উ. কোরিয়া প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্র-চীন সমঝোতা, বিরোধপূর্ণ ইস্যুগুলো নিয়ে অস্পষ্টতা

nonameমার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন-এর প্রথম এশিয়া সফরে চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের মধ্যেকার বিবাদপূর্ণ ইস্যুগুলো নিয়ে কোনও সুরাহা হয়েছে বলে জানা যায়নি। সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বিবাদপূর্ণ ইস্যুগুলোকে একপাশে রেখে দুই দেশই উত্তর কোরিয়া ইস্যুতে একযোগে কাজ করার ব্যাপারে সমঝোতার কথা জানিয়েছে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স লিখেছে, প্রথম এশিয়া সফরে চীনের কাছ থেকে কেবল উষ্ণ প্রতিশ্রুতিই নিয়ে গেলেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন।

এশিয়ার দেশগুলোতে মার্কিন আধিপত্য জোরদারে প্রকাশ্য বিরোধী অবস্থান রয়েছে চীন এবং উত্তর কোরিয়ার। পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির ওপর কর্তৃত্ব আরোপ করতে বরাবরই বেইজিংকে আমন্ত্রণ জানিয়ে আসছিলো ওয়াশিংটন। অন্যদিকে দক্ষিণ কোরিয়ায় উন্নত প্রযুক্তির ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থা স্থাপনে যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তের প্রতিও ক্ষুব্ধ ছিল চীন। তাছাড়া স্বশাসিত তাইওয়ানের প্রতি যুক্তরাষ্ট্র যে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি দেখাচ্ছে তা নিয়েও সন্দিহান দেশটি। কেননা, তাইওয়ানকে নিজেদের ভূখণ্ড বলে দাবি করে থাকে চীন। অথচ এ তাইওয়ানে অস্ত্র বিক্রির জন্য ট্রাম্প প্রশাসন বড়সড় ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে সম্প্রতি খবর প্রকাশের পর তা বেইজিংকে আরও ক্ষুব্ধ করে তোলে। এমনকি শনিবার টিলারসন বেইজিং-এ পৌঁছানোর আগেও উত্তর কোরিয়ার অস্ত্র কর্মসূচি বন্ধে চীন উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন ট্রাম্প।

এই প্রেক্ষাপটে বেইজিং-এর গ্রেট হল অব দ্য পিপল-এ শি জিনপিং ও টিলারসনের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, ওই বৈঠকে দুইদেশের বিবাদপূর্ণ ইস্যুগুলো এড়িয়ে যেতে দেখা গেছে। অন্তত সাংবাদিকদের সামনে এ ইস্যুগুলো তোলা হয়নি। বরং শি বলেছেন, দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্কের নতুন যুগপর্ব যেন মসৃণ হয় তার জন্য টিলারসন বেশ চেষ্টা করেছেন। শি বলেন, ‘আপনি বলেছেন চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক অনিবার্যভাবেই বন্ধুত্বপূর্ণ হওয়ার কথা। আমি আপনার অবস্থানকে স্বাগত জানাচ্ছি।’

শি’র অবস্থানকে উদ্ধৃত করে চীনের পররাষ্ট্র দফতর জানায়, বেশ কয়েকবার টেলিফোন আলাপ এবং বার্তার মধ্য দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তার যোগাযোগ হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা দুইজনই বিশ্বাস করি যে শেষ পর্যন্ত চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক এমন দিকে চলছে যার জন্য আমরা দুই পক্ষই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’ শি জিনপিং জানিয়েছেন, চীন ও যুক্তরাষ্ট্র উত্তপ্ত আঞ্চলিক ইস্যুগুলোর মধ্যে সমন্বয় জোরালো করবে। একে অপরের কেন্দ্রীয় স্বার্থ এবং প্রধান প্রধান ইস্যুগুলোর প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবে এবং দুই দেশের মধ্যকার বন্ধনের স্থিতিশীলতার সুরক্ষা নিশ্চিত করবে।

এদিকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী টিলারসন জানান, শি-এর সঙ্গে ট্রাম্পের মধ্যে এরইমধ্যে যে যোগাযোগ হয়েছে তাকে খুব মূল্য দিচ্ছেন ট্রাম্প। আর সেই বোঝাপড়াকে আরও জোরালো করতে ভবিষ্যতে চীন সফরে যাওয়ার কথা ভাবছেন তিনি। টিলারসন বলেন, ‘আমরা জানি আরও আলোচনার মধ্য দিয়ে আমরা আরও বড় ধরনের বোঝাপড়ায় পৌঁছাতে পারব যা চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার বন্ধনকে আর শক্তিশালী করার দিকে নিয়ে যাবে এবং ভবিষ্যত সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্কের আবহ তৈরি করবে।’

এর আগে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী রেক্স টিলারসন চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন। দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠকের পর টিলারসন সাংবাদিকদের জানান, চীন ও যুক্তরাষ্ট্র উভয় দেশই গত দুই দশক ধরে উত্তর কোরিয়ার অস্ত্র কর্মসূচির হুমকি কমিয়ে আনতে পারছে না। তিনি বলেন,আমাদের একটি সাধারণ উদ্দেশ্য ও ভাবনা রয়েছে। পেনিনসুলা অঞ্চলে উত্তেজনা চরম অবস্থায় আছে এবং তা বিপজ্জনক উচ্চতায় পৌঁছাচ্ছে। যেকোনও সংঘাত এড়াতে আমরা (চীন-যুক্তরাষ্ট্র) সবকিছু করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছি।’

চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীও আলোচনাকে স্পষ্ট,বাস্তবধর্মী ও সফল বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেন,যাই ঘটুক না কেন,শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য কূটনৈতিক উপায়ে কাজ করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

অনেক ইস্যুতে বিরোধ থাকার পরও টিলাসনের চীন সফরের মধ্য দিয়ে কিছু অগ্রগতি দেখা গেছে। জটিল ইস্যুগুলোকে এক পাশে সরিয়ে রাখতে রাজি রয়েছে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র। অন্তত শি জিনপিং ও ট্রাম্পের মধ্যে পরিকল্পিত বৈঠকের আগ পর্যন্ত হলেও তা বজায় থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে।

/এফইউ/বিএ/