জেনেভায় আলোচনার টেবিলে সিরিয়ার সরকার ও বিদ্রোহীরা

স্টাফান ডি মিস্তুরাসুইজারল্যান্ডের জেনেভায় শুরু হয়েছে সিরিয়া বিষয়ক ষষ্ঠ দফার শান্তি আলোচনা। ১৫ মে সোমবার এ দফার আলোচনার উদ্বোধনী সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেন সিরিয়া বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ দূত স্টাফান ডি মিস্তুরা। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে মূল আলোচনা শুরু হয়েছে মঙ্গলবার। এদিন শান্তি আলোচনার অংশ হিসেবে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে কথা বলেন স্টাফান ডি মিস্তুরা। সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ এবং দেশটির সরকারবিরোধী বিদ্রোহীরা এ আলোচনায় অংশ নিচ্ছে।

আলোচনায় সিরিয়ার পরবর্তী সরকার গঠন, সংবিধানের খসড়া প্রণয়ন, নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলার মতো নানা ইস্যু প্রধান্য পাবে। এর পাশাপাশি বিবদমান পক্ষগুলোর মধ্যকার মতপার্থক্য কমিয়ে আনার চেষ্টা চালাবে জাতিসংঘ। অবশ্য এর আগে জাতিসংঘের উদ্যোগে আরও পাঁচ দফা শান্তি আলোচনা হয়। সর্বশেষ শান্তি আলোচনা অনুষ্ঠিত হয় চলতি বছরের ২৩-৩১ মার্চ। তবে এসব আলোচনার সবগুলোই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। এবারের বৈঠক শেষ হবে আগামী ১৯ মে শুক্রবার।

এ দফার আলোচনায় আসাদ বাহিনীর নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাশার আল জাফরি। আর আসাদবিরোধী অংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন নসর আল হারিরি। দুই পক্ষের সঙ্গেই পৃথকভাবে আলোচনায় বসবেন জাতিসংঘের বিশেষ দূত স্টাফান ডি মিস্তুরা।

এদিকে জেনেভায় চলমান শান্তি আলোচনার মধ্যেই হত্যাযজ্ঞ গোপন করতে সিরিয়ার কারাগারে আসাদ বাহিনীর ‘লাশ পোড়ানোর চুল্লি’ পরিচালনার খবর পাওয়া গেছে। সামরিক কারাগারের বন্দিদের হত্যার তথ্য গোপন করতে ক্রিমেটোরিয়াম  বা ‘লাশ পোড়ানোর চুল্লি’ ব্যবহার করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্যুরো অব নিয়ার ইস্টার্ন অ্যাফেয়ার্সের ভারপ্রাপ্ত সহকারী মন্ত্রী স্টুয়ার্ট জোনস বলেন, ‘২০১৩ সালের পর সিরিয়া সরকার সেডনায়া কমপ্লেক্সে কিছু পরিবর্তন আনে। আমাদের বিশ্বাস সেটা লাশ পোড়ানোর চুল্লি।’

এ সময় স্যাটেলাইটের মাধ্যমে তোলা ছবিও দেখান স্টুয়ার্ট জোনস। সেখানে দামেস্কের উত্তরে একটি সামরিক কারাগার দেখা যায়। ছবিতে দেখা যায়, সেডনায়া কমপ্লেক্সের ছাদের বরফ গলে যাচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে ক্রিমেটোরিয়ামের উত্তাপের কারণেই এমনটা হয়েছে। এ ব্যাপারে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর নির্ভরযোগ্য তথ্য রয়েছে বলে জানান জোনস।

স্টুয়ার্ট জোনস দাবি করেন, প্রতিদিন প্রায় ৫০ জনের মতো বন্দিকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়। তবে ঠিক কতজন মারা গেছেন সেই বিষয়ে নিশ্চিত করেননি তিনি। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের একটি রিপোর্ট সামনে এনে জোনস আরও বলেন, ২০১১ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত সেডনায়ায় ৫ হাজার থেকে ১১ হাজার মানুষ মারা যায়। আর সে সময় ৬৫ হাজার থেকে ১ লাখ ১৭ হাজার ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে আসাদ সরকার।

এদিকে হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র শন স্পাইসার বলেন, ‘আসাদ সরকার ভ্রষ্টাচারের সীমা অতিক্রম করেছে। আর এটা অবশ্যই রাশিয়া ও ইরানের সমর্থনেই হয়েছে।’

সিরিয়ার পক্ষ থেকে অবশ্য সামরিক কারাগারে স্থাপিত চুল্লিতে লাশ পুড়িয়ে বন্দি হত্যার খবর অস্বীকার করা হয়েছে। ১৬ মে মঙ্গলবার দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের এমন অভিযোগ বাস্তবতা বিবর্জিত।

সূত্র: আল জাজিরা।

/এমপি/