ইসরায়েলি বসতি সম্প্রসারণ আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন: জাতিসংঘ

আন্তোনিও গুতেরেসঅধিকৃত পশ্চিমতীরে বসতি সম্প্রসারণকে বৈধতা দিয়ে ইসরায়েলি পার্লামেন্টে (নিসেট) পাস হওয়া বিলের তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে জাতিসংঘ। মঙ্গলবার জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ওই বিলকে ‘আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন’ বলে উল্লেখ করেছেন।

গুতেরেস বলেন, ইসরায়েল ওই বিল পাস করায় তিনি ‘গভীরভাবে মর্মাহত’। তিনি আরও জানান, বিলটিকে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন দ্বন্দ্ব নিরসনে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান, বা ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনে আরেক দফা আঘাত হিসেবেই দেখছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার।  

এক বিবৃতিতে গুতেরেস বলেন, ‘এই বিল আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।’ তিনি এমন পদক্ষেপকে ‘দ্বি-রাষ্ট্র সপমাধান’-এর অন্তরায় বলেও উল্লেখ করেন। বিতর্কিত বিষয়গুলো আলোচনার মাধ্যমে সমাধানেরও আহ্বান জানান তিনি।

আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলের বসতি নির্মাণের বিষয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।  

আন্তর্জাতিক আইনে পশ্চিমতীর, পূর্ব জেরুজালেম বা গাজায় ইসরায়েলি বসতি নির্মাণ অবৈধ। আর একে শান্তি প্রক্রিয়ার পথে সবচেয়ে বড় বাধা বলে মনে করা হয়।

সোমবার ইসরায়েলি নিসেটে ৬০ সদস্যের মধ্যে ৫২ জন বিলটির পক্ষে ভোট দেন।

ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলি বসতি

বিলটি পাসের পরই এর নিন্দা জানিয়েছে প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন (পিএলও)। তাদের অভিযোগ, এই আইন পাসের মাধ্যমে ইসরায়েলিরা তাদের জমি চুরিকে বৈধ করলো। এ ধরনের পদক্ষেপ দুই দেশের মধ্যে কোনও রাজনৈতিক ফয়সালার পথকে রুদ্ধ করে দেবে বলেও সতর্ক করেছে তারা।

এদিকে, ওই বিলের বিরুদ্ধে জাতিসংঘ মহাসচিব নিজের স্পষ্ট অবস্থান প্রকাশ করলেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি।  

ফিলিস্তিনের পশ্চিমতীরে ইসরায়েলি বসতি স্থাপন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্পের অবস্থান তার পূর্বসূরি বারাক ওবামার তুলনায় অনেকটাই সহনশীল। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ফিলিস্তিনে বসতি স্থাপনের বিষয়ে আন্তর্জাতিক নিন্দা ও চাপকেও উপেক্ষা করছে ইসরায়েল। ট্রাম্প প্রশাসনের হাতে ক্ষমতা যাওয়ার পর গত কয়েক সপ্তাহে বেশ কয়েকটি বসতিতে কয়েক দফা নতুন করে ঘর-বাড়ি নির্মাণের প্রস্তাব অনুমোদন করেছে ইসরায়েলি সরকার।

উল্লেখ্য, ১৯৯০ এর দশকের শুরু থেকে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে বেশ কয়েক দফায় শান্তি আলোচনা হয়েছে। ফিলিস্তিনিরা চায় পশ্চিম তীরে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে এবং পূর্ব জেরুজালেমকে এর রাজধানী বানাতে। ১৯৬৭ সালের আরব যুদ্ধের পর থেকে ইসরায়েল পূর্ব জেরুজালেম দখল করে রেখেছে। পূর্ব জেরুজালেমকে নিজেদের অবিভাজ্য রাজধানী বলে দাবি করে থাকে ইসরায়েল। অবশ্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় পূর্ব জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। ১৯৬৭ সালের পর পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে ১শরও বেশি বসতি স্থাপন করেছে ইসরায়েল। পশ্চিম তীর এবং পূর্ব জেরুজালেমে স্থাপিত প্রায় ১৪০টি বসতিতে ৬ লাখেরও বেশি ইসরায়েলি বসবাস করে। আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় এ বসতি স্থাপনকে অবৈধ বলে বিবেচনা করা হলেও ইসরায়েল তা মানতে চায় না।

সূত্র: এএফপি, ফ্রান্স২৪।

/এসএ/বিএ/