গাজায় বন্ধ হওয়ার পথে বিদ্যুৎ সরবরাহ

বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হলে মানবিক সংকটে পড়তে গাজাবৃহস্পতিবার ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ ইসরায়েলকে জানিয়ে দিয়েছে, গাজায় বিদুৎ সরবরাহের জন্য তারা ইসরায়েলকে আর কোনও অর্থ দেবে না। এর ফলে অন্ধকারে ডুবে যেতে পারে গাজা উপত্যকা। ইসরায়েলি কর্মকর্তারা খবরটি নিশ্চিত করেছেন বলে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা জানিয়েছে।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর একটি শাখা সিওজিএটি জানিয়েছে, মাহমুদ আব্বাসের সরকারের পক্ষ থেকে ইসরায়েলকে জানানো হয়েছে, গাজায় বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য তারা কোনও অর্থ পরিশোধ করবে না।

২০০৭ সালে ফিলিস্তিনে নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতার পর থেকে গাঁজা হামাসের অধীনে রয়েছে। আর তখন থেকে অর্থনৈতিক চাপ বাড়াচ্ছেন আব্বাস।

মাহমুদ আব্বাসের সরকার এ পদক্ষেপ গ্রহণ করলে গাজার প্রায় ২০ লাখ অধিবাসী অন্ধকারে নিমজ্জিত হবেন। মানবিক সংকট দেখা দিতে পারে।

বিশ্বব্যাংক যখন চলমান বিদুৎ ঘাটতি এবং ইসরাইলি অবরোধের ফলে অঞ্চলটিতে তীব্র মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছে ঠিক তখনই এ পদক্ষেপ গ্রহণের খবর এলো। ২০০৭ সালে থেকে এ পর্যন্ত ইসরাইলের সাথে তিনটি যুদ্ধে এলাকাটির অনেক অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে।

এ ঘটনার মাত্র এক সপ্তাহ আগে ফিলিস্তিন সরকার গাজার ৬০ হাজার সরকারি কর্মকর্তার বেতন ৩০ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছে, যদিও পশ্চিম তীরে এরকম কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। এর কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, বৈদেশিক সাহায্য কমে যাওয়ার ফলে এ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।

হামাসের কর্মকর্তা ইসমাইল রাদওয়ান অবরুদ্ধ গাজায় এমন পদক্ষেপ গ্রহণ করাকে ‘অযৌক্তিক’ বলে উল্লেখ করেছেন। ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

গাজায় প্রায় ৬২০ জন কিডনির রোগী রয়েছেন। তাদের সপ্তাহে তিন বার ডায়ালাইসিস করতে হয়। চিকিৎসার জন্য জেনারেটর চালাতে প্রতি ঘণ্টায় তাদের দুই হাজার লিটার তেল খরচ হয়।

বিদ্যুতের জন্য ইসরায়েলকে প্রতি মাসে ১১ মিলিয়ন ডলার দিতে হয় ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষকে। ফিলিস্তিনিদের কাছ থেকে আয়কর সংগ্রহের দায়িত্বও ইসরায়েলের হাতে। তারা ওই কর থেকে বিদ্যুতের অর্থ কেটে রাখে।

ইসরেয়েলি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গাজায় ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ করতে ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রযোজন। অথচ সব বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু থাকলেও তা পূরণ হয় না। গাজার বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে আসে ৬৫ মেগাওয়াট, ১২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসে ইসরায়েল থেকে আর ২৫ মেগাওয়াট আসে মিসর থেকে।

গাজার ৬৫ শতাংশ অধিবাসী দারিদ্য সীমার নিচে বাস করে, ৭২ শতাংশের কোনও খাদ্য নিরাপত্তা নেই, ৮০ শতাংশ মানুষ আন্তর্জাতিক সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল। অপরদিকে, ২০১৬ সালের শেষ চতুর্থাংশের হিসেব অনুযায়ী, গাজার ৪৩ শতাংশ মানুষই বেকার বলে ইউরোপীয় ইউনিয়নভিত্তিক মানবাধিকার পর্যবেক্ষক সংস্থা হিউম্যান রাইটস মনিটর জানিয়েছে।  

/এসএ/