মিয়ানমারে ফিরছে কিছু রোহিঙ্গা!

nonameমিয়ানমারের সরকার ও সেনাবাহিনীর জাতিগত নিধন প্রক্রিয়ার বলি হয়ে সদ্য বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের একাংশ সম্প্রতি দেশে ফিরে যাচ্ছেন। অস্থায়ী ক্যাম্পের বাসিন্দা এবং কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি খবরটি নিশ্চিত করেছে। তারা জানিয়েছে, সদ্য আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের সাপেক্ষে ফিরে যাওয়াদের সংখ্যা খুবই নগণ্য।

ক্যাম্পের একজন বাসিন্দা বিবিসিকে বলেছেন, গত দু সপ্তাহে একটি ক্যাম্প থেকে শ পাঁচেক রোহিঙ্গা শরণার্থী মিয়ানমারে ফিরে গেছে। তবে কক্সবাজার এলাকায় আশ্রয় নেয়া হাজার হাজার রোহিঙ্গা মুসলিম পরিবারের তুলনায় এ সংখ্যা অতিশয় নগন্য। কিন্তু কর্মকর্তারা বলছেন, আন্তর্জাতিক নাফ নদীর ওপারে রাখাইন রাজ্যের সহিংস পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়ে আশায় গত এক সপ্তাহ ধরে তারা এই প্রবণতাটি লক্ষ্য করছেন।

কক্সবাজারের কুতুপালংয়ে একটি অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পের দীর্ঘ দিনের বাসিন্দা আবু সিদ্দিক বলছেন, গত দুই সপ্তাহে তাদের ক্যাম্প থেকে শ পাঁচেক রোহিঙ্গা শরণার্থী মিয়ানমারে ফিরে গেছে। গত অক্টোবর মাস থেকে এই ক্যাম্পটিতে এসে এখন পর্যন্ত এসে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীর সংখ্যা ত্রিশ হাজারের বেশী।  সিদ্দিক বলছেন, ‘মূলত যেসব পুরুষেরা পরিবারের অন্য সদস্যদের মিয়ানমারে রেখে পালিয়ে এসেছিল তারাই ফিরে যাচ্ছে। এদের একটা ধারণা হয়েছে, সেখানে পরিস্থিতি এখন শান্ত হয়েছে, তাদের পরিবারের সদস্যরা সেখানে রয়ে গেছে এবং তাদের সহায় সম্পত্তি আছে, সেগুলোর খোঁজ খবর করতেই তারা যাচ্ছে।‘

টেকনাফে বিজিবির কমান্ডার লে. কর্নেল আবুজার আল জাহিদ বিবিসিকে বলেন, সম্প্রতি রাখাইন প্রদেশে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়ে আসার প্রেক্ষাপটে অনেক রোহিঙ্গা ফিরছেন। তবে কি পরিমাণ ফেরত যাচ্ছে তার সঠিক পরিসংখ্যন নেই। তবে ফেরৎ যাওয়ার একটি প্রবণতা পরিলক্ষিত হবার কথা স্বীকার করছেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক আলী হোসেন। তিনি বলছেন, সপ্তাহখানেক ধরে এই প্রবণতাটা তারা দেখছেন। তবে এই সংখ্যাটা একেবারেই নগণ্য, উল্লেখ করার মত নয়।’ তিনিও রাখাইনের পরিস্থিতি শান্ত হওয়াকে কারণ বলে উল্লেখ করেন।

তবে কক্সবাজারের সাংবাদিক তোফায়েল আহমেদ বিবিসির কাছে দাবি করেন,   বাংলাদেশের সরকার রোহিঙ্গাদের ঠেঙ্গারচরে পাঠানোর যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটি অনেক রোহিঙ্গার মনঃপুত না হওয়ায় তারা ফিরে যাচ্ছে।

এ বছর অক্টোবর মাসের ৯ তারিখে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ এলাকায় সন্ত্রাসীদের সমন্বিত হামলায় ৯ পুলিশ সদস্য নিহত হওয়ার পর তার দায় চাপানো হয় রোহিঙ্গাদের ওপর। আর তখন থেকেই শুরু হয় সেনাবাহিনীর দমন প্রক্রিয়া। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের দাবি, এরপর থেকেই রাখাইন রাজ্যে 'ক্লিয়ারেন্স অপারেশন' চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। রোহিঙ্গা মুসলমানদের ইসলামি চরমপন্থা দমনে কাজ করছেন বলে দাবি করছিলেন তারা। আর চলতি সপ্তাহের বুধবার মিয়ানমারে নবনিযুক্ত জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা থাউং তুনকে উদ্ধৃত করে স্টেট কাউন্সেলর কার্যালয় থেকে  প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়, রাখাইনে পরিস্থিতি বর্তমানে স্থিতিশীল হয়েছে। সেনাবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত ‘ক্লিয়ারেন্স অপারেশন’ শেষ হয়েছে। কারফিউ শিথিল করা হয়েছে এবং শান্তি রক্ষার্থে কেবল পুলিশ নিয়োজিত রাখা হয়েছে।

বুধবার মিয়ানমার প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের দুই কর্মকর্তা ও তথ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা রাখাইন অভিযানের পরিসমাপ্তি নিশ্চিত করেছে। তবে শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা করতে সেনাবাহিনী নিয়োজিত আছে বলে তারা জানিয়েছেন।

জাতিসংঘ এরইমধ্যে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে জাতিগতভাবে নির্মূল করার অভিযোগ এনেছে। তাদের বিরেুদ্ধে মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডেরও অভিযোগ তোলা হয় দুই দফায়। সংঘর্ষে রাখাইন রাজ্যের মৃতের সংখ্যা ৮৬ জন বলে জানিয়েছে তারা। জাতিসংঘের হিসাব মতে, এখন পর্যন্ত ঘরহারা হয়েছেন ৩০ হাজার মানুষ। পালাতে গিয়েও গুলি খেয়ে মৃত্যু হয়েছে তাদের।

/বিএ/