রাক্কায় মার্কিন বিমান হামলায় সাত শিশুসহ নিহত ১১

২০১১ সালের ১৫ মার্চ গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এমন ধ্বংসযজ্ঞের সাক্ষী হচ্ছেন সিরিয়ার মানুষ।সিরিয়ার রাক্কায় মার্কিন বিমান হামলায় সাত শিশুসহ অন্তত ১১ জন নিহত হয়েছেন। সংঘাতপীড়িত এলাকা থেকে পালিয়ে যাওয়ার প্রাক্কালে তারা প্রাণহানির শিকার হন। মঙ্গলবার যুক্তরাজ্যভিত্তিক পর্যবেক্ষক সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, একটি পরিবারের সদস্যদের বহনকারী গাড়ি লক্ষ্য করে মার্কিন জোটের একটি বিমান থেকে এ হামলা চালানো হয়। এতে ওই গাড়িতে থাকা ব্যক্তিরা নিহত হন।

সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস ১১ জনের নিহত হওয়ার কথা বললেও একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, ওই হামলায় কমপক্ষে ১৭ জন নিহত হয়েছেন।

রাক্কায় আইএস জঙ্গিদের সঙ্গে সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্সেস (এসডিএফ)-এর লড়াইয়ের তীব্রতায় ওই ব্যক্তিরা শহরটি ছেড়ে পালাতে চেয়েছিলেন। আইএস-এর কথিত রাজধানী রাক্কার দখল নিতে জঙ্গিদের সঙ্গে এখানে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে এসডিএফ। বিদ্যমান সংঘাতে এরইমধ্যে ওই এলাকা ছেড়েছে কয়েক হাজার মানুষ।

যুদ্ধ-যাপনের এমন ক্ষত বুকে নিয়েই সিরিয়ার বাসিন্দাদের নিত্যদিনের জীবনযাপন। এর আগে গত মার্চে দেশটির একটি মসজিদে মার্কিন বিমান হামলার কবলে পড়লে অন্তত ৩৮ বেসামরিক সিরীয় নাগরিক নিহত হন।

সিরিয়ার আল-জিনাহ গ্রামের ওই মসজিদটি মার্কিন বিমান হামলার শিকার হয় এ বছরের মার্চে। এরপর মার্কিন বাহিনীর বিরুদ্ধে বেসামরিক হত্যার অভিযোগ ওঠে। অভিযোগ অস্বীকার করেন পেন্টাগনের মুখপাত্র নেভি ক্যাপ্টেন জেফ ডেভিস। তার দাবি, মসজিদ তাদের লক্ষ্যবস্তু ছিল না। তবে ওই হামলায় বেশ কয়েকজন আল-কায়েদা নেতা নিহত হয়েছিলেন।

এইচআরডাব্লিউ এবং লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওই মসজিদ সংলগ্ন এলাকায় দুটি ড্রোন এবং চারটি মিসাইল হামলা চালানো হয়। দুইটি তদন্ত প্রতিবেদনেই বেসামরিক জীবন নিয়ে মার্কিন বাহিনীর নিস্পৃহতা ও অজ্ঞতার আলামত মিলেছে। মার্কিন গোয়েন্দাদের ব্যর্থতার কারণেই ওই ৩৮টি জীবন ঝরে পড়েছে বলে উঠে এসেছে ওই দুই তদন্তে।

পেন্টাগন মুখপাত্র ডেভিসের দাবি, মসজিদে হামলা তাদের ভুল ছিল। তিনি সাংবাদিকদের হামলার একটি ছবি দেখান। ছবিতে থাকা ক্ষতিগ্রস্ত এক দালান দেখিয়ে দিয়ে বলেন, এটা মসজিদটির  বাম পাশ। ডেভিস দাবি করেন, বিমান হামলার সময় তারা ওই দালানটির অবস্থান শনাক্ত করতে পারেননি।

সর্বশেষ এ হামলার বিষয়ে এখনও পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে কোনও মন্তব্য করা হয়নি। তবে মঙ্গলবার সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে সিরিয়ায় মার্কিন নেতৃত্বাধীন বাহিনীর অভিযান শুরুর পর এ পর্যন্ত তাদের হামলায় অন্তত এক হাজার ২৬৪ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে কমপক্ষে ২৮০টি শিশুও রয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, একই সময়ে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের অনুগত বাহিনীর হামলায় অন্তত ১০ হাজার ৯১৫ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। এরমধ্যে দুই হাজার ৩৯৩টি শিশুও রয়েছে। এছাড়া হামলায় আহত হয়েছেন ৬৪ হাজার মানুষ। বিমান হামলা এবং হেলিকপ্টার থেকে নিক্ষেপ করা ব্যারেল বোমার আঘাতে এসব হতাহতের ঘটনা ঘটে।

সূত্র: আল জাজিরা।

/এমপি/