অধিকারের দাবিতে সোচ্চার মালয়েশিয়ার শরণার্থী-রোহিঙ্গারা

nonameমিয়ানমারের আরাকান রাজ্যের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর নেমে আসা মানবতাবিরোধী অপরাধ ও জাতিগত নির্মূল প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে মালয়েশিয়া। দেশের শীর্ষ ব্যক্তি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক সামিল হয়েছেন সেই প্রতিবাদ সমাবেশে। তবে খোদ মালয়েশিয়ায় শরণার্থী হয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের বাস্তবতাও খুব একটা ভিন্ন নয়। কর্মসংস্থান ও শিক্ষার অভাবে বিপন্ন তারা। মিয়ানমারের রোহিঙ্গা ইস্যুতে সোচ্চার মালয়েশিয়ার প্রতি এবার তাই সেখানকার শরণার্থীরা শিক্ষা ও কাজের অধিকার দাবি করেছেন। চ্যানেল নিউজ এশিয়ার এক খবর থেকে এসব কথা জানা গেছে।
রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমার সরকারের দমনপীড়নের কারণে এ পর্যন্ত বহু রোহিঙ্গা নাগরিক মালয়েশিয়ার আশ্রয়প্রার্থী হয়েছেন।  জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর-এর হিসেব মতে সেখানকার নথিভূক্ত রোহিঙ্গা শরণার্থীর সংখ্যা ৫৬ হাজার। ১৯৫১ সালের শরণার্থী সনদ মেনে চলে না দেশটি। ১৯৬৭ সালের প্রোটোকোল রিলেটিং টু স্ট্যাটাস অব রিভিউজিজ নামের আরেকটি সনদও মানে না দেশটি। তাই রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বৈধপথে কাজ করার সুযোগ দিতে বাধ্য নয় মালয়েশিয়া।
মালয়েশিয়ার রোহিঙ্গা সোসাইটির সভাপতি ফয়সাল ইসলাম মোহাম্মদ কাশিম চ্যানেল নিউজ এশিয়াকে জানান, বৈধপথে কাজের সুযোগ না পাওয়ার কারণে রোহিঙ্গারা মাঝে মাঝেই অবৈধ পথে কবাজ পাওয়ার চেষ্টা করেন। নির্মাণ শিল্পের মতো খাতগুলোকে এভাবে কাজের মধ্য দিয়ে মাসে ২৫০ ডলার মতোন পেয়ে থাকে বড়জোর। তবে এই টাকা তাদের টিকে থাকার পক্ষে খুবই কম।
সে কারণেই রোহিঙ্গা সোসাইটির সভাপতি ফয়সাল তার জনগোষ্ঠীর মানুষদের বৈধপথে কাজ দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।চ্যানেল নিউজ এশিয়ার খবরে বলা হয়েছে, বৈধপথে রোহিঙ্গাদের কর্মস্থানের দাবি শিগগির বাস্তবতায় রূপ নিতে পারে। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার বরাত দিয়ে তারা জানিয়েছে, শিগগির ইউএসএইচসিআর আর মালয়েশিয়া সরকারের মধ্যে এ নিয়ে আলোচনা হবে। এ সংক্রান্ত একটি পাইলট প্রজেক্ট হাতে নেওয়ার কথাও জানিয়েছে তারা।

২০১২ সালে মিয়ানমার থেকে মালয়েশিয়ার শরণার্থী জীবন বেছে নিতে বাধ্য হন রোহিঙ্গা-সোসাইটির নেতা ফয়সাল। তিনি রোহিঙ্গা শিশুদের মালয়েশিয়ার মূল ধারার শিক্ষা ব্যবস্থায় যুক্ত করারও আহ্বান জানান।

উল্লেখ্য, এখনও পর্যন্ত এনজিও পরিচালিত বিভিন্ন স্কুলে পড়ে থাকেন রোহিঙ্গা মুসলিম সম্প্রদায়ের শিশুরা।

এ বছর অক্টোবর মাসের ৯ তারিখে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ এলাকায় সন্ত্রাসীদের সমন্বিত হামলায় ৯ পুলিশ সদস্য নিহত হওয়ার পর তার দায় চাপানো হয় রোহিঙ্গাদের ওপর। আর তখন থেকেই শুরু হয় সেনাবাহিনীর দমন প্রক্রিয়া। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের দাবি, এরপর থেকেই রাখাইন রাজ্যে 'ক্লিয়ারেন্স অপারেশন' চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। রোহিঙ্গা মুসলমানদের ইসলামি চরমপন্থা দমনে কাজ করছেন বলে দাবি করছেন তারা। আর তা এমন কঠোর প্রক্রিয়ায় চালানো হচ্ছে যে সেখানে সংবাদমাধ্যমকেও প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।

জাতিসংঘ এরইমধ্যে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে জাতিগতভাবে নির্মূল করার অভিযোগ এনেছে। তাদের বিরেুদ্ধে মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডেরও অভিযোগ তোলা হয় দুই দফায়। সংঘর্ষে রাখাইন রাজ্যের মৃতের সংখ্যা ৮৬ জন বলে জানিয়েছে তারা। জাতিসংঘের হিসাব মতে, এখন পর্যন্ত ঘরহারা হয়েছেন ৩০ হাজার মানুষ। পালাতে গিয়েও গুলি খেয়ে মরতে হচ্ছে তাদের। 

/বিএ/