ইসরায়েল জাতিবিদ্বেষী রাষ্ট্র: জাতিসংঘ প্রতিবেদন

প্রতিনিয়ন নিপীড়ন আর শোষণের মুখে রয়েছে ফিলিস্তিনিরাজাতিসংঘের একটি প্রতিবেদনে ইসরায়েলকে ‘জাতিবিদ্বেষী রাষ্ট্র’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বুধবার প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েল বর্ণবৈষম্যের ভিত্তিতে ফিলিস্তিনিদের ওপর এক জাতিবিদ্বেষী ব্যবস্থা চাপিয়ে দিয়েছে। এর আগে বিভিন্ন সময়ে ইসরায়েলকে সমালোচনা করলেও এবারই প্রথম জাতিসংঘের কোনও কমিশন ইসরায়েলকে সরাসরি ‘জাতিবিদ্বেষী রাষ্ট্র’ বলে অভিহিত করেছে।

জাতিসংঘের ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল কমিশন ফর ওয়েস্টার্ন এশিয়ার (ইএসসিডব্লিউএ) ওই প্রতিবেদনের শেষে বলা হয়, ‘সমগ্র ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর ইসরায়েল এক জাতিবিদ্বেষী ব্যবস্থা কায়েম করেছে।’

ওই জাতিসংঘ কমিশনের প্রধান রিমা খালাফ বলেছেন, ‘প্রতিবেদনে স্পষ্ট করে আরও বলা হয়েছে, ইসরায়েল ফিলিস্তিনি জনগণের উপর নিপীড়ন চালাচ্ছে।’  

পশ্চিম এশিয়ার ১৮ টি আরব দেশে অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে গঠিত হয় এই কমিশনটি। রিমা জানান, সদস্য দেশগুলোর অনুরোধেই ওই প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করা হয়েছে।  

জাতিসংঘের সাবেক মানবাধিকারকর্মী ও যুক্তরাষ্ট্রের সাউদার্ন ইলিনয় ইউনিভার্সিটির সমাজ বিজ্ঞানের অধ্যাপক রিচার্ড ফাল্কের তত্ত্বাবধানে ওই প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। তিনি ২০১৪ সাল পর্যন্ত ফিলিস্তিনে জাতিসংঘের বিশেষ মানবাধিকারকর্মী হিসেবে কাজ করেছেন। সেখান থেকে ফিরে আসার সময় ফাল্ক বলেছিলেন, ‘ইসরায়েলি শাসন ব্যবস্থা ঔপনিবেশিক, জাতিবিদ্বেষী এবং জাতিগত নির্মূলকরণের চরিত্র ধারণ করে।’ তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ইসরায়েলের পক্ষপাতিত্ব করার জন্যও দোষারোপ করেছেন।   

জাতিসংঘের ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল কমিশন ফর ওয়েস্টার্ন এশিয়ার (ইএসসিডব্লিউএ) পতাকা

জাতিসংঘ মুখপাত্র স্তেফান দুজারিক নিউ ইয়র্কে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, মহাসচিবের সঙ্গে কোনও আলোচনা ছাড়াই ওই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘ওই প্রতিবেদনে জাতিসংঘ মহাসচিবের দৃষ্টিভঙ্গীর ফুটে উঠেনি।’

এদিকে, প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ইসরাইল। ইসরায়েলি মুখপাত্র ইমানুয়েল নাশন এক টুইটার বার্তায় বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যের একমাত্র সত্যিকারের গণতান্ত্রিক দেশকে এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে।’ ইসরায়েল সরকার ওই প্রতিবেদনকে ‘নাৎসি কায়দায় অপপ্রচার’ বলেও উল্লেখ করেছে।

প্রতিবেদন প্রকাশের পর ইসরায়েলের প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্রও ক্ষোভ জালিয়েছে। তারা প্রতিবেদনটি প্রত্যাহারের দাবিও জানিয়েছে। জাতিসংঘে মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিক্কি হ্যালি এক বিবৃতিতে জানান, ‘জাতিসংঘ কর্তৃপক্ষ ওই প্রতিবেদন থেকে দূরত্ব বজায় রেখে সঠিক কাজ করেছে। তবে তাদের অবশ্যই আরও এগিয়ে ওই প্রতিবেদনটি প্রত্যাহারের ব্যবস্থা নিতে হবে।’

তবে এক প্রতিবেদনেই ইসরায়েলের ‘জাতিবিদ্বেষী’ চরিত্র প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে না। এ প্রসঙ্গে ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ‘বাস্তব প্রমাণের ভিত্তিতে এটা প্রমাণিত হয় যে, ইসরায়েল জাতিবিদ্বেষী অপরাধ করছে। তবে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে আদেশের পরই এই ধারণাটি প্রতিষ্ঠিত হবে।’

সূত্র: রয়টার্স।

/এসএ/