দুই শতাধিক বেসামরিক ইরাকি নিহতের ঘটনায় মার্কিন কমান্ডারের ‘দায় স্বীকার’

মসুলে মার্কিন নেতৃত্বাধীন যৌথবাহিনীর বিমান হামলায় দুই শতাধিক বেসামরিক ইরাকি নিহতের ঘটনায় যে বিস্ফোরণকে দায়ী করা হচ্ছে, সেই বিস্ফোরণের পেছনে ‘সম্ভবত’ মার্কিন নেতৃত্বাধীন যৌথ বাহিনীরও দায় রয়েছে। একজন মার্কিন কমান্ডার এই স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। তবে স্বীকারোক্তি দেওয়ার পাশাপাশি তিনি বলেছেন, ওই বিস্ফোরণ আইএস-এর কর্মকাণ্ডও হতে পারে।

লন্ডনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ইন্ডিপেনডেন্ট  ওই ঘটনায় সবশেষ  ২৪০ জন বেসামরিক ইরাকির প্রাণহানির কথা জানিয়েছে।

ইরাকিদের বিপন্ন জীবন-১

ইরাকের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর এই মসুল। চলতি মাস থেকে সেখানে মার্কিন বাহিনীর পৃষ্ঠপোষকতায় আইএসবিরোধী অভিযান পরিচালনা করছে ইরাকি বাহিনী ১৭ মার্চের। অভিযানের সময়কার বিস্ফোরণে বহু বেসামরিক হতাহতের পর জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর সমালোচনার মুখে এক বিবৃতি দেয় মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর। বিবৃতিতে অভিযানের সময় ২০০ বেসামরিক নাগরিক নিহত হওয়ার কথা স্বীকার করলেও বিস্ফোরণে উল্টো আইএস-এর দিকেই অভিযোগের তীর ছুঁড়েছে তারা।

noname

তবে মঙ্গলবার প্রথমবারের মতো এক মার্কিন কমান্ডার স্বীকার করেন, এমন হতে পারে যে মার্কিন বাহিনীর কারণেই ওই বিস্ফোরণ হয়েছে। ‘আমার প্রাথমিক অনুমান ওইসব হতাহতের ঘটনায় আমাদের সম্ভাব্য ভূমিকা রয়েছে। তবে আমি জানি না, বিস্ফোরণস্থলে জড়ো হওয়া ওই মানুষগুলোকে শত্রুরাই (আইএস) এক জায়গায় করেছিল কিনা।’ বলেন ইরাকে নিযুক্ত মার্কিন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল স্টিভ টাউনসেন্ড।
এরআগে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্রে নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা বাহিনীর কাছে মানুষের জীবনের মূল্য আছে। এজন্যই জঙ্গিদের কবল থেকে ইরাককে মুক্ত করতে দেশটির সরকারি বাহিনীকে সহায়তা করে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।

ইরাকিদের বিপন্ন জীবন-২

তবে প্রত্যক্ষদর্শীদের অনেকেই ইরাকি বাহিনীর এমন দাবি নাকচ করে দিয়েছেন। তারা বলছেন, মার্কিন নেতৃত্বাধীন বাহিনীর বিমান হামলার কারণেই ভবনটি চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে পড়ে। এতে ভবনের ধ্বংসস্তুপের নিচে চাপা পড়ে নিহত হন সেখানে বসবাসরত পরিবারগুলোর অনেক সদস্য।

 হামলাকে ‘মানবিক বিপর্যয়’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন ইরাকের ভাইস প্রেসিডেন্ট ওসামা নুজাইফি। পুরো ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। ইরাকে নিযুক্ত জাতিসংঘের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেছেন, মসুলে ভয়াবহ বিমান হামলায় শতাধিক বেসামরিক নাগরিকের প্রাণহানির ঘটনায় তিনি বিস্মিত।
noname

২০০৩ সালের ১ মে ইরাক দখল করে যুক্তরাষ্ট্র। এরপর থেকে এ পর্যন্ত দেশটিতে মার্কিন বাহিনীর হামলায় বেসামরিক হত্যাকাণ্ডের সবচেয়ে বড় ঘটনাগুলোর একটি। ১৭ মার্চের ওই হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় ইরাকের প্রধানমন্ত্রী হায়দাল আল এবাদি এবং দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের আর্মি চিফ অব স্টাফ জেনারেল মার্ক মিলি। তাদের সঙ্গে কথা বলার পরই এ বিষয়ে তদন্তের ঘোষণা দেন তিনি। সূত্র: আলজাজিরা, রয়টার্স, সিএনএন, দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট।

/বিএ/