ইসরায়েলের স্বীকৃতি ফিরিয়ে নিতে পারে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ

তেল আবিবে মার্কিন দূতাবাসফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মার্কিন দূতাবাস তেল আবিব থেকে জেরুজালেমে সরিয়ে নেওয়া হলে ইসরায়েলকে রাষ্ট্র হিসেবে দেওয়া স্বীকৃতি তারা ফিরিয়ে নিতে পারে।

উল্লেখ্য, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত ডোনাল্ড ট্রাম্প বিভিন্ন সময়ে দূতাবাস স্থানান্তরের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন। গত মাসে কট্টরপন্থী আইনজীবী ডেভিড ফ্রাইডম্যানকে ইসরায়েলে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মনোনীত করেন ট্রাম্প। ট্রাম্পের মুখপাত্র কেলিঅ্যান কনওয়েও এক মার্কিন রেডিওকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘দূতাবাস সরানোটা ট্রাম্প প্রশাসনে বিশেষ প্রাধান্য পাবে।’

ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা মোহাম্মদ শাতায়েহ বলেছেন, ‘মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য এক চপেটাঘাত, আর তার মানে হলো দুই রাষ্ট্র সমাধান প্রক্রিয়ার সমাপ্তি।’

রামাল্লায় ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্টের দফতরে শাতায়েহ বলেন, আমার ধারণা ফিলিস্তিনি, মুসলিম ও খ্রিস্টানদের জন্য জেরুজালেমের গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারেন ট্রাম্প।

ফিলিস্তিনি নেতারা তাদের প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে এই শুক্রবার বিশ্বব্যাপী সকল মসজিদে বিশেষ দোয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে রবিবার সকল গির্জায় ঘণ্টা বাজানোর আহ্বান জানিয়েছেন।

এতোদিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য দেশ তাদের দূতাবাস তেল আবিবেই রেখেছেন। শান্তি প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়ার জন্যই তা করা হয়। তবে এবার ট্রাম্প প্রশাসনে দূতাবাস সরানোর ঘোষণা দেওয়ার পর পুরো শান্তি প্রক্রিয়াই ভেস্তে যেতে চলেছে বলে মনে করা হচ্ছে।

শাতায়েহ জানিয়েছেন, ক্ষমতা গ্রহণের পর দেওয়া ভাষণেই ট্রাম্প দূতাবাস স্থানান্তরের ঘোষণা দিতে পারেন বলে এক কূটনৈতিক সূত্রে তিনি জেনেছেন। এর বিপরীতে পাল্টা জবাব দেওয়ার কথা ভাবছে বিভিন্ন ফিলিস্তিনি গ্রুপের জোট প্যালেস্টাইন লিবারেশন অরগানাইজেশন (পিএলও)।

তিনি বলেন, ‘পাল্টা জবাব হিসেবে ইসরায়েলকে রাষ্ট্র হিসেবে দেওয়া স্বীকৃতি ফিরিয়ে নিতে পারে পিএলও। পারস্পরিক স্বীকৃতির অংশ হিসেবেই পিএলও ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। আর এখন তার বৈধতা থাকছে না।’ ১৯৯৩ সালে অসলো চুক্তি অনুযায়ী পিএলও ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেয়।

প্রসঙ্গত, ১৯৯০ এর দশকের শুরু থেকে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে বেশ কয়েক দফায় শান্তি আলোচনা হয়েছে। শান্তি আলোচনায় জেরুজালেমের এক বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। এই শহরটি ইসলাম, ইহুদি ও খ্রিস্টান উভয় ধর্মেরই তীর্থস্থান। ফিলিস্তিনিরা চায় পশ্চিম তীরে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে এবং পূর্ব জেরুজালেমকে এর রাজধানী বানাতে। ১৯৬৭ সালের আরব যুদ্ধের পর থেকে ইসরায়েল পূর্ব জেরুজালেম দখল করে রেখেছে। পূর্ব জেরুজালেমকে নিজেদের অবিভাজ্য রাজধানী বলে দাবি করে থাকে ইসরায়েল। অবশ্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় পূর্ব জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। ১৯৬৭ সালের পর পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে ১শরও বেশি বসতি স্থাপন করেছে ইসরায়েল। আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় এ বসতি স্থাপনকে অবৈধ বলে বিবেচনা করা হলেও ইসরায়েল তা মানতে নারাজ।

সূত্র: ফিন্যানসিয়াল টাইমস।

/এসএ/