ইন্দোনেশিয়ার ভূমিকম্প

প্রাণের সন্ধানে উন্নত প্রযুক্তির যন্ত্র, হাসপাতালে আহতদের আর্তনাদ

চলছে উদ্ধার অভিযানইন্দোনেশিয়ায় বুধবারের শক্তিশালী ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত ভবনগুলোর নিচে আর কোনও জীবিত ব্যক্তি চাপা পড়ে আছেন কিনা এবং তাদের জীবিত উদ্ধারের বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন উদ্ধারকর্মীরা। তবে কিছুক্ষণ পর পর আফটার শক অর্থাৎ ভূমিকম্প পরবর্তী কম্পন অব্যাহত থাকায় উদ্ধার তৎপরতা ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তারা। তাছাড়া ভূমিকম্পের একদিন পেরিয়ে যাওয়ার পর ধ্বংসস্তূপ থেকে জীবিত উদ্ধারের আশা ক্রমাগত ফুরিয়ে আসছে। এমন অবস্থায় জীবনের অস্তিত্ব শনাক্তকরণের জন্য উন্নত প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে উদ্ধার তৎপরতা চালানো হচ্ছে। ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত নিশ্চিত প্রাণহানির সংখ্যা ৯৯ বলে জানিয়েছে জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা। আর আহত হয়েছে ৭০০রও বেশি মানুষ। এদের অনেকেই গুরুতর আহত হয়েছেন। আহতদের চিকিৎসায় হাসপাতালগুলো হিমশিম খাচ্ছে। জরুরি ভিত্তিতে ওষুধ ও চিকিৎসকের জন্য আবেদন জানানো হয়েছে।

উল্লেখ্য, স্থানীয় সময় বুধবার (৭ ডিসেম্বর) ভোর ৫টা ৩ মিনিটে উত্তর সুমাত্রার বান্দে আচেহর ১৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে ও সিগলি শহরের ১২ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে ৬.৫ মাত্রার এই ভূমিকম্প অনুভূত হয়। ভূমিকম্পটির কেন্দ্রস্থল সমুদ্রের নিচে, ভূমি থেকে ১৭.২ কিলোমিটার গভীরে। ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৬.৫। শক্তিশালী ওই ভূমিকম্পের পর থেমে থেমে আফটার শক অনুভূত হচ্ছে। আতঙ্কে লোকজন খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাচ্ছেন। আফটার শকের কারণে উদ্ধার তৎপরতা ব্যাহত হচ্ছে। ভুমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে হাজারো সেনা সদস্য ও উদ্ধারকর্মী কাজ করে যাচ্ছেন। উন্নত প্রযুক্তির যন্ত্র ব্যবহার করার মাধ্যমে জীবনের সন্ধান চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। কোনও কোনও স্বেচ্ছাসেবী খালি হাতেই উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছেন।

খালি হাতেও উদ্ধার তৎপরতা চালানো হচ্ছে
ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থার মুখপাত্র সুতোপো পুরয়ো নুগরোহো বলেন, ‘ধ্বংসস্তূপের মধ্যে স্ক্যান করার মধ্য দিয়ে দেখা হচ্ছে সেখানে জীবিত কিংবা মৃত কেউ আছেন কিনা।’

এদিকে ভূমিকম্পে যারা আহত হয়েছেন কিংবা ঘরবাড়ি হারিয়েছেন তাদের দিকে মনোযোগী হচ্ছে কর্তৃপক্ষ। আচেহ প্রদেশের সেনাপ্রধান তাতা২ সুলাইমান ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, মিওরিওদু শহরে সেনাবাহিনী দুর্গতদের জন্য রান্নাঘর, আশ্রয়কেন্দ্র এবং ফিল্ড হাসপাতাল তৈরি করে দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘ভবনগুলোতে আর কোনও জীবিত আটকা পড়ে আছে কিনা তা পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়া এবং ঘরহারাদের সহায়তার বিষয়কে আমরা প্রাধান্য দিচ্ছি।’

হাসপাতালের বাইরে ম্যাট্রেসে আহতরা
তবে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শহরের হাসপাতালগুলোতে আহতদের ভীড় জমায় চিকিৎসকরা হিমশিম খাচ্ছেন। চিকিৎসা উপকরণের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। ভূমিকম্পে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পিদি জায়ার ডেপুটি প্রধান মুলিয়াদি জানান, আহতরা প্রচণ্ডরকমের ওষুধ স্বল্পতা এবং চিকিৎসক ও চিকিৎসা উপকরণের স্বল্পতায় রয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের সার্জন আর অর্থোপেডিকস দরকার, কারণ আহতদের অনেকেরই হাড়গোড় ফেটে গেছে।’

এদিকে আফটার শকের কারণে অনেকেই বাড়ি ফিরতে পারছেন না। আতঙ্কে তারা খোলা আকাশের নিচে রাত কাটিয়েছেন। ৪ হাজারেরও বেশি মানুষের জন্য খাবার, স্বচ্ছ পানি এবং কম্বলে জরুরি হয়ে পড়েছে।     

উল্লেখ্য, ইন্দোনেশিয়া ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ। ২০০৪ সালে ৯.২ মাত্রার প্রলঙ্করী এক ভূমিকম্প ও সুনামিতে ভারত মহাসাগরের উপকূলে থাকা ইন্দোনেশিয়া ও অন্যান্য দেশের অনেক জনপদ ভেসে যায়। তখন কেবল আচেহ প্রদেশেই মারা পড়েছিলেন ১ লাখ ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ। 

/এফইউ/