মিয়ানমারে মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে: ওবামা

Untitled-1মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠীর ওপর ‘মানবতাবিরোধী অপরাধ’ সংঘটিত হচ্ছে বলে দুই দফায় জানিয়ে দিয়েছে জাতিসংঘ। সেখানে জাতিগত নির্মূল প্রক্রিয়া (এথনিক ক্লিনজিং) চলছে বলেও অভিযোগ তুলেছে জাতিসংঘ। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ স্যাটেলাইট ইমেজে দেখিয়েছে, কীভাবে পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে রোহিঙ্গা বসতি। তা সত্ত্বেও মিয়ানমারের মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতি দেখছেন ওবামা। বলেছেন, মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়নে কার্যকর অগ্রগতি অর্জন করেছে মিয়ানমার। নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক খবরে এ কথা জানানো হয়েছে।

এ বছর অক্টোবর মাসের ৯ তারিখে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ এলাকায় সন্ত্রাসীদের সমন্বিত হামলায় ৯ পুলিশ সদস্য নিহত হওয়ার পর তার দায় চাপানো হয় রোহিঙ্গাদের ওপর। আর তখন থেকেই শুরু হয় সেনাবাহিনীর দমন প্রক্রিয়া। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের দাবি, এরপর থেকেই রাখাইন রাজ্যে 'ক্লিয়ারেন্স অপারেশন' চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। রোহিঙ্গা মুসলমানদের ইসলামি চরমপন্থা দমনে কাজ করছেন বলে দাবি করছেন তারা। আর তা এমন কঠোর প্রক্রিয়ায় চালানো হচ্ছে যে সেখানে সংবাদমাধ্যমকেও প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। 

নিউ ইয়র্ক টাইমস গত ২ ডিসেম্বর শুক্রবারের এক প্রতিবেদনে জানায় ( ৫ ডিসেম্বর সংশোধিত) মিয়ানমারের ওপর থেকে বাণিজ্যিক অবরোধ তুল নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। শুক্রবার  বারাক ওবামা এ সংক্রান্ত বিলে স্বাক্ষর করতে গিয়েই রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতি নিয়ে নিশ্চুপ ছিলেন ওবামা। উল্টো মিয়ানমারের মানবাধিকার পরিস্থির উন্নয়নের কথা বলেছেন তিনি।

নিউ ইয়র্ক টাইমস লিখেছে,  অং সান সু চির বিজয় নিয় বেশ উচ্ছ্বাসিত ছিল যুক্তরাষ্ট্র। তারা জানিয়েছিল, মার্কিন প্রেসিডেন্টের একান্ত প্রচেষ্টায় মিয়ানমারে গণতন্ত্র ফিরে এসেছে। তবে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সাম্প্রতিক ভয়াবহ জাতিগত নির্মূল প্রক্রিয়া সেই উচ্ছ্বাস হাওয়ায় মিলিয়ে দিয়েছে যেন।

জাতিসংঘ এরইমধ্যে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে জাতিগতভাবে নির্মূল করার অভিযোগ এনেছে। তাদের বিরেুদ্ধে মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডেরও অভিযোগ তোলা হয় দুই দফায়। ২০১২ সালে মিয়ানমার সরকারের মদদপুষ্ট উগ্র জাতীয়তাবাদী বৌদ্ধদের তাণ্ডবে প্রায় ২০০ রোহিঙ্গা নিহত হন। ঘর ছাড়তে বাধ্য হন ১ লাখেরও বেশি মানুষ। এবারের সংঘর্ষে রাখাইন রাজ্যের মৃতের সংখ্যা ৮৬ জন বলে জানিয়েছে তারা। জাতিসংঘের হিসাব মতে, এখন পর্যন্ত ঘরহারা হয়েছেন ৩০ হাজার মানুষ। পালাতে গিয়েও গুলি খেয়ে মরতে হচ্ছে তাদের। 

মিয়ানমারে ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাস করে। কিন্তু, সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধরা তাদেরকে দেশটির নাগরিক হিসেবে স্বীকার তো করেই না বরং এসব রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে দাবি করে থাকে। রাখাইন রাজ্যে এমন উদ্বেগজনক পরিস্থিতি সৃষ্টির পরেও চলমান দমন প্রক্রিয়ার সঙ্গে নিজেদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি অস্বীকার করে দায় এড়াতে চাইছে দেশটির সরকার। রোহিঙ্গারা নিজেরাই নিজেদের বাড়িঘর পোড়াচ্ছে বলেও দাবি করছে মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষ। তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়  নিশ্চিত করেই রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবেই চেনে।

/বিএ/