ইস্তানবুল বিস্ফোরণে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩৮, আহত ১৬৬

nonameতুরস্কের ইস্তানবুলে  চালানো জোড়া বিস্ফোরণে এ পর্যন্ত ৩৮ জনের প্রাণহানির খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। তুরস্কের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান এবং বিবিসি খবরটি নিশ্চিত করেছে।  একে সন্ত্রাসবাদী হামলা হিসেবে সন্দেহ করছে কর্তৃপক্ষ। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান শনিবারের ঘটনাকে ‘নিরাপত্তা বাহিনী ও জনগণের’ ওপর ‘সন্ত্রাসী হামলা’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। 
কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে বিবিসি এবং গার্ডিয়ান জানিয়েছে, বিস্ফোরণে আহত হয়েছে আরও ১৬৬ জন।  অহতদের মধ্যে অন্তত ২০ জন পুলিশ সদস্য রয়েছে বলে কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে নিশ্চিত করেছিল মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট। এবার গার্ডিয়ান জানাচ্ছে, আহত ১৬৬ জনের মধ্যে ১৪ জন নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রয়েছেন।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো প্রত্যক্ষদর্শী এবং নিরাপত্তাসূত্রকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, হামলাকারীদের প্রাথমিক লক্ষ ছিল পুলিশ এবং পুলিশের গাড়ি। এখন পর্যন্ত হামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ১০ জনকে আটকের খবর দিয়েছে বিবিসি।
সাম্প্রতিক সময়ে ধারাবাহিক সন্ত্রাসী হামলার লক্ষ্যবস্তু হয়েছে তুরস্ক।
রাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে তুরস্কের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আনাদুলু পোষ্ট জানায়, নিরাপত্তা বাহিনীর আশঙ্কা অনুযায়ী দুই বিস্ফোরণের একটি ছিল আত্মঘাতী বোমা হামলা। অপর হামলাটি পরিচালিত হয়েছে গাড়িবোমা দিয়ে। কয়েক সেকেন্ডের ব্যাবধানে হামলা দু'টি পরিচালিত হয়।





noname


শনিবার রাতে বেসিকটাস স্টেডিয়ামের কাছে পুলিশ সদস্যদের বহনকারী গাড়ি লক্ষ্য এ জোড়া বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। বিস্ফোরণের পর এরিনা মাঠ সংলগ্ন সব রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বেসিকটাস স্টেডিয়ামে একটি ফুটবল ম্যাচের দুই ঘণ্টার মাথায় এ হামলা চালানো হয়।
এখনও পর্যন্ত কেউ এ হামলার দায় স্বীকার করেনি। তবে হামলায় আইএস এবং কুর্দি সশস্ত্র যোদ্ধারা জড়িত বলে সন্দেহ করছে তুরস্ক। এই বছরে তুরস্কের মাটিতে এটি ৫ম হামলা।

হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিল নিরাপত্তা বাহিনী

হামলায় বহু প্রাণহানির আশঙ্কা জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে প্রথমে ১৩ জনের প্রাণহানির কথা জানিয়েছিল তারা। নিরাপত্তা সূত্রের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স-এর খবরেও তখন ১৩ জনের প্রাণহানির কথা বলা হয়। বিবিসি এবার সরকারি সূত্রের বরাত দিয়ে হতাহতের সংখ্যা নিশ্চিত করেছে বিবিসি ও গার্ডিয়ান। সরকারি সূত্রের বরাত দিয়ে ৩৮ জন নিহত এবং ১৬৬ জনের আহত হওয়ার খবর দিয়েছে তারা। 
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তা্ইয়্যেব এরদোয়ান বলেছেন, ‘আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী ও জনগণের বিরুদ্ধে একটি সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে’। এরদোয়ান যোগ করেন, ‘বেসিকতাস-বুরসাসপোরের মধ্যকার ফুটবল ম্যাচের পর হামলার মানে হলো হতাহতের সংখ্যা বাড়ানো। এসব হামলার পর দুর্ভাগ্যবশত আমাদের  অনেকে শহীদ ও গাজি হয়েছেন।'




বিস্ফোরণের পরপরই ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। তারা  পরিস্থিতি নিয়নন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালাচ্ছেন। আহতদের দ্রুত চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে ঘটনা স্থলে বেশকিছু অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে আসা হয়।

তুরস্কভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল এনটিভি জানিয়েছে, ফুটবল ম্যাচ শেষে দর্শকরা যখন ছড়িয়ে পড়েন তখন পুলিশের গাড়িও ঘটনাস্থল ত্যাগ করছিল। এ সময় পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।

noname

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিস্ফোরণের পরপরই ঘটনাস্থল ঘিরে ফেলেন পুলিশ সদস্যরা। এ সময় নবনির্মিতি বেসিকটাস স্টেডিয়াম থেকে ধোঁয়া উড়তে দেখা যায়। শোনা যায় গুলির শব্দ। দু’জন প্রত্যক্ষদর্শী রয়টার্সকে জানান, তারা স্টেডিয়ামের বাইরে দুটি বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পেয়েছেন।

বিস্ফোরণস্থল সংলগ্ন একটি মসজিদের ক্লিনার ওমর ইলমিজ। বিস্ফোরণের সময় মসজিদের পাশের একটি ক্যাফেতে তিনি চা পান করছিলেন। তার ভাষায়, ‘ঘটনাস্থলের আকাশ যেন আগুনে ছেয়ে গেছে। লোকজন টেবিলের নিচে মাথা গুঁজছিল, নারীরা কান্না করতে শুরু করে। ফুটবল ভক্তরা ক্যাফেতে চা পান করা রেখে আশ্রয় খুঁজতে আরম্ভ করে। এটা ছিল ভয়ঙ্কর, জাহান্নামের আগুনের মতো।’ 

/বিএ/