উত্তেজনা বাড়িয়ে চীনা বিমানবাহী জাহাজের তাইওয়ান প্রণালি পাড়ি

দক্ষিণ চীন সাগরে মহড়া শেষে জাহাজটি ফিরছিলদক্ষিণ চীন সাগরে মহড়া শেষে চীনের একমাত্র বিমানবাহী জাহাজটি তাইওয়ান প্রণালি পাড়ি দিয়েছে বলে দাবি করেছেন তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। দ্য লিয়াওনিং নামের জাহাজটি বেশ কয়েকটি যুদ্ধজাহাজকে নেতৃত্ব দিচ্ছে বলেও জানানো হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ফোনে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলার পর এবং এক চীন নীতি নিয়ে প্রশ্ন তোলার পর নতুন করে চীন ও তাইওয়ানের মধ্যে উত্তেজনা শুরু হয়। সম্প্রতি তাইওয়ানের প্রেসিডেন্টের যুক্তরাষ্ট্রে যাত্রাবিরতি এবং রিপাবলিকানদের সঙ্গে বৈঠকের ঘটনায় উত্তেজনা আরেক ধাপ বেড়ে যায়। আর এর মধ্যেই চীনা জাহাজের উপস্থিতি সে উত্তেজনাকে আরও বাড়াবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, চীনের বিমানবাহী জাহাজটি তাইওয়ানের পানিসীমায় প্রবেশ না করলেও সেখানকার বিমান প্রতিরক্ষা শনাক্তকরণ অঞ্চল (এডিআইজেড) অতিক্রম করেছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, এর মধ্য দিয়ে দ্বিপাক্ষিকভাবে চলমান উত্তেজনা আরও জোরালো হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে লোকজনকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছে তাইওয়ানিজ কর্তৃপক্ষ।

তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র চেন চুং চি ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানান, চীনা বহরের উপস্থিতির প্রতিক্রিয়া হিসেবে ১৬০ কিলোমিটার প্রশস্ত প্রণালিতে নজরদারির জন্য তাইওয়ানের জেট বিমান ও জাহাজ মোতায়েন করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, আনুষ্ঠানিকভাবে তাইওয়ান ও চীন উভয়েই চীনকে নিজেদের দেশ বলে  মনে করে। ফলে উভয় দেশেই একে অপরের ভূখণ্ডের মালিকানা দাবি করে। এতেই সমস্যার শুরু। যা কয়েক দশক ধরে যুদ্ধের হুমকি সৃষ্টি করেছে। এ বিরোধের সূত্রপাত শুরু হয় ১৯২৭ সালে। যখন চীনজুড়ে গৃহযুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে। মাও সে তুং নেতৃত্বাধীন কমিউনিস্ট বিপ্লবীরা ১৯৪৯ সালে জাতীয়তাবাদী সরকারকে উৎখাতের মধ্য দিয়ে এ গৃহযুদ্ধের অবসান হয়। ওই সময় জাতীয়তাবাদী নেতারা পালিয়ে তাইওয়ান যান। এখনও ওই শক্তিই তাইওয়ান নিয়ন্ত্রণ করে। প্রাথমিকভাবে ওই সময় যুদ্ধ বন্ধ হয়ে পড়লেও উভয় দেশই নিজেদের চীনের দাবিদার হিসেবে উত্থাপন শুরু করে। তাইওয়ানভিত্তিক সরকার দাবি করে, চীন কমিউনিস্ট বিপ্লবীদের দ্বারা অবৈধভাবে দখল হয়েছে। আর বেইজিংভিত্তিক চীনের সরকার তাইওয়ানকে বিচ্ছিন্নতাকামী প্রদেশ হিসেবে বিবেচনা করে।

এ বিরোধের জের ধরে বলা যায়, চীনের গৃহযুদ্ধ সম্পূর্ণ অবসান হয়নি আজও। তারওপর তাইওয়ানের নাম আনুষ্ঠানিকভাবে রিপাবলিক অব চায়না। কমিউনিস্ট সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন চীন সরকারের নাম পিপলস রিপাবলিক অব চায়না।

এ বিরোধটি স্নায়ু যুদ্ধের সময় আন্তর্জাতিক ইস্যুতে পরিণত হয়। ওই সময় সোভিয়েত ইউনিয়ন কমিউনিস্ট নিয়ন্ত্রণাধীন সরকারকে চীনের বিধিসম্মত সরকার হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানের জাতীয়তাবাদীদের স্বীকৃতি দেয়। ওই সময় এমনকি জাতিসংঘে চীনের আসনগুলো ছিলো তাইওয়ানেরই দখলে।

১৯৭০ দশকে এসে বিশ্ব বিভক্ত চীনকে গ্রহণ করতে শুরু করে। ১৯৭১ সালে জাতিসংঘে আসন ফিরে পায় চীন। তার পরের বছর মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড এম. নিক্সন চীন সফর করেন। ১৯৭৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানের পরিবর্তে বেইজিংকে স্বীকৃতি দেয়। বিশ্বের অপর দেশগুলোও যুক্তরাষ্ট্রকে অনুসরণ করে বেইজিংকে স্বীকৃতি দেয়। 

/এফইউ/