জাতিসংঘের নথিতে হলোকাস্ট নিয়ে নতুন তথ্য

Holocaustদ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিটলারের নাৎসি বাহিনীর হলোকাস্ট নিয়ে বিতর্ক নতুন নয়। তবে চলতি সপ্তাহে জাতিসংঘের উন্মোচন করা ১০ হাজার নথিতে উঠে এসেছে হলোকাস্টের এক নতুন অধ্যায়। ১৯৪৩ সাল থেকে এসব আর্কাইভ গোপনীয় রাখা হয়েছিল। হলোকাস্ট ও গণহত্যা নিয়ে কাজ করে লন্ডনের দ্য উইনার লাইব্রেরি। মূলত তাদের উদ্যোগেই অনলাইনে শ্রেণিবদ্ধ আকারে এসব নথি প্রকাশিত হয়। এসব নথিতে রয়েছে হিটলারের কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পগুলোতে প্রাণহানি আর যুদ্ধাপরাধের প্রামাণ্য দলিল।

যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র কিংবা রাশিয়া নয়, হলোকাস্ট ইস্যুতে প্রথম ন্যায়বিচারের দাবি তোলে পোল্যান্ড এবং চীন। শেষ পর্যন্ত বহুল আলোচিত ন্যুরেমবার্গ ট্রায়ালের মধ্য দিয়ে এই বিচারকাজ সম্পন্ন হয়।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়েছিল ১৯৩৯ সালে। তবে হিটলারের নির্যাতন কেন্দ্র তথা কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পের খোঁজ মিলে ১৯৪৪ সালে। তৎকালীন সোভিয়েত বাহিনী তখন পোল্যান্ডে একটি কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পের সন্ধান পায়। এতোদিন ধরে বলা হতো, তখনই প্রথম হলোকাস্ট সম্পর্কে জানতে পারে মিত্রশক্তি। তবে গত সপ্তাহে জাতিসংঘের উন্মোচন করা নথিগুলো বলছে ভিন্ন কথা। এসব নথিতে বলা হয়, পোল্যান্ডের ওই কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প আবিষ্কারের আড়াই বছর আগেই হিটলারের এ বিষয়ে জানতে পারে মিত্রশক্তি।

১৯৪২ সালের ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন জানতে পারে, ইতিমধ্যেই ২০ লাখ ইহুদিকে হত্যা করা হয়েছে। মৃত্যুঝুঁকিতে আছে আরও ৫০ লাখ মানুষ। তখন হিটলার ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধপরাধ মামলারও প্রস্তুতি নেওয়া হয়। তবে মৃত্যুর ঝুঁকিতে থাকা মানুষদের বাঁচাতে কিছুই করা হয়নি। বরং ব্যাপক হারে শরণার্থীদের ঢল নামার আশঙ্কায় হলোকাস্ট নিয়ে মুখ খুলতে চায়নি মিত্র বাহিনী। এছাড়া নাৎসি নেতাদের বিচারের মুখোমুখি করতে প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করেছে জার্মানির সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক খারাপ হওয়ার শঙ্কা।

তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিলের মন্ত্রিসভার যুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন ভিসকাউন্ট ক্র্যাবোর্ন। ১৯৪৩ সালের মার্চে তিনি মন্তব্য করেন, ইহুদিদের সঙ্গে যা ঘটেছে তাকে বিশেষ কোনও ঘটনা হিসেবে দেখা উচিত হবে না। যুক্তরাজ্য ইতিমধ্যেই শরণার্থীতে পূর্ণ হয়ে গেছে। এখানে আর কাউকে আশ্রয় দেওয়ার মতো জায়গা অবশিষ্ট নেই।

উল্লেখ্য, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে হিটলারের চালানো হত্যাযজ্ঞের নাম 'হলোকাস্ট'। এর প্রধান শিকার ইহুদিরা হলেও বহু সাধারণ মানুষ এতে নিহত হন। ইহুদি ছাড়াও সোভিয়েত ইউনিয়নের যুদ্ধবন্দী, কমিউনিস্ট, রোমানীয় ভাষাগোষ্ঠীর (যাযাবর) মানুষ, অন্যান্য স্লাবিক ভাষাভাষী জনগণ, প্রতিবন্ধী, সমকামী পুরুষ এবং ভিন্ন রাজনৈতিক ও ধর্মীয় মতাদর্শের মানুষদের ওপর এই গণহত্যা পরিচালিত হয়। সূত্র: দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট, দ্য গার্ডিয়ান।

/এমপি/