গণভোটে কারচুপির অভিযোগ, পর্যবেক্ষকদের নিজ নিজ অবস্থান ধরে রাখার আহ্বান এরদোয়ানের

সমর্থকদের সামনে এরদোয়ানতুরস্কে সংবিধান সংশোধন করে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা বাড়ানোর গণভোটে কারচুপির অভিযোগ আনেন পর্যবেক্ষকরা তবে ওই পর্যবেক্ষকদের তীব্র সমালোচনা করে ‘নিজের জায়গায় থাকতে’ বলেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান।

১৬ এপ্রিল (রবিবার) অনুষ্ঠিত ওই গণভোটে প্রেসিডেন্ট শাসিত সরকার ব্যবস্থার পক্ষে ভোট পড়েছে ৫১.৪১ শতাংশ। দেশটির নির্বাচন কমিশন গণভোটের রায়কে বৈধতা দিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে আরও সাংবিধানিক ক্ষমতা পেয়েছেন এরদোয়ান।  

গণভোটে জয়ের পর প্রেসিডেন্ট প্যালেসে এরদোয়ান সমর্থকদের সামনে দেওয়া ভাষণে বলেন, ‘গণভোটের ফলাফলে দেখা গেছে, তুরস্কের জনগণ ওই রাজনৈতিক উদ্দেশপ্রণোদিত পর্যবেক্ষকদের কথায় কান দেননি।’ তিনি পর্যবেক্ষকদের উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘নিজের অবস্থান চিনে নিন। সেখানেই থাকুন।’

এরদোয়ান আরও জানান, তিনি তুরস্কে মৃত্যুদণ্ডের বিধান পুনর্বহাল করবেন। উল্লেখ্য, মৃত্যুদণ্ডের বিধান পুনর্বহাল করলে তুরস্ক ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হওয়ার জন্য অনুপযুক্ত বলে বিবেচিত হবে।

এর আগে তুর্কি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, ‘গণভোট নিয়ে পর্যবেক্ষকদের সমালোচনার কোনও ভিত্তি নেই। এসব সমালোচনা পর্যবেক্ষকদের পক্ষপাতদুষ্ট অবস্থানকে চিহ্নিত করে।’   

প্রসঙ্গত, তুরস্কের গণভোটে ইউরোপীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার পর্যবেক্ষকরা কারচুপি ও পক্ষপাতের অভিযোগ করেছিলেন। তারা এ গণভোটকে ইউরোপীয় মানের নয় বলে উল্লেখ করেছিলেন। 

গণভোটে কারচুপির অভিযোগে বিক্ষোভ

দেশটির প্রধান দুই বিরোধী দল গণভোটে তাদের পরাজয় মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। প্রধান বিরোধী দল রিপাবলিকান পিপল’স পার্টি (সিএইচপি) এই ফলের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। তারা ৬০ শতাংশ ভোটের পুনঃগণনার দাবি জানিয়েছে। তুরস্কের বড় তিন শহর ইস্তাম্বুল, আঙ্কারা ও ইজমিরে ‘না’ ভোট পড়েছে বেশি। কুর্দিপন্থী পিপল’স ডেমোক্র্যাটিক পার্টিও (এইচডিপি) গণভোটের ফলাফল চ্যালেঞ্জ করেছে।

নতুন প্রস্তাবিত সংবিধান অনুসারে, প্রেসিডেন্ট শাসিত সরকারে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা খর্ব করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর কাজ করতে একাধিক ভাইস-প্রেসিডেন্টের নিয়োগ দেওয়া হতে পারে। প্রেসিডেন্ট একাই জরুরি অবস্থা জারি করতে পারবেন, পার্লামেন্ট ভেঙে দিতে পারবেন। পার্লামেন্ট আর মন্ত্রীদের ব্যাপারে তদন্ত করতে পারবে না। তবে সংখ্যাগরিষ্ঠদের ভোটে পার্লামেন্ট সদস্যরা প্রেসিডেন্টকে অভিশংসনের প্রক্রিয়া শুরু করতে পারবেন।

প্রেসিডেন্টের বিচারের জন্য দুই-তৃতীয়াংশ পার্লামেন্ট সদস্যের সমর্থন লাগবে। পার্লামেন্ট সদস্যের সংখ্যা ৫৫০ থেকে বাড়িয়ে ৬০০ করা হবে। প্রেসিডেন্ট ও পার্লামেন্ট নির্বাচন একই দিনে হবে। প্রেসিডেন্ট দুই মেয়াদের বেশি ক্ষমতায় থাকতে পারবেন না। আগামী পার্লামেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ৩ নভেম্বর ২০১৯। 

এরদোয়ানের সমর্থকদের মতে, এর ফলে তুরস্ক আরও ‘গতিশীল ও আধুনিক’ হবে। তবে এরদোয়ানের বিরোধীদের আশঙ্কা, এর মধ্য দিয়ে এরদোয়ান আরও কর্তৃত্ববাদী হয়ে উঠবেন। ‘হ্যাঁ’ ভোট জয়ী হওয়ায় এরদোয়ান ২০২৯ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকার ম্যান্ডেট পেয়েছেন।

/এসএ/বিএ/