তুরস্কে সমালোচনার মুখে ধর্ষণসংক্রান্ত বিতর্কিত বিল প্রত্যাহার

বিলটির প্রতিবাদে আনকারায় বিক্ষোভের ছবিতুমুল সমালোচনার মুখে অবশেষে শিশু ধর্ষণসংক্রান্ত বিতর্কিত বিলটি প্রত্যাহার করে নিলো তুরস্ক সরকার। মঙ্গলবার (২২ নভেম্বর) তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইলদিরিম বিলটি প্রত্যাহার করে নেন। পার্লামেন্টে বিতর্কিত বিলটি পাস করানোর জন্য চূড়ান্ত ভোটাভুটির আগে বিতর্কিত বিলটি প্রত্যাহার করে নিলো তুর্কি সরকার। ধর্ষণের শিকার অপ্রাপ্তবয়স্ক নারীকে বিয়ে করলে ধর্ষকের সাজা মওকুফের সুযোগ রেখে বিলটি উত্থাপন করা হয়েছিল। মঙ্গলবার এ ব্যাপারে চূড়ান্ত ভোটাভুটি হওয়ার কথা ছিল।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার রাতে বিতর্কিত বিলটি উত্থাপন করা হলে দেশটির ক্ষমতাসীন দল একে পার্টির এমপিরা তাতে প্রাথমিকভাবে সমর্থন জানিয়েছিলেন। প্রস্তাবিত ওই বিলে বলা হয়েছিল, অভিযুক্ত ব্যক্তি ধর্ষণের শিকার শিশুকে বিয়ে করলে তার সাজা মওকুফ করা হবে এবং তার বিচার খারিজ হয়ে যাবে। বিতর্কিত বিলটি নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুমুল সমালোচনার ঝড় ওঠে। সমালোচকদের মতে, বিতর্কিত বিলটি আইনে পরিণত হলে তা সংবিধিবদ্ধ ধর্ষণকে বৈধতা দেবে এবং বাল্যবিবাহের চর্চা বাড়বে।  জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকেও বিলটি অনুমোদন না করার জন্য তুরস্ক সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।  এ বিলটি আইনে পরিণত হলে যৌন নিপীড়ন ও বাল্যবিবাহবিরোধী লড়াইয়ে হিমশিম খাবে  তুরস্ক সরকার। তুরস্কের মানবাধিকার এবং নারী অধিকার সংগঠনগুলো এই প্রস্তাবিত আইনের তীব্র সমালোচনা করেন। তারা বলেন, এই আইনের মানে দাঁড়াবে ধর্ষণকে আইনি বৈধতা দেওয়া।
এমন প্রেক্ষাপটে মঙ্গলবার তুরস্ক সরকারের পক্ষ থেকে বিলটি প্রত্যাহার করে নেওয়া হলো।ইলদিরিম জানান, বড় ধরনের ঐকমত্য গড়ে তুলতে এবং বিরোধী দলগুলোকে তাদের প্রস্তাবগুলো সমৃদ্ধ করার জন্য সময় দিয়ে বিলটি ফেরত পাঠানো হয়েছে। বিরোধী দলগুলো বিলটির তুমুল সমালোচনা করেছিল।    
তুরস্কে বিয়ের ন্যুনতম বয়স ১৮ বছর হলেও দেশটিতে প্রচুর বাল্যবিবাহ হয়ে থাকে। সাবেক প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ গুল যখন ৩০ বছর বয়সে বিয়ে করেন তখন তার স্ত্রীর বয়স ছিল ১৫। জরিপে দেখা গেছে, তুরস্কে গত কয়েক বছরে যৌন হয়রানির সংখ্যা বেড়েছে। দেশটিতে নারীদের ৪০ শতাংশই কোনও না কোনওভাবে শারীরিক বা যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। সমালোচকরা এজন্য এরদোয়ান সরকারের ব্যর্থতাকে দায়ী করছেন। কেবল তাই নয়, গত জুলাইয়ে তুরস্কের সাংবিধানিক আদালত ধর্ষণের ব্যাপারে ক্রিমিনাল কোডের একটি অংশ বাতিল করে। ক্রিমিনাল কোডের ওই অংশে বলা হয়েছিল, ‘১৫ বছরের কম বয়সী শিশুর সঙ্গে সব ধরনের যৌন কর্মকাণ্ডই যৌন নিপীড়ন।’ আর এ অংশটিই বাদ দেওয়া হয়।

সমালোচকরা বলছেন, ধর্ষণসংক্রান্ত ওই বিতর্কিত বিলে ধর্ষণের শিকার হওয়া মেয়ে ও পরিবারের সম্মতির কথা বলা থাকলেও অনেকসময় হুমকি-ধামকি দিয়ে এ সম্মতি আদায় করা হতে পারে। সূত্র; বিবিসি

/এফইউ/