ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট তেমারের ‘দুর্নীতির অডিও’ ফাঁস, অভিশংসনের দাবি

তেমার
দুর্নীতির অভিযোগে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দিলমা রৌসেফকে পদচ্যুত করার পর এবার দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট মাইকেল তেমারকেও অভিশংসনের দাবি উঠেছে। আলোচিত এক দুর্নীতির তদন্তে সম্ভাব্য এক সাক্ষীর মুখ বন্ধ রাখতে ঘুষ দেওয়ার অডিও ফাঁসের পর চাপের মুখে পড়েছেন তিনি। ওই সাক্ষী হলেন, সাবেক স্পিকার এদুয়ার্দো চুনহা। পেট্রোবাস দুর্নীতি মামলায় বর্তমানে কারাদণ্ড ভোগ করছেন তিনি। এ দুর্নীতির ঘটনাকে কেন্দ্র করেই সাবেক প্রেসিডেন্ট দিলমা রৌসেফকে অভিশংসিত করা হয়েছিল। অবশ্য, ব্রাজিলের সংবাদমাধ্যম 'ও গ্লোবোতে' ফাঁস হওয়া খবরটি অস্বীকার করেছেন তেমার।

ব্রাজিলের পত্রিকা ‘ও গ্লোবোর’ প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, প্রসিকিউটরদের কাছে একটি অডিও টেপ জমা দিয়েছেন জোসলি বাতিস্তা ও ওয়েসলি বাতিস্তা নামের দুই ভাই। ব্রাজিলের মাংস প্যাকেটজাতকারী সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান জেবিএস পরিচালনা করেন তারা। অডিও টেপে শোনা যায়, তদন্তে যেন নিজের নাম না আসে তার জন্য চুনহাকে ঘুষ দেওয়া নিয়ে ওই দুই ভাইয়ের সঙ্গে আলোচনা করছেন তেমার।

তেমারের দল ব্রাজিলিয়ান ডেমোক্র্যাটিক মুভমেন্ট এর সদস্য ছিলেন দুর্নীতির অভিযোগে কারাদণ্ডরত চুনহা। সাবেক সহকর্মীদের অনেক গোপন তথ্য সম্পর্কেই জানার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তিনি।

গ্লোবোর তথ্য অনুযায়ী, মার্চে গোপনে রেকর্ড করা ওই অডিওতে শোনা যায়, জোসলি তেমারকে বলছেন, চুনহাকে চুপ রাখার জন্য তিনি তাকে টাকা দিচ্ছেন। তখন তেমারকে বলতে শোনা যায়, ‘তুমি এটা চালিয়ে যাও, ঠিক আছে?’

অবশ্য, ওই কণ্ঠস্বর আদৌ তেমারের কিনা সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ফাঁস হওয়া অডিওর ব্যাপারে সুপ্রিমকোর্টের পক্ষ থেকেও কিছু বলা হচ্ছে না।

তবে এ খবর প্রকাশ্যে আসার পর তেমার তুমুল সমালোচনার মুখে পড়েছেন। কংগ্রেসে তেমারের বিপক্ষের নেতারা অভিশংসনের দাবি করেছেন। সাও পাওলো ও ব্রাসিলিয়ার রাস্তায় বিক্ষোভও হয়েছে। প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের দাবি করে বিক্ষোভকারীদের স্লোগান দিতে দেখা গেছে।

অবশ্য, তেমারের দফতার থেকে দাবি করা হয়েছে, এ অভিযোগ সত্য নয়। তেমার কখনও বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের তদন্তে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেননি বলেও দাবি করা হয়েছে। তবে মার্চ মাসে জেবিএস কোম্পানির দুই ভাইয়ের সঙ্গে তার সাক্ষাতের খবর স্বীকার করা হয়েছে। কিন্তু  তেমারের দফতরের দাবি, তাদের মধ্যে দর কষাকষি নিয়ে কোনও কথা হয়নি।

২০১৪ সালে পুনঃনির্বাচনের সময় বাজেট আইন ভঙ্গ করে সরকারি হিসেবে কারসাজি এবং রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানি পেট্রোবাসের কোটি টাকার একটি প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর অভিশংসিত হন রৌসেফ। তার স্থলাভিষিক্ত হন সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট তেমার। গত বছরের মে মাসে রৌসেফকে সাময়িক পদচ্যুত করার পর পরই মার্কিন বুদ্ধিজীবী নোম চমস্কি বলেছিলেন চোরেরাই রৌসেফকে ক্ষমতাচ্যুত করেছে। সেসময় চমস্কি বলেছিলেন,‘তেমার হলেন বিরোধী দল পিএমডিবি পার্টির সদস্য। তিনি ব্রাজিলের রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানি পেট্রোব্রাস কেলেঙ্কারিসহ বড় বড় কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত। তিনি এখন শ্বেতাঙ্গ আর পুরুষ আধিপত্যপূর্ণ একটি মন্ত্রিসভা সাজিয়েছেন। তাদেরকে পুঁজিবাদবান্ধব নীতিমালা বাস্তবায়নের দায়িত্ব দিয়েছেন।’
/এফইউ/