গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে রোহিঙ্গাদের আরও আট শতাধিক ঘরবাড়ি

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের একটি মুসলিম গ্রাম
মিয়ানমারের ৫টি রোহিঙ্গা গ্রামে গত কয়েকদিনের সহিংসতা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় নতুন করে ৮২০টি ঘর-বাড়ি ও অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে। নতুন স্যাটেলাইট ইমেজ বিশ্লেষণের পর সোমবার যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এমন তথ্য জানিয়েছে। আর এ নিয়ে এক মাসে রোহিঙ্গা এলাকায় ধ্বংস হয়ে যাওয়া অবকাঠামোর সংখ্যা ১ হাজার ছাড়িয়েছে। অনতিবিলম্বে ঘটনাগুলোর নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য জাতিসংঘকে আমন্ত্রণ জানাতে মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চরম উত্তেজনা দেখা গেছে। অক্টোবর মাসের ৯ তারিখে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ এলাকায় সন্ত্রাসীদের সমন্বিত হামলায় নয় পুলিশ সদস্য নিহত হয়। দুই দিনের মাথায় ১১ অক্টোবর মঙ্গলবার মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম আরও ১২ জনের মৃত্যুর কথা জানায়। তারা দাবি করে, প্রায় ৩০০ মানুষ পিস্তল এবং ধারালো অস্ত্র নিয়ে সৈন্যদের উপর আক্রমণ করলে সেনাবাহিনী পাল্টা আক্রমণ করে। মিয়ানমার সরকার কথিত এইসব সংঘর্ষকে হামলাকারীদের খোঁজে 'ক্লিয়ারেন্স অপারেশন' হিসেবে অভিহিত করছে। তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী রাখাইন রাজ্যে জাতিগত দমনপীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। সেখানে ঘরবাড়িতে আগুন দেওয়া, নারীদের ধর্ষণসহ নানান ধারার শারীরিক ও মানসিক নিপীড়ন চলছে।

মিয়ানমার পরিস্থিতি নিয়ে সোমবার (২১ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানায়, ১০ নভেম্বর থেকে ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন সহিংসতায় নতুন করে মংগদাউ জেলার ৫টি গ্রামে ওই ৮২০টি ঘর-বাড়ি ও অবকাঠামো ধ্বংস হয়। ১০ নভেম্বর, ১৭ নভেম্বর ও ১৮ নভেম্বর ধারণ করা স্যাটেলাইট ইমেজ বিশ্লেষণ করে নতুন করে ধ্বংস হয়ে যাওয়া অবকাঠামোগুলো শনাক্ত করা হয়েছে। এর আগে ২২ অক্টোবর থেকে ১০ নভেম্বরের মধ্যে মংগদাউ জেলার তিনটি গ্রামের ৪৩০টি ভবন পুড়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছিল হিউম্যান রাইটস। সব মিলে এক মাসে ধ্বংস হওয়া অবকাঠামোর সংখ্যা ১২৫০-এ দাঁড়িয়েছে। নতুন করে ধ্বংস হওয়া ৮২০টি অবকাঠামোর মধ্যে ২৫৫টি ইয়ে খাত চং গয়া সন গ্রামের, ২৬৫টি দার গেয়ি জার গ্রামের, ৬৫টি পয়িন্ত হপিয়ু চং গ্রামের, ১৫টি মিয়াও তং গ্রামের এবং ২২০টি ওয়া পিক গ্রামের। 

স্যাটেলাইট ছবি
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়াবিষয়ক পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস বলেন, ‘এ নতুন স্যাটেলাইট ইমেজগুলোর মধ্য দিয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে রোহিঙ্গা গ্রামগুরোতে ধ্বংসের পরিমাণ মিয়ানমার সরকারের তথ্যের চেয়ে অনেক বেশি ভয়াবহ এবং তা আরও বেশি জায়গায় বিস্তৃত। ৫টি রোহিঙ্গা গ্রামে যে অগ্নিসংযোগ হয়েছে তা খুব উদ্বেগের। এর জন্য মিয়ানমার সরকারকে তদন্ত করতে হবে এবং দোষীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। এ ধরনের তদন্তকে বিশ্বাসযোগ্য করতে হলে এর সঙ্গে জাতিসংঘের অংশগ্রহণ জরুরি।’

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনে বলা হয়, জাতিসংঘে নিয়োজিত যুক্তরাষ্ট্রের দূত সামান্থা পাওয়া ১৭ নভেম্বর নিরাপত্তা পরিষদে রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতি বর্ণনা করেছেন। তিনিও সেসময় মিয়ানমারে তদন্তের জন্য আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের প্রবেশে অনুমতি দেওয়া আহ্বান জানান। মিয়ানমারে নিয়োজিত জাতিসংঘের দূত ইয়ানঘি লী-ও ১৮ নভেম্বর সেদেশের সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যেন আন্তর্জাতিক প্রতিনিধিদের তদন্তের সুযোগ দেওয়া হয়।

সূত্র: হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ওয়েবসাইট, রয়টার্স

/এফইউ/বিএ/