তুরস্ক-নেদারল্যান্ডসকে পারস্পরিক শ্রদ্ধা প্রদর্শনের আহ্বান ন্যাটোর

জিন্স স্টোলটেনবার্গইউরোপের দুই দেশ তুরস্ক ও নেদারল্যান্ডসের মধ্যকার চলমান উত্তেজনায় উভয়পক্ষকে পারস্পরিক শ্রদ্ধা দেখানোর আহ্বান জানিয়েছে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটো। ১৩ মার্চ ২০১৭ সোমবার বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসের ন্যাটো সদর দফতরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ আহ্বান জানান সংস্থাটির মহাসচিব জিন্স স্টোলটেনবার্গ।

ন্যাটা মহাসচিব বলেন, শক্তিশালী বিতর্ক আমাদের গণতন্ত্রের কেন্দ্রবিন্দু। কিন্তু একইসঙ্গে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধও গুরুত্বপূর্ণ। আমি সব মিত্র দেশকে এই শ্রদ্ধাবোধ দেখাতে উৎসাহিত করবো। এ সময় তিনি উভয় পক্ষকে শান্ত থাকার আহ্বান জানান।

জিন্স স্টোলটেনবার্গ বলেন, এ বিষয়ে আমি উভয় পক্ষের সঙ্গেই কথা বলেছি। তুরস্ক ও নেদারল্যান্ডসের উচিত উত্তেজনা আরও না বাড়িয়ে বরং আমাদের ঐক্যবদ্ধ করে এমন বিষয়গুলোর প্রতি নজর দেওয়া।

এদিকে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান বলেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের কিছু দেশ উদীয়মান শক্তি হিসেবে তুরস্কের উত্থানকে সহ্য করতে পারছে না। সোমবার এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ মন্তব্য করেন।

তুরস্কে বিদ্যমান পার্লামেন্টারি পদ্ধতির পরিবর্তে প্রেসিডেন্ট পদ্ধতির সরকারব্যবস্থা চালু করতে আগ্রহী দেশটির ক্ষমতাসীন দল জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি। এ লক্ষ্যে আগামী ২০১৭ সালের ১৬ এপ্রিল তুরস্কে গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। এ ইস্যুতে নেদারল্যান্ডসে বসবাসরত তুর্কি নাগরিকদের মধ্যে প্রচারণা চালাতে চেয়েছিল তুর্কি সরকার। তবে এ ইস্যুতে তুর্কি মন্ত্রীদের প্রচারণা নিষিদ্ধের পর সম্প্রতি দেশটির সঙ্গে উত্তেজনা তৈরি হয় তুরস্কের।

চলতি মাসেই তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগলু’কে নেদারল্যান্ডসের রটারডেম শহরে প্রবেশ নিষিদ্ধ করে শহর কর্তৃপক্ষ। পরে দেশটির পরিবার ও সামাজিক নীতি বিষয়ক মন্ত্রী ফাতমা বেতুল সায়ান কায়া’কেও সেখানকার তুর্কি কনসুলেটে প্রবেশ আটকে দেয় ডাচ পুলিশ। এর প্রতিবাদে নেদারল্যান্ডসে বসবাসরত তুর্কি নাগরিকদের বিক্ষোভে লাঠিচার্জ করে ডাচ পুলিশ। জলকামান ব্যবহার করে তুর্কি নাগরিকদের বিক্ষোভ দমন করে নেদারল্যান্ডের কর্তৃপক্ষ।

লাঠিচার্জ ও জলকামান ব্যবহার করে নেদারল্যান্ডসে বসবাসরত তুর্কি নাগরিকদের বিক্ষোভ দমন করে দেশটির কর্তৃপক্ষ

গণভোটের পক্ষে র‌্যালিতে নিষেধাজ্ঞা ও তুর্কি মন্ত্রীকে প্রচারণা চালানোর অনুমতি না দেওয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেপ এরদোয়ান। তিনি বলেছেন, এ ধরনের আচরণের জন্য নেদারল্যান্ডসকে অবশ্যই মূল্য দিতে হবে। তাদের শিখতে হবে কূটনীতি কী। আমরা তাদের আন্তর্জাতিক কূটনীতি শিক্ষা দিয়ে ছাড়বো।’

এর আগে জার্মানি ও নেদারল্যান্ডসকে ‘নাৎসিবাদী ও ফ্যাসিবাদী’ আখ্যা দিয়ে এরদোয়ান বলেন, শুধু ওই ধরনের সরকারই বিদেশি মন্ত্রীদের সফর নিষিদ্ধ করতে পারে। আমি ভেবেছিলাম, নাৎসিবাদ শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু এটি ভুল। পশ্চিমে এখনও নাৎসিবাদ জীবন্ত। তারা ইসলামোফোবিয়ায় আক্রান্ত।

এদিকে নেদারল্যান্ডসকে ‘নাৎসিবাদী ও ফ্যাসিবাদী’ হিসেবে আখ্যায়িত করায় এরদোয়ানের কঠোর সমালোচনা করেছেন ডাচ প্রধানমন্ত্রী মার্ক ‍রুতে। তিনি বলেছেন, এমন মন্তব্য কোনওভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এরদোয়ানকে এর জন্য ক্ষমা চাইতে হবে। সূত্র: আল জাজিরা, বিবিসি, আনাদোলু এজেন্সি।

/এমপি/