সাংবাদিক নাজমুলের মুক্তি দাবি করেছে আরএসএফ

সাংবাদিক নাজমুল হুদাগার্মেন্টস শিল্পের ধর্মঘটের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে গ্রেফতার হওয়া সাংবাদিক নাজমুল হুদাকে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে রিপোর্টাস উইদাউট বর্ডারস (আরএসএফ)। শুক্রবার নিজেদের ওয়েবসাইটে দেওয়া এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানায় সংস্থাটি। গত ২৪ ডিসেম্বর ঢাকার পাশে আশুলিয়ায় গার্মেন্ট কর্মীদের ধর্মঘটের খবর সংগ্রহের কারণে তাকে গ্রেফতার করা হয়। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিগুলোর অবস্থান ওই এলাকায়।
বাংলাদেশ প্রতিদিন এবং বেসরকারি টিভি চ্যানেল একুশে টেলিভিশন (ইটিভি)-এর হয়ে কাজ করেন নাজমুল হুদা। পুলিশের অভিযোগ, প্রতিবেদনে মিথ্যা তথ্য দিয়ে তিনি মধ্য ডিসেম্বরে শুরু হওয়া ধর্মঘটকে উৎসাহিত করেছেন। গ্যাপ, জারা এবং এইচঅ্যান্ডএম-এর মতো শীর্ষস্থানীয় আন্তর্জাতিক খুচরা চেইনগুলোর জন্য পোশাক তৈরি করে এমন গার্মেন্টগুলোতে এ ধর্মঘট শুরু হয়েছিল।

গ্রেফতারের সময়ে নাজমুল হুদার কম্পিউটার ও মোবাইল ফোনও জব্দ করা হয়। ২০১৩ সালে সাভারের রানা প্লাজা ধসের আগে ভবনটির কাঠামোগত সমস্যা নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা তিনিই প্রথম সাংবাদিক। ওই বিস্ফোরণে নিহত হন গার্মেন্টকর্মীসহ কয়েকশ মানুষ।

বিষয়টি নিয়ে প্যারিসভিত্তিক সংবাদমাধ্যম এএফপি’র সঙ্গে কথা বলেছেন ঢাকার একজন পুলিশ কর্মকর্তা। তিনি জানান, নাজমুল হুদা ‘সরকারকে অস্থিতিশীল করা’র জন্যও অভিযুক্ত। গ্রেফতারকৃত সাতজন ট্রেড ইউনিয়ন নেতার সঙ্গেও তার গোপন বৈঠকের অভিযোগ রয়েছে।

কর্তৃপক্ষ বলছে, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বা আইসিটি অ্যাক্টের অধীনে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বলা হচ্ছে, তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে ইলেক্ট্রনিক মাধ্যমে এমন বিষয়বস্তু প্রকাশ করেছেন যা ‘আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানো, রাষ্ট্র বা ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণবা ধর্মীয় বিশ্বাস আঘাতের কারণ’ হতে পারে। এসব অপরাধের জন্য সাত থেকে ১৪ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।

২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে আইসিটি অ্যাক্ট পুরোপুরি রহিতের আহ্বান জানায় রিপোর্টাস উইদাউট বর্ডারস। ওই আহ্বানের পক্ষে যুক্তি দেখানো হয়, ‘এ আইনের মাধ্যমে সরকার বৈধ কোনও ভিত্তি ছাড়াই নেটিজেনদের কণ্ঠরোধ এবং তাদের গ্রেফতারে সক্ষম হবে। বৈধ ভিত্তি ছাড়াই তাদের আটক রাখতে পারবে।’ ২০১৩ সালের আগস্টে এই সংশোধনী গৃহীত হয়। তখন আরএসএফ-এর পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, এর মাধ্যমে ‘পুলিশ ও বিচারবিভাগীয় কর্তৃপক্ষ আরও সংবাদ প্রদানকারীদের সঙ্গে আরও নির্বিচার আচরণ’ করতে পারবে।

বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন একুশে টেলিভিশনের সাবেক প্ল্যানিং এডিটর ডয়চে ভেলে'র বাংলাদেশ প্রতিনিধি হারুন উর রশীদ। তিনি বলেন, হুদা হচ্ছেন একমাত্র সাংবাদিক যিনি রানা প্লাজার সাপোর্ট পিলারের দৃশ্য ধারণ করেছিলেন। ওই ভবনে বহু গার্মেন্ট ফ্যাক্টরি ছিল। ২০১৩ সালের এপ্রিলে রানা প্লাজা ধসের কিছুদিন আগে হুদার ওই প্রতিবেদনটি সম্প্রচার হয়েছিল। এতে নিহত হন এক হাজার ১৩৮ জন। আহত হন দুই হাজারেরও বেশি মানুষ।

নাজমুল হুদা’র ‘ব্যাপক সাহসের’ও প্রশংসা করেন সাংবাদিক হারুন উর রশীদ। রানা প্লাজার মালিকের গ্রেফতারের পর বহুবার হত্যার হুমকিও পেয়েছেন হুদা। বলা হয়েছে, তাদের এভাবে তুলে ধরার ফল তিনি পাবেন।

নাজমুল হুদা’র গ্রেফতারের দুইদিন আগে তাণ্ডবের আশঙ্কায় আশুলিয়ার ৫৫টি ফ্যাক্টরি বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় প্রভাবশালী বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ)। সংস্থাটি বলছে, কর্মীদের চাপে রাখতে এবং অধিক মজুরির দাবিতে তাদের ধর্মঘট ভাঙতে ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

রিপোর্টাস উইদাউট বর্ডারস-এর ২০১৬ সালের ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্সে ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৪তম।

/এমপি/