মার্কিন আক্রমণ মোকাবিলায় পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি উ. কোরিয়ার

ট্রাম্পকে পারমাণবিক যুদ্ধের হুঁশিয়ারি উ. কোরিয়ারমার্কিন বিমানবাহী রণতরী যখন কোরিয়া অভিমুখে যাত্রা করেছে, তখন আক্রমণ মোকাবিলায় পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি দিয়েছে উত্তর কোরিয়া। কোরিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী হান সং রিয়ল মার্কিন বার্তা সংস্থা এসোসিয়েটেড প্রেসকে (এপি) দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছেন।

হান সং রিয়ল অভিযোগ করেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট আগ্রাসী টুইটবার্তার মাধ্যমে সমস্যা তৈরি করছেন। মার্কিন প্রশাসন অসৎ উদ্দেশ্যে উপদ্বীপের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করছে।’

উত্তর কোরিয়ার সামরিক নীতি সম্পর্কে তিনি জানান, দু’বছর আগে দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ সামরিক মহড়ার সময় উত্তর কোরিয়া তার সামরিক নীতিতে পরিবর্তন এনেছে। এখন যে কোনও ধরনের পদক্ষেপ উত্তর কোরিয়া একাই নেবে।

হান আরও বলেন, আমাদের শক্তিশালী পারমাণবিক বোমা রয়েছে। আর মার্কিন হামলার মুখেও আমরা নিশ্চিতভাবেই সে অস্ত্র হাতে নিয়ে বসে থাকবো না। মার্কিন বাহিনী যেভাবে আক্রমণ করবে, আমরা তার সমুচিত জবাব দেওয়ার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত।

তিনি জানান, উত্তর কোরিয়া মানসম্পন্ন পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি থেকে সরে আসবে না।

উল্লেখ্য, কোরিয়া উপদ্বীপ অভিমুখে রয়েছে মার্কিন বিমানবাহী রণতরী ভিনসন স্ট্রাইক গ্রুপ। ওদিকে ষষ্ঠ পারমাণবিক পরীক্ষার প্রস্তুত উত্তর কোরিয়া। শনিবার উত্তর কোরিয়ার প্রতিষ্ঠাতা কিম ইল সুং-এর ১০৫তম জন্মবার্ষিকী উদযাপনের সময়ে ৬ষ্ঠ পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা চালানো হতে পারে। এ নিয়ে উত্তর কোরিয়া-মার্কিন সম্পর্কে উত্তেজনা বিরাজ করছে। উত্তর কোরিয়াকে নিয়ে ‘ধৈর্যচ্যুতি’ ঘটেছে বলে ইতোমধ্যেই সতর্ক করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

সিরিয়ায় বিষাক্ত সারিন গ্যাস হামলার পর পরই উত্তর কোরিয়ার একটি উপদ্বীপের দিকে নৌবহর পাঠিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রকেও পাল্টা হুমকি দিতে ছাড়েননি উ. কোরীয় প্রেসিডেন্ট কিম জং উন। পিয়ংইয়ং অভিযোগ করে বলেছে, এ পদক্ষেপ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র কোরিয়া উপদ্বীপকে যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিচ্ছে।

সম্প্রতি ট্রাম্প উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে সামরিক ব্যবস্থা নেওয়ারও ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। সিরিয়া সরকারের ওপর তিনি এরই মধ্যে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছেন। আফগানিস্তানেও আইএস জঙ্গিদের ওপর অপারমাণবিক সবচেয়ে বড় বোমা বিস্ফোরণ এরই মধ্যে ঘটিয়েছেন তিনি। উত্তর কোরিয়াকে থামানো না গেলে তারা যুক্তরাষ্ট্রে পারমাণবিক অস্ত্র হামলা চালানোর সক্ষমতা অর্জন করে ফেলতে পারে বলে উদ্বিগ্ন ওয়াশিংটন।

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়াকে যুদ্ধাবস্থা থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়েছে চীন। শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বলেন, ‘আমরা সব পক্ষকেই মৌখিক-প্রায়োগিক সব ধরনের উস্কানি দেওয়া কিংবা হুমকি দেওয়া থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। যাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে না যায়।’

যুদ্ধাবস্থা সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়ে ওয়াং বলেছেন, ‘যুদ্ধ শুরু হলে সব পক্ষই তাতে হারবে, কোনও পক্ষই জয়ী হবে না। যে কোনও মুহূর্তে সংঘাত সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কায় আছে আরেক পক্ষ। এ পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষেরই অত্যন্ত সতর্ক থাকা উচিত।’  

গত ৫ এপ্রিল জাপান সাগরে একটি ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে উত্তর কোরিয়া। এর আগে ৬ মার্চ উত্তর কোরিয়ার চীন সীমান্তের নিকটবর্তী তংচ্যাং-রি অঞ্চল থেকে জাপান সাগরে চারটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়। তখন দক্ষিণ কোরিয়ার বার্তা সংস্থা ইয়োনহ্যাপ জানায়, ক্ষেপণাস্ত্রগুলো সম্ভবত আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, যা যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডে আঘাত হানতে সক্ষম। 

পারমাণবিক ও ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কার্যক্রম চালানোর জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো এবং জাতিসংঘ বেশ কয়েকবার নিষেধাজ্ঞা জারি করলেও ওই কার্যক্রম থেকে সরে আসেনি উত্তর কোরিয়া।

/এসএ/