সোমবার আঙ্কারায় উপ-প্রধানমন্ত্রী নুমান কুরতুলমুস সাংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ জরুরি অবস্থার মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দু’দিন পর জরুরি অবস্থার মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল।
১৬ এপ্রিল (রবিবার) অনুষ্ঠিত গণভোটে প্রেসিডেন্ট শাসিত সরকার ব্যবস্থার পক্ষে ভোট পড়েছে ৫১.৪১ শতাংশ। দেশটির নির্বাচন কমিশন গণভোটের রায়কে বৈধতা দিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে আরও সাংবিধানিক ক্ষমতা পেয়েছেন এরদোয়ান।
প্রসঙ্গত, তুরস্কের গণভোটে ইউরোপীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার পর্যবেক্ষকরা কারচুপি ও পক্ষপাতের অভিযোগ করেছিলেন। তারা এ গণভোটকে ইউরোপীয় মানের নয় বলে উল্লেখ করেছিলেন।
দেশটির প্রধান দুই বিরোধী দল গণভোটে তাদের পরাজয় মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। প্রধান বিরোধী দল রিপাবলিকান পিপল’স পার্টি (সিএইচপি) এই ফলের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। তারা ৬০ শতাংশ ভোটের পুনঃগণনার দাবি জানিয়েছে। তুরস্কের বড় তিন শহর ইস্তাম্বুল, আঙ্কারা ও ইজমিরে ‘না’ ভোট পড়েছে বেশি। কুর্দিপন্থী পিপল’স ডেমোক্র্যাটিক পার্টিও (এইচডিপি) গণভোটের ফলাফল চ্যালেঞ্জ করেছে।
গণভোট জয়ের একদিন পরই আসলো জরুরি অবস্থার মেয়াদ বাড়ানোর ঘোষণা। গত বছর জুলাইয়ে অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার পর থেকে দেশটিতে জরুরি অবস্থা জারি রয়েছে। এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো এর মেয়াদ বাড়ানো হলো।
উল্লেখ্য, গত বছর ১৫ জুলাই সন্ধ্যায় তুর্কি সেনাবাহিনীর একাংশ অভ্যুত্থান ঘটিয়ে দেশের শাসনভার নেওয়ার দাবি করে, যা দেশটির টেলিভিশনে প্রচার করা হয়। মধ্যরাতে ক্ষমতা দখলের ঘোষণা দিয়ে তুরস্কের ডানপন্থী সরকার উচ্ছেদের দাবি করে দেশটির সেনাবাহিনীর একাংশ। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারিত এক বিবৃতিতে তারা জানায়, ‘গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও মানবাধিকার রক্ষার স্বার্থে’ সশস্ত্র বাহিনী তুরস্কের ক্ষমতা দখল করেছে। টেলিভিশনের পর্দায় পড়ে শোনানো ওই বিবৃতিতে বলা হয়, এখন ‘শান্তি পরিষদ’ দেশ চালাবে এবং কারফিউ ও সামরিক আইন জারি থাকবে। একই সঙ্গে তুরস্কের বিদ্যমান বৈদেশিক সব সম্পর্ক বহাল থাকবে এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা প্রাধান্য পাবে। কারফিউর বিরোধিতা করে এরদোয়ানের সমর্থকরা রাস্তায় নেমে এলে সংঘর্ষ শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত সামরিক বাহিনীর সব অংশের সমর্থন না থাকায় এবং ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের তৎপরতায় জনগণ রাস্তায় নেমে এলে বিদ্রোহী সেনাদের উদ্যোগ ভেস্তে যায়।
ওই ব্যর্থ অভ্যুত্থান সম্পর্কে তুরস্ক প্রথম থেকেই দাবি করে আসছে, এর সঙ্গে ফেতুল্লাহ গুলেনের সংযোগ রয়েছে। তবে গুলেন তা প্রথম থেকেই অস্বীকার করে আসছেন। তুরস্কের পক্ষ থেকে মার্কিন সরকারের কাছে গুলেনকে তুরস্কে ফেরত পাঠানোর দাবিও করা হয়েছে।
এখন পর্যন্ত অভ্যুত্থান প্রচেষ্টায় যুক্ত থাকার অভিযোগে ৪০ হাজারেরও বেশি মানুষকে কারাবন্দি করা হয়েছে। এক লাখেরও বেশি সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত ও বরখাস্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে সেনা, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাসহ বেসামরিক প্রশাসন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং সাংবাদিকও রয়েছেন। অনলাইন, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মাধ্যমের অন্তত ১৫০টি সংবাদমাধ্যম বন্ধ করে দেওয়া হয় ওই ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর।
/এসএ/বিএ/