মৃত্যুর ২০ বছর পর ফিরছেন ডায়না!

প্রিন্সেস ডায়নামৃত্যুর ২০ বছর পর যেন বাড়ি ফিরছেন বিদ্রোহী ব্রিটিশ রাজবধূ প্রিন্সেস ডায়না। যেন শিগগির তাবে দেখতে পাবে তার সন্তান এবং নাতি-নাতনিরা। কে না জানে, মৃত্যু যেখানে চিরায়ত বাস্তব, সেখানে ডায়নার মানবরূপে ফেরা অসম্ভব। তাই ভাস্কর্য নির্মাণের মাধ্যমে তার স্মৃতিকে উজ্জ্বল করতে চাইছেন দুই ছেলে প্রিন্স উইলিয়াম এবং প্রিন্স হ্যারি। 

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, কেনসিংটন প্যালেসে প্রিন্সেস অব ওয়েলসের একটি ভাস্কর্য নির্মিত হতে যাচ্ছে। এটি তৈরি করা হচ্ছে প্রিন্স উইলিয়াম এবং প্রিন্স হ্যারির অনুরোধে। আশা করা হচ্ছে চলতি বছরের শেষদিকে এর নির্মাণ কাজ শেষ হবে। চলতি বছরের আগস্টে প্রিন্সেস ডায়নার ২০ তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা হবে।

ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিরোধ জারি করেছিলেন ডায়না। রাজপ্রাসাদ ছেড়েছিলেন। ছেলেদের নিয়ে বের হয়ে এসেছিলেন একা। দাঁড়িয়েছিলেন মানুষের পাশে।

১৯৯৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে ল্যান্ড মাইন ও এইডস বিরোধী আন্দোলন জোরদার করতে দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট ও নোবেল বিজয়ী নেলসন মেন্ডেলাসহ কাজ শুরু করেছিলেন। কিন্তু দুঃর্ভাগ্য ১৯৯৭ সালের আগস্ট মাসের শেষ দিনেই মাত্র ৩৬ বছর বয়সে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় তার জীবনের অবসান ঘটে।

ডায়না ১৯৬১ সালের ১ জুলাই ইংল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম লর্ড স্পেনসর ও মাতার নাম ফ্রান্সেস স্যান্ডাকিড। ২০ বছর বয়সে ১৯৮১ সালের ২৯ জুলাই ইংল্যান্ডের রাজকুমার প্রিন্স চার্লসের সঙ্গে ডায়নার বিয়ে এবং  ১৯৯৬ সালের ২৮ আগস্ট বিচ্ছেদ ঘটে। বিচ্ছেদের পূর্বেই তিনি তার দুই ছেলে প্রিন্স উইলিয়াম ও প্রিন্স হ্যারিকে নিয়ে রাজপ্রাসাদ ছাড়েন।

মৃত্যুর পর তার শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে লন্ডনের রাস্তায় নজীর বিহীন জনতার ঢল নামে যা সামলাতে ৩০ হাজার পুলিশ মোতায়েন করতে সমগ্র ব্রিটেনে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয় এবং হাজার বছরের ঐতিহ্য ভঙ্গ করে প্রথমবারের মত বাকিংহাম রাজ প্রাসাদের উপর উড্ডিয়মান রাজপতাকা নামানো হয়। তার পর প্রসাদের উপর উড্ডিয়মান ‘ইউনিয়ন জ্যাক’ অর্ধনির্মিত করা হয় যা রাজা বা রাণীর মৃত্যু হলেও অর্ধনির্মিত করা হয় না।

ক্যামেরার চোখ সব সময় খুঁজত ডায়ানাকে। যেখানেই যেতেন সেখানেই ওতপেতে তাকা ক্যামেরাম্যানদের আলোর ঝলক চোখ ধাঁধিয়ে দিত ডায়ানা। এই ক্যামেরা অত্যাচার চালাত পাপারাজ্জিরা। তারাই ডায়ানার ব্যক্তিগত জীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছিলেন।  বিয়ের আগের বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে ডায়ানার প্রেমময় ফোনালাপ ফাসের এক পর্যায়ে বিয়ে বিচ্ছেদ হয়। আবার নতুন করে প্রেমে জড়াচ্ছেন, একান্তে কারও সঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন— এসব গুজব তাড়া করতে শুরু করে তাকে।

বিয়ের পর ডায়ানা কার সঙ্গে প্রেম করছেন, তার ব্যক্তিগত জীবনের ছবি তুলতে মরিয়া হয়ে ওঠে পাপারাজ্জির দল। সমুদ্র সৈকতে নতুন প্রেমিকের সঙ্গের ছবি প্রকাশের পর পাপারাজ্জিদের চোখ ফাঁকি দিতে লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকার চেষ্টা ছিল ডায়ানার। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। ১৯৯৭ সালের ৩১ আগস্ট পাপারাজ্জিদের তাড়া খেয়ে পালানোর চেষ্টা করেন ব্রিটেনের সুন্দরী রাজপুত্রবধূ ডায়ানা ও তার প্রেমিক। ডায়ানা ও দোদি কালো রঙের মার্সিডিজ এস২৮০ গাড়িতে ছিলেন।

দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান প্রিন্সেস ডায়ানা, তার বন্ধু দোদি ও গাড়িচালক হেনরি পল। ডায়ানার মৃত্যুর পরই নানা রহস্য বেরিয়ে আসতে শুরু করে। এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্যপ্রমাণ বলছে, সড়ক দুর্ঘটনায় বন্ধু দোদি আল-ফাহাদসহ তার মৃত্যু হয়েছিল। বিবিসি, গার্ডিয়ান, টেলিগ্রাফ স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের হাতে আসা কিছু তথ্যের বরাত দিয়ে একে হত্যাকাণ্ড বলছিলো । দোদির বাবা মোহাম্মদ ফায়েদও চেষ্টা করেছিলেন ওই দুর্ঘটনাটিকে হত্যাকাণ্ড বলে প্রমাণের।  তাছাড়া মৃত্যুর কয়েক মাস আগে বিবিসির প্যানোরমা অনুষ্ঠানে ব্রিটিশ রাজপরিবারের কঠোর সমালোচনা করেছিলেন ডায়ানা। তার সঙ্গে এই দুর্ঘটনার সম্পর্ক রয়েছে কিনা এমন সংশয় পোষণ করেন অনেকে।

/বিএ/