সমুদ্রের পানিকে পানযোগ্য করার উপায় বের করলেন ব্রিটিশ বিজ্ঞানীরা

গ্রাফিনভিত্তিক পর্দা দিয়ে লবন পরিস্রাবণের দাবি করা হচ্ছেসমুদ্রের লবণাক্ত পানিকে পানযোগ্য করতে বিশেষ ধরনের একটি চালুনি আবিষ্কার করার দাবি করেছেন এক দল ব্রিটিশ বিজ্ঞানী। সোমবার (৪ এপ্রিল) ‘নেচার ন্যানোটেকনোলজি’ সাময়িকীতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমন দাবি করা হয়েছে। বিশ্বজুড়ে নিরাপদ পানি নিশ্চিত করতে এ আবিষ্কার যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।

গবেষণাটি করেছেন ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটির এক দল বিজ্ঞানী। অধ্যাপক রাহুল নাইরের নেতৃত্বাধীন ওই বিজ্ঞানী দলটি গ্রাফিনভিত্তিক একটি পর্দা বা চালুনি আবিষ্কার করেছেন। তাদের দাবি, এর মধ্য দিয়ে পানি থেকে সাধারণ লবণগুলো ছেঁকে নিয়ে তা পানযোগ্য পানিতে রূপান্তরিত করা যাবে।

রাহুল নায়ের বলেন ‘এ সরকারের আমলে এ্টিই প্রথমবারের মতো সবচেয়ে সুস্পষ্ট পরীক্ষা। প্রতিবেদনে আমরা বর্ণনা করেছি যে, বর্ণিত পদ্ধতিটিকে ব্যাপকভাবে বাস্তব রূপ দেওয়া এবং ব্যাপক হারে চালুনির আকারের গ্রাফিনভিত্তিক পর্দা উৎপাদন সম্ভব’।     

ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটির আগের গবেষণায় দেখা গিয়েছিল, পানিতে ডোবানো হলে গ্রাফিন-অক্সাইড পর্দাগুলো সামান্য ফুলে ওঠে এবং ছোট লবণগুলো পানির সঙ্গে পর্দা দিয়ে প্রবাহিত হয়। কিন্তু বড় বড় আয়ন ও অণুগুলো আটকে যায়। ম্যানচেস্টারভিত্তিক ওই বিজ্ঞানী দলটি এখন এ গ্রাফিন পর্দাগুলোকে আরও সমৃদ্ধ করেছে এবং পানির সংস্পর্শে আসার পর পর্দার ফুলে ওঠা বন্ধ করেছে। বিজ্ঞানীদের দাবি, নতুন পর্দা দিয়ে ছোট ছোট লবনগুলোকেও আটকানো যাবে।

জাতিসংঘের আশঙ্কা, ২০২৫ সাল নাগাদ বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ১৪ শতাংশকে পানির অভাবে ভুগতে হবে। এই প্রেক্ষাপটে বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন তাদের উদ্ভাবনকৃত নতুন প্রযুক্তি বিশ্বব্যাপী পানি পরিস্রাবণের ক্ষেত্রে যুগান্তকারী সম্ভাবনা তৈরি করেছে। বিশেষ করে যেসব দেশ বড় আকারে নির্লবণীকরণ প্ল্যান্ট চালাতে পারে না তাদের জন্য বেশ কার্যকর হবে।

২০০৪ সালে গ্রাফিন আবিষ্কার করে ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটি। পদার্থটির বাস্তব জাগতিক সম্ভাবনা আবিষ্কারের জন্য জোরেশোরে গবেষণা চলছে। গ্রাফিন হলো এক ধরণের কার্বন যা একটি সরু চাকতিরূপে বিরাজ করে। চাকতিটির ক্ষেত্রফল যত বড়ই হোক না কেন পুরুত্ব হয় মাত্র একটি পরমাণুর আকারের সমান। এর আগে গ্যাস আলাদা করতে এবং পানি ছাঁকতে গ্রাফিন-অক্সাইডের পর্দা বেশ কার্যকারিতা দেখিয়েছিল।

ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটির ন্যাশনাল গ্রাফিন ইন্সটিটিউটে পরীক্ষিত গ্রাফিন-অক্সাইডের পর্দাগুলো এরইমধ্যে ক্ষুদ্র কণা, জৈব অণু এবং বড় বড় লবণ ছাঁকতে কার্যকরিতা দেখিয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত সেগুলো নির্বলীকরণ প্রযুক্তিতে ব্যবহৃত সাধারণ লবণ ছাঁকতে ব্যবহার করা হয়নি। কেননা, এগুলো ছাঁকার জন্য আরও ছোট চালুনির প্রয়োজন।

/এফইউ/