তাইওয়ান ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রকে হুঁশিয়ারি চীনের

nonameতাইওয়ানের কাছে অস্ত্র বিক্রির বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে চীন। ওয়াশিংটন তাইওয়ানে অত্যাধুনিক অস্ত্রের বিশাল চালান পাঠানোর কথা ভাবছে বলে খবর প্রকাশিত হওয়ার পর সোমবার এ হুঁশিয়ারি দেয় বেইজিং। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হুয়া চুনইং বলেন, তাইওয়ানের কাছে অস্ত্র বিক্রির বিষয়ে বেইজিং-এর কঠোর বিরোধিতা অব্যাহত রয়েছে। এ ধরনের অস্ত্র বিক্রির মারাত্মক পরিণতি সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্র পুরোপুরি অবহিত বলে প্রত্যাশা করছে চীন।

ওয়াশিংটনকে এক চীন নীতি মেনে চলার এবং তাইওয়ানের কাছে অস্ত্র বিক্রি না করার আহ্বান জানান হুয়া চুনইং। তিনি বলেন, চীন-মার্কিন সম্পর্ক এবং তাইওয়ান প্রণালীতে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এ নীতি মেনে চলতে হবে।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসনের বেইজিং সফরের একদিন পরই অস্ত্র বিক্রির ওই খবর প্রকাশিত হয়।

হোয়াইট হাউসের দায়িত্ব গ্রহণের আগেই ট্রাম্প যখন তাইওয়ানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ফোনালাপ করেন তখন তিনি এশিয়ার সবচেয়ে দীর্ঘ বিরোধ ও স্পর্শকাতর ইস্যু চীন-তাইওয়ান বিরোধকে পুনরায় জাগিয়ে তোলেন। বিশেষজ্ঞরা শঙ্কিত, এ ফোনালাপের বিরোধটি মীমাংসা করতে যুক্তরাষ্ট্রের কয়েক দশকের মধ্যস্ততা ভূলুণ্ঠিত হতে পারে।

আনুষ্ঠানিকভাবে তাইওয়ান ও চীন উভয়েই চীনকে নিজেদের দেশ বলে  মনে করে। ফলে উভয় দেশেই একে অপরের ভূখণ্ডের মালিকানা দাবি করে। এতেই সমস্যার শুরু। যা কয়েক দশক ধরে যুদ্ধের হুমকি সৃষ্টি করেছে। এ বিরোধের সূত্রপাত শুরু হয় ১৯২৭ সালে। যখন চীনজুড়ে গৃহযুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে। মাও জে দংয়ের নেতৃত্বাধীন কমিউনিস্ট বিপ্লবীরা ১৯৪৯ সালে জাতীয়তাবাদী সরকারকে উৎখাতের মধ্য দিয়ে এ গৃহযুদ্ধের অবসান হয়।

ওই সময় জাতীয়তাবাদী নেতারা পালিয়ে তাইওয়ান যান। এখনও ওই শক্তিই তাইওয়ান নিয়ন্ত্রণ করে। প্রাথমিকভাবে ওই সময় যুদ্ধ বন্ধ হয়ে পড়লেও উভয় দেশই নিজেদের চীনের দাবিদার হিসেবে উত্থাপন শুরু করে। তাইওয়ানভিত্তিক সরকার দাবি করে, চীন কমিউনিস্ট বিপ্লবীদের দ্বারা অবৈধভাবে দখল হয়েছে। আর বেইজিংভিত্তিক চীনের সরকার তাইওয়ানকে বিচ্ছিন্নতাকামী প্রদেশ হিসেবে বিবেচনা করে।

এ বিরোধের জের ধরে বলা যায়, চীনের গৃহযুদ্ধ সম্পূর্ণ অবসান হয়নি আজও। তার ওপর তাইওয়ানের নাম আনুষ্ঠানিকভাবে রিপাবলিক অব চায়না। কমিউনিস্ট সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন চীন সরকারের নাম পিপলস রিপাবলিক অব চায়না। এ বিরোধটি স্নায়ু যুদ্ধের সময় আন্তর্জাতিক ইস্যুতে পরিণত হয়। ওই সময় সোভিয়েত ইউনিয়ন কমিউনিস্ট নিয়ন্ত্রণাধীন সরকারকে চীনের বিধিসম্মত সরকার হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানের জাতীয়তাবাদীদের স্বীকৃতি দেয়। ওই সময় এমনকি জাতিসংঘে চীনের আসনগুলো ছিলো তাইওয়ানেরই দখলে।

১৯৭০ দশকে এসে বিশ্ব বিভক্ত চীনকে গ্রহণ করতে শুরু করে। ১৯৭১ সালে জাতিসংঘে আসন ফিরে পায় চীন। তার পরের বছর মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড এম. নিক্সন চীন সফর করেন। ১৯৭৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানের পরিবর্তে বেইজিংকে স্বীকৃতি দেয়। বিশ্বের অপর দেশগুলোও যুক্তরাষ্ট্রকে অনুসরণ করে বেইজিংকে স্বীকৃতি দেয়। এর ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি চীন সফর করেন ট্রাম্পের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন। সিএনএন-এর খবরে বলা হয়েছে, চলতি বছরের এপ্রিলে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-কে আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্তরাষ্ট্র সফরের আমন্ত্রণ জানানোর পরিকল্পনা করছেন ট্রাম্প। সূত্র: রয়টার্স, বিবিসি।

/এমপি/