কাশ্মিরজুড়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ, আহত শতাধিক

কাশ্মিরে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভকলেজে পুলিশি অভিযানের বিরুদ্ধে সোমবার প্রতিবাদে নামেন কাশ্মিরের বিক্ষুব্ধ ছাত্র-যুবরা। পুলিশ ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করলে শুরু হয় সংঘর্ষ। ভারত অধিকৃত জম্মু-কাশ্মিরজুড়ে পুলিশ ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষে আহত হয়েছেন শতাধিক। ভারতীয় বার্তা সংস্থা পিটিআই ‌এবং সে দেশের সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস এ খবর জানিয়েছে।   

সোমবার শ্রীনগরের প্রধান এলাকাগুলোয় শিক্ষার্থীরা ইউনিফর্ম পরে বিক্ষোভে অংশ নেয় এবং বিক্ষো্ভ ধীরে ধীরে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়তে থাকে। বিক্ষোভ দমনে পুলিশ প্যালেট, কাঁদুনে গ্যাস ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে।

শনিবার পুলওয়ামার একটি কলেজে এক সন্দেহভাজনের সন্ধানে গিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রতিরোধের মুখে পড়ে পুলিশ। কলেজ চত্বরেই সংঘর্ষে আহত হয়েছিলেন প্রায় ৫০ জন শিক্ষার্থী। পুলিসের দাবি, কলেজে লুকিয়ে আছে সম্প্রতি শ্রীনগর লোকসভা উপ-নির্বাচনের সময় সহিংসতা সৃষ্টিকারী এক ব্যক্তি। তবে পুলওয়ামা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ জানান, এক সেনা কর্মকর্তা কলেজে একটি সমাবেশ করতে চেয়েছিলেন। আর এ ঘটনাকে কেন্দ্র করেই শিক্ষার্থীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। এক পর্যায়ে পুলিশ শিক্ষার্থীদের আক্রমণ করলে শুরু হয় সংঘর্ষ। ছাত্রছাত্রীদের উপর লাঠিচার্জ ও হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি চালানোরও অভিযোগ উঠেছে পুলিসের বিরুদ্ধে।

নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের গুলিতে সাজাদ হুসেইন শেখ নামের ১৭ বছর বয়সী এক কিশোর মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। এ সম্পর্কে ভারতীয় পুলিশের পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে জানানো হয়, ‘কোন পরিস্থিতিতে সাজাদ হুসেইন শেখ নামের ওই ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়েছে সে ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।’

তার পর থেকে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে পুলিশের ওই অভিযানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন ছাত্র-ছাত্রীরা। তাদের দাবি, বিশেষ অনুমতি ছাড়া শিক্ষাঙ্গনে পুলিশ প্রবেশ করতে পারে না। তারই প্রতিবাদে সোমবার সকাল থেকেই ত্রাল ও সোপোরে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন ছাত্রছাত্রীরা। তাতে যোগ দেন কাশ্মির বিশ্ববিদ্যালয় এবং শ্রীনগর উইম্যান’স কলেজের ছাত্রীরাও।

এক বিবৃতিতে কাশ্মির ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টস ইউনিয়ন বলেছে, ‘এখানে আমরা নিপীড়নের সম্মুখীন। এক বছর থেকে আমরা নিপীড়িত হচ্ছি। আমরা আর এ নিপীড়ন সহ্য করব না।’

শ্রীনগরে কাশ্মির ইউনিভার্সিটি ও উইম্যান’স কলেজসহ উপত্যকার অন্তত চারটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সহিংসতার খবর পাওয়া গেছে।

এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশের অনুপ্রবেশ নিয়ে তদন্তের আশ্বাস দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি। তবে এ ঘটনার তীব্র সমালোচনা করেছেন সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও বর্তমান বিরোধী দল ন্যাশনাল কনফারেন্সের নেতা ওমর আবদুল্লাহ। ধারাবাহিক টুইটে এ ঘটনায় সরকারের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন তিনি।

এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে কাশ্মিরের ক্ষমতাসীন দল পিডিপিও।

এ ঘটনায় কাশ্মিরের সব কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবাদের ডাক দিয়েছিল নিষিদ্ধ ঘোষষিত ছাত্র সংগঠন কাশ্মির ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্ট ইউনিয়ন।

পুলওয়ামার ছাত্ররা অভিযোগ করেছেন, পুলিশ ও আধাসামরিক বাহিনীর সেনারা ওই এলাকায় ভারত-বিরোধী আন্দোলনে জড়িত ছাত্রছাত্রীদের আটক করতে কলেজটিতে অভিযান চালায়। এসময় সেনারা ছাত্রদের লক্ষ্য করে ছররা ও কাঁদুনে গ্যাস নিক্ষেপ করে।

শ্রীনগর লোকসভা উপনির্বাচন থেকেই নতুন করে উত্তেজনা মাথাচাড়া দিয়েছে উপত্যকায়। নির্বাচন বয়কটের ডাক দেন স্বাধীনতার দাবিতে আন্দোলনরত সংগঠনগুলোর জোট হুরিয়ত কনফারেন্স। উপনির্বাচনের দিন পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে ৮ জনের মৃত্যু হয়। একাধিক জায়গায় সংঘর্ষ হয়। ওই উপনির্বাচনে ভোট পড়ে মাত্র সাড়ে ছয় শতাংশ। প্রায় ১০০ পুলিশ সদস্য আহত হন।

/এসএ/বিএ/