‘তুরস্কে ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর গণতন্ত্র ও মানবাধিকার ক্ষুণ্ন হয়েছে’

ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে এরদোয়ান সরকারের বিরুদ্ধেব্রিটেনের পার্লামেন্ট কমিটির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর তুরস্কে ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর দেশটিতে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার ক্ষুণ্ন হয়েছে। এজন্য তুর্কি প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ানের বিভিন্ন পদক্ষেপেরও তীব্র সমালোচনা করা হয়।

শনিবার প্রকাশিত হওয়া ব্রিটিশ পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাসিত তুর্কি তাত্ত্বিক নেতা ফেতুল্লাহ গুলেনের অনুসারীরা ব্যক্তিগতভাবে অভ্যুত্থানে অংশ নিয়েছিলেন। তবে গুলেন আন্দোলনের সঙ্গে এই অভ্যুত্থানের কোনও সংযোগ রয়েছে কিনা, তা নিশ্চিত নয়। অভ্যুত্থানটি গুলেনপন্থীরা দলগতভাবে করার কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

প্রতিবেদনে অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে তুর্কি প্রেসিডেন্টের ভিন্নমত দমনে বিভিন্ন পদক্ষেপের সমালোচনা করা হয়। তুরস্কে গতবছরের জুলাই থেকে চলমান জরুরি অবস্থায় দেশটির ‘গণতন্ত্র ও মানবাধিকার আরও দুর্বল হয়ে পড়ছে’ বলেও উল্লেখ করা হয়।

এরদোয়ানের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ও ভিন্নমতকে দমনের অভিযোগ করে ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ‘এর ফলে তুরস্কের গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি ও মানবাধিকার ক্ষুণ্ন হচ্ছে।’

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির প্রধান ক্রিসপিন ব্লান্ট বলেন, ‘তুরস্ক গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক অংশীদার। তারা এখন এক অস্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘তুরস্ককে আমাদের সমর্থন করতে হবে। এই সমর্থনে তাদের সম্পর্কে আমাদের সমালোচনাও থাকতে হবে। তুর্কিনীতি কেবল তাদের নিজেদের বিষয় নয়। এর সঙ্গে আমাদের যৌথ দীর্ঘমেয়াদী স্বার্থ এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতার বিষয়টি জড়িত।’

উল্লেখ্য, ওই ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর থেকেই তুরস্ক দাবি করে আসছে, এর সঙ্গে ফেতুল্লাহ গুলেনের সংযোগ রয়েছে। তবে গুলেন তা প্রথম থেকেই অস্বীকার করে আসছেন। তুরস্কের পক্ষ থেকে মার্কিন সরকারের কাছে গুলেনকে তুরস্কে ফেরত পাঠানোর দাবিও করা হয়েছে।    

এখন পর্যন্ত অভ্যুত্থান প্রচেষ্টায় যুক্ত থাকার অভিযোগে ৩৭ হাজারেরও বেশি মানুষকে কারাবন্দি করা হয়েছে। এক লাখেরও বেশি সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত ও বরখাস্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে সেনা, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাসহ বেসামরিক প্রশাসন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং সাংবাদিকও রয়েছেন। অনলাইন, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মাধ্যমের অন্তত ১৫০টি সংবাদমাধ্যম বন্ধ করে দেওয়া হয় ওই ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর। 

প্রসঙ্গত, গত বছর ১৫ জুলাই সন্ধ্যায় তুর্কি সেনাবাহিনীর একাংশ অভ্যুত্থান ঘটিয়ে দেশের শাসনভার নেওয়ার দাবি করে, যা দেশটির টেলিভিশনে প্রচার করা হয়। মধ্যরাতে ক্ষমতা দখলের ঘোষণা দিয়ে তুরস্কের ডানপন্থী সরকার উচ্ছেদের দাবি করে দেশটির সেনাবাহিনীর একাংশ। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারিত এক বিবৃতিতে তারা জানায়, ‘গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও মানবাধিকার রক্ষার স্বার্থে’ সশস্ত্র বাহিনী তুরস্কের ক্ষমতা দখল করেছে। টেলিভিশনের পর্দায় পড়ে শোনানো ওই বিবৃতিতে বলা হয়, এখন ‘শান্তি পরিষদ’ দেশ চালাবে এবং কারফিউ ও সামরিক আইন জারি থাকবে। একই সঙ্গে তুরস্কের বিদ্যমান বৈদেশিক সব সম্পর্ক বহাল থাকবে এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা প্রাধান্য পাবে। কারফিউর বিরোধিতা করে এরদোয়ানের সমর্থকরা রাস্তায় নেমে এলে সংঘর্ষ শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত সামরিক বাহিনীর সব অংশের সমর্থন না থাকায় এবং ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের তৎপরতায় জনগণ রাস্তায় নেমে এলে বিদ্রোহী সেনাদের উদ্যোগ ভেস্তে যায়।

সূত্র: আলজাজিরা।

/এসএ/