অন্যত্র উঠে যেতে নারাজ। তখন ঠিক হয়, মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি এনএসজির সুপারিশ অনুযায়ী, নিরাপত্তার উপযোগী করে তুলতে যতটা সম্ভব, সংস্কার করা হবে। মমতা এতে আর আপত্তি করেননি।’

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, মমতার দল তৃণমূল কংগ্রেসের সদর দফতর কলকাতার ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাস লাগোয়া তপসিয়ায়। ওই তৃণমূল ভবনও মুখ্যমন্ত্রীর জন্য আদৌ নিরাপদ নয়। তবে আপাতত সে দিকে নজর দেওয়া হচ্ছে না। এখন মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনের সংস্কারই অগ্রাধিকারের তালিকায়।

এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর অফিস সূত্রে বলা হয়েছে, ওই টালির চালের ঘরের ছাদ, দেওয়াল আমূল সংস্কার করতে এক মাস সময় লাগবে। যত দিন সেই কাজ না হচ্ছে, কলকাতার ময়দানে রেসকোর্স লাগোয়া হেস্টিংসের কোনও সরকারি ভবনে মুখ্যমন্ত্রী সাময়িকভাবে থাকবেন। পূর্ত দফতর মুখ্যমন্ত্রীর উপযুক্ত আস্তা‌নার খোঁজ ইতিমধ্যেই শুরু করে দিয়েছে। হেস্টিংস এলাকায় পূর্ত দফতরের বেশ কয়েকটি বাড়ি আছে, যেগুলো দফতরের উচ্চপদস্থ প্রতিনিধিদের আবাসন বা কোয়ার্টার্স হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সেগুলোর মধ্যে কয়েকটি আবার বাংলো ধরনের বাড়ি। সম্ভবত তার কোনও একটিতে মুখ্যমন্ত্রী এক মাসের জন্য থাকবেন।

মমতা মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর অন্য কোথাও ওঠা তো দূরের কথা, বাড়িটি সংস্কারেও তার মত ছিল না। তবে এনএসজির রিপোর্ট মুখ্যমন্ত্রী নিজে পড়ে দেখেন এবং মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তায় নিযুক্ত অফিসারদের একাংশ ও রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের একাংশ তাঁকে বোঝানোর পর মমতা শেষ পর্যন্ত টালির চালের বাড়িকে পাকা ছাদের বাড়িতে সংস্কারের পক্ষে মত দিয়েছেন। এক মাসের জন্য অন্যত্র উঠে যেতেও রাজি হয়েছেন।

হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটের ওই টালির চালের বাড়ি বহু স্মৃতি বিজড়িত, সেখানেই বরাবর বহু ভিআইপি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন। এমনকি ২০০০ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী ওই ঘরে ঢুকে বেশ কিছুক্ষণ সময় কাটান, মমতার মা গায়ত্রী দেবীকে প্রণামও করেন। মমতা তখন ছিলেন দেশের রেলমন্ত্রী।

/এসএনএইচ/