বিষক্রিয়ায় কয়েক মিনিটেই মৃত্যু হয় কিম জং-উনের

 

nonameকুয়ালালামপুর বিমানবন্দরে রাসায়নিক ভিএক্স এর ক্রিয়ায়  ১৫ থেকে ২০ মিনিটের মধ্যেই প্রাণ হারিয়েছিলেন উ. কোরিয়ার নেতা কিম জং-উনের সৎভাই কিম জং-ন্যাম । মালয়েশিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রী সুব্রামানিয়াম সত্যশিব দাবি করেছেন, ন্যামকে খুবই উচ্চমাত্রায় ভিএক্স দেওয়া হয়েছিল। এতেই ব্যথায় দ্রুত তার মৃত্যু ঘটে।  স্বাস্থ্যমন্ত্রী সুব্রামানিয়াম বলেছেন, ন্যামের দেহের ময়নাতদন্ত থেকে এমনটিই ধারণা করা হচ্ছে।

সত্যশিব জানান, ন্যামের মুখে ওই পদার্থ ছিটিয়ে দেওয়ার প্রায় ১৫ থেকে ২০ মিনিটের মধ্যেই তার মৃত্যু ঘটে। ন্যামের শেষ মুহূর্তগুলো খুবই ‘যন্ত্রণাদায়ক’ ছিল বলেও জানিয়েছেন তিনি। ক্লিনিকে তিনি অচেতন হয়ে গিয়েছিলেন । হাসপাতালে নেওয়ার সময় অ্যাম্বুলেন্স থেকে তাকে বের করার সময়ই নিহত হয়েছিলেন তিনি। তিনি জানান, কোনও প্রতিষেধক দিয়েই এত উচ্চমাত্রার বিষক্রিয়া প্রতিহত করা যেত না ।

উল্লেখ্য, ১৩ ফেব্রুয়ারি মালয়েশিয়ার কুয়ালা লামপুর বিমানবন্দরে উত্তর কোরীয় নেতা কিম জং উনের সৎ ভাই কিম জং নামকে বিষপ্রয়োগে হত্যা করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, তিনি মালয়েশিয়া থেকে ম্যাকাও যাওয়ার জন্য বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে থাকার সময় দু’জন নারী তার মুখে বিষাক্ত কেমিক্যাল স্প্রে করেন। সেই সঙ্গে এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার সন্দেহে মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষ উত্তর কোরিয়া দূতাবাসের এক কর্মকর্তাকে খুঁজছে। মালয়েশিয়ার বিরুদ্ধে ‘প্রতিকূল আচরণ’ এবং দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে ‘যোগসাজশ’ করার অভিযোগ তুলে কিম জং নাম হত্যার তদন্ত বন্ধের দাবি জানিয়েছে উত্তর কোরিয়া।

মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষ বলেছে, এরপর  লাশের পরিচয় নিশ্চিত হতে তাদের একটি ডিএনএ নমুনা দরকার। স্বাস্থ্যমন্ত্রী সত্যশিব বলেন, ‘আমরা একবার মৃত ব্যক্তির পরিচয় নিশ্চিত হতে পারলেই আমাদের কাজ শেষ হবে।’ ন্যামকে ১০ মিলিগ্রামের বেশি জাতিসংঘের নিষিদ্ধ ঘোষিত গণবিধ্বংসী রাসায়নিক অস্ত্র ‘ভিএক্স নার্ভ এজেন্ট’ দেওয়া হয়েছিল বলে মনে করছেণ তিনি।

উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা কেসিএনএ ওই হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে তাদের প্রতিবেদনে সরাসরি কিম জং নাম বা তার সঙ্গে দেশটির নেতা কিম জং উনের সম্পর্কের কথা উল্লেখ না করে, তাকে ‘একজন উত্তর কোরীয় নাগরিক’ বলে নির্দেশ করেছিল। কেসিএনএ-তে উত্তর কোরিয়ার জাতীয় কমিটির এক পদস্থ কর্মকর্তা অভিযোগ করেন, ‘মালয়েশিয়া দ্রুত তার অবস্থান পরিবর্তন করে এই বিষয়টিকে জটিল করে তুলছে।’  তিনি আরও দাবি করেন, ‘দক্ষিণ কোরীয় কর্তৃপক্ষ উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্র গড়ে তুলেছে, মালয়েশিয়ার এই অনৈতিক অবস্থানের ফলে তা আমাদের জন্য আরও উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে।’  

ওই উ. কোরীয় কর্মকর্তা মালয়েশিয়ার দায়বদ্ধতাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে বলেন, ‘তার (কিম জং নাম) হত্যার সবচেয়ে বড় দায় মালয়েশিয়ার, কারণ একজন উত্তর কোরীয় নাগরিক তাদের ভূখণ্ডে নিহত হয়েছেন।’ কেসিএনএন প্রতিবেদনে মালয়েশিয়ার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে কূটনৈতিক পাসপোর্টধারী কোনও ব্যক্তির ময়নাতদন্ত করারও অভিযোগ তোলা হয়। সেই সঙ্গে দ্রুত তদন্তের কাজ থামিয়ে ‘প্রতিকূল আচরণ’ বন্ধের আহ্বান জানানো হয়। 

এর আগে বুধবার কুয়ালা লামপুরে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে মালয়েশীয় পুলিশ প্রধান খালিদ আবু বকর জানান, এখন পর্যন্ত ওই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার সন্দেহে চার উত্তর কোরীয় নাগরিকের কথা সামনে এসেছে। তাদের মধ্যে তিনজন এখনও মালয়েশিয়ায় রয়েছেন এবং চতুর্থ সন্দেহভাজন মালয়েশিয়া থেকে পিয়ংইয়ং ফিরে গেছেন বলে খালিদ আবু বকর উল্লেখ করেন।

/বিএ/