ট্রাম্পের সিরীয় যুদ্ধে সৌদি আরবের ‘সর্বাত্মক সমর্থন’

মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র হামলাসিরিয়ার আল-শায়রাত বিমানঘাঁটিতে মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ‘সর্বাত্মক সমর্থন’ জানিয়েছে সৌদি আরব। এ হামলাকে ‘সাহসী সিদ্ধান্ত’ বলেও জানিয়েছে তারা। সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম এসপিএ-র বরাত দিয়ে এ কথা জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

এসপিএ প্রকাশিত সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সৌদি রাজতন্ত্র সিরিয়ায় মার্কিন সামরিক হামলাকে সর্বাত্মক সমর্থন করে। নিরীহ বেসামরিক মানুষের ওপর রাসায়নিক হামলার জবাবে এ হামলা চালানো হয়েছে।’

ওই বিবৃতিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যাপক প্রশংসা করে একে ‘সাহসী সিদ্ধান্ত’ বলেও উল্লেখ করা হয়। ওই হামলার জন্য সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকেই দায়ী করছে সৌদি কর্তৃপক্ষ। আরব দেশগুলোর মধ্যে সবার আগে মার্কিন হামলাকে সমর্থন করে বক্তব্য দিয়েছে সৌদি আরব।

মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতর পেন্টাগনের এক বিবৃতিতে বলা হয়, বৃহস্পতিবার রাতে (সিরিয়ায় স্থানীয় সময় শুক্রবার ভোরে) ভূমধ্যসাগরে অবস্থান করা যুক্তরাষ্ট্রের দু’টি যুদ্ধজাহাজ ইউএসএস পোর্টার এবং ইউএসএস রস থেকে আসাদ সরকার নিয়ন্ত্রিত আল-শায়রাত বিমানঘাঁটিতে ৫৯টি টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে। হামলায় ঘাঁটিতে রাখা যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টারসহ অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলেও দাবি করা হয়।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দাবি, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় অঞ্চল ইদলিবে বিমান থেকে চালানো রাসায়নিক গ্যাস হামলার জবাবেই মার্কিন বাহিনী ওই হামলা চালিয়েছে।

ট্রাম্প বলেন, ‘সিরিয়ার চালানো রাসায়নিক হামলার জবাবে আমি সামরিক স্থাপনায় ওই হামলা চালানোর নির্দেশ দিয়েছি। এই মারাত্মক রাসায়নিক অস্ত্র যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি।’

সিরিয়ান অবজারভেটরি জানিয়েছে, মার্কিন টমাহক ক্ষেপণাস্ত্রের হামলায় বিমানঘাঁটিটি প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ওই হামলায় অন্তত চারজন সিরীয় সেনাসদস্য নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন বহু সেনা সদস্য। ওই ঘাঁটিতে থেকে সুখোই ২২, সুখোই ২৪ এবং মিগ ২৩ বিমান ছিল। নিহতদের মধ্যে একজন জেনারেল পদমর্যাদার সামরিক কর্মকর্তাও ছিলেন বলে জানায় সিরিয়ান অবজারভেটরি।

এদিকে রাশিয়া জানিয়েছে, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে জরুরি বৈঠকের দাবি জানাবে তারা। রাশিয়ান ফেডারেশন কাউন্সিলের প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটির প্রধান ভিক্টর অজেরভ বলেন, রাশিয়া প্রথমে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে জরুরি বৈঠকের দাবি জানাবে। এ কর্মকাণ্ড জাতিসংঘের একটি সদস্য রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে মার্কিন আগ্রাসন বলেই বিবেচিত হবে।’

রাশিয়ার পার্লামেন্টের প্রতিরক্ষা কমিটি জানিয়েছে, ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর ওয়াশিংটন-মস্কো সম্পর্কের অবনতি ঘটতে পারে। আর এর ফলে মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক সংঘাত বাড়তে পারে।

আসাদ সরকারের ঘনিষ্ট মিত্র ইরান এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।

উল্লেখ্য, ইদলিবে ওই রাসায়নিক গ্যাস হামলায় ৮৬ জন নিহত হয়। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বলছে, ২০১৩ সালের আগস্টে সারিন গ্যাস হামলার অভিযোগ ওঠার পর এটিই সবচেয়ে ভয়াবহ রাসায়নিক হামলা। আসাদবিরোধী বিদ্রোহীরা এই হামলায় সরকারী বাহিনী ও রাশিয়াকে দুষলেও এ দাবি অস্বীকার করেছে সিরীয় সেনাসূত্র ও রুশ কর্তৃপক্ষ। হামলায় প্রাণহানির ঘটনায় বুধবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠক হয়। বৈঠকে তোপের মুখে পড়ে রাশিয়া। ওই হামলায় সিরিয়ার বিদ্রোহীদের দায়ী করে রাশিয়া। মস্কোর দাবি, বিদ্রোহীরা ওই রাসায়নিক গ্যাস মজুত করে রেখেছিল। সিরীয় বিমান হামলায় সেই গুদাম আক্রান্ত হলে বিস্ফোরণ ঘটে। তবে রাশিয়ার এমন দাবি জোরালোভাবে প্রত্যাখ্যান করে নিরাপত্তা পরিষদের অন্য সদস্য দেশগুলো। তারা আসাদকে থামাতে রাশিয়ার প্রতি আহ্বান জানায়।

/এসএ/

আরও পড়ুন

সিরিয়ার বিরুদ্ধে ট্রাম্পের ‘যুদ্ধ’ শুরু!

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ‘বিমান নিরাপত্তা চুক্তি’ বাতিল করলো রাশিয়া

সিরিয়ায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলার নির্দেশ নিয়ে যা বললেন ট্রাম্প

সিরিয়ায় মার্কিন হামলায় নিহতদের মধ্যে রুশ সেনা নেই