প্রতি সপ্তাহে ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার হুমকি উ. কোরিয়ার


সামরিক প্যারেডে কিম জং-উনবিশ্বব্যাপী সমালোচনা ও যুক্তরাষ্ট্রের হুমকি সত্ত্বেও এবার ‘প্রতি সপ্তাহে’ ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালানোর হুমকি দিয়েছে পিয়ংইয়ং। উত্তর কোরিয়ার এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন।

উত্তর কোরিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী হান সং-রিয়ল বিবিসি-কে বলেন, ‘আমরা সাপ্তাহিক, মাসিক ও বার্ষিকভিত্তিতে ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালাবো।’

মার্কিন হামলা প্রতিরোধে ‘উত্তর কোরিয়া প্রস্তুত রয়েছে’ উল্লেখ করে হান আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র যদি সামরিক শক্তি ব্যবহার করে তাহলে উত্তর কোরিয়া সর্বাত্মক যুদ্ধ করবে।’

এর আগে মার্কিন বার্তা সংস্থা এসোসিয়েটেড প্রেসকে (এপি) দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে হান অভিযোগ করেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট আগ্রাসী টুইটবার্তার মাধ্যমে সমস্যা তৈরি করছেন। মার্কিন প্রশাসন অসৎ উদ্দেশ্যে উপদ্বীপের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করছে।’

উত্তর কোরিয়ার সামরিক নীতি সম্পর্কে তিনি জানান, দু’বছর আগে দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ সামরিক মহড়ার সময় উত্তর কোরিয়া তার সামরিক নীতিতে পরিবর্তন এনেছে। এখন যে কোনও ধরনের পদক্ষেপ উত্তর কোরিয়া একাই নেবে। 

হান সং-রিয়ল

হান তখন আরও বলেছিলেন, ‘আমাদের শক্তিশালী পারমাণবিক বোমা রয়েছে। আর মার্কিন হামলার মুখেও আমরা নিশ্চিতভাবেই সে অস্ত্র হাতে নিয়ে বসে থাকবো না। মার্কিন বাহিনী যেভাবে আক্রমণ করবে, আমরা তার সমুচিত জবাব দেওয়ার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত।’

তখন তিনি জানান, ‘উত্তর কোরিয়া মানসম্পন্ন পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি থেকে সরে আসবে না।’

এদিকে, সোমবার দক্ষিণ কোরিয়া সফরে থাকা মার্কিন ভাইস-প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স বলেছিলেন, ‘কৌশলগত ধৈর্যধারণের দিন শেষ। উত্তর কোরিয়াকে আর সহ্য করা হবে না।’

এছাড়া দক্ষিণ কোরিয়ার অত্যাধুনিক মার্কিন থাড ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতায়েনে সম্মত হয়েছে ওয়াশিংটন ও সিউল। রবিবার উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা ব্যর্থ হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সিউল পৌঁছান মাইক পেন্স।

যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়া পরস্পর উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ড এবং মার্কিন বিমানবাহী রণতরী ভিনসন স্ট্রাইক গ্রুপকে কোরিয়া উপদ্বীপে পাঠানোর পর সেখানে এখন কার্যত যুদ্ধাবস্থা জারি রয়েছে।

শনিবার উত্তর কোরিয়ার প্রতিষ্ঠাতা কিম ইল-সাং এর ১০৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে পিয়ং ইয়ং-এ আয়োজিত সামরিক কুচকাওয়াচের একদিন পরই ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালায় উত্তর কোরিয়া। দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, ক্ষেপণাস্ত্রটি উৎক্ষেপণের পরপরই বিস্ফোরিত হয়। এর আগে একই জায়গা থেকে উত্তর কোরিয়া আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছিল। 

মাইক পেন্স

শনিবারের সামরিক প্যারেডে ট্যাংক এবং অন্যান্য সামরিক সরঞ্জামসহ ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের বড় ধরনের প্রদর্শনী করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুদ্ধাবস্থা যখন বিরাজ করছে কোরিয়া উপদ্বীপে, তখন নিজেদের সামরিক শক্তি তুলে ধরার চেষ্টা করে উত্তর কোরিয়া।

এদিন দেশটির নেতা কিম জং উন বলেন, ‘প্রয়োজনে পরমাণু হামলার জন্য প্রস্তুত পিয়ং ইয়ং।’

সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে সামরিক ব্যবস্থা নেওয়ারও ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। সিরিয়া সরকারের ওপর তিনি এরই মধ্যে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছেন। আফগানিস্তানেও আইএস জঙ্গিদের ওপর অপারমাণবিক সবচেয়ে বড় বোমা বিস্ফোরণ এরই মধ্যে ঘটিয়েছেন তিনি। উত্তর কোরিয়াকে থামানো না গেলে তারা যুক্তরাষ্ট্রে পারমাণবিক অস্ত্র হামলা চালানোর সক্ষমতা অর্জন করে ফেলতে পারে বলে উদ্বিগ্ন ওয়াশিংটন।

গত ৫ এপ্রিল জাপান সাগরে একটি ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে উত্তর কোরিয়া। এর আগে ৬ মার্চ উত্তর কোরিয়ার চীন সীমান্তের নিকটবর্তী তংচ্যাং-রি অঞ্চল থেকে জাপান সাগরে চারটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়। তখন দক্ষিণ কোরিয়ার বার্তা সংস্থা ইয়োনহ্যাপ জানায়, ক্ষেপণাস্ত্রগুলো সম্ভবত আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, যা যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডে আঘাত হানতে সক্ষম। 

পারমাণবিক ও ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কার্যক্রম চালানোর জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো এবং জাতিসংঘ বেশ কয়েকবার নিষেধাজ্ঞা জারি করলেও ওই কার্যক্রম থেকে সরে আসেনি উত্তর কোরিয়া।

/এসএ/বিএ/