আমেরিকা-আইএস-ইরাকি বাহিনী; সবাই মিলে খুন করছে মসুলের বেসামরিকদের

31099_f181b678_149514579646_480_270

আইএসের দখলে থাকা মসুল থেকে পালানোর সময় নিহত হচ্ছেন বেসামরিক নাগরিকরা। জাতিসংঘ বলছে আইএস এখন সরাসরি সাধারণ মানুষকে টার্গেট করছে। এছাড়া মার্কিন বিমান হামলায়ও প্রাণ হারাতে হচ্ছে বেসামরিকদের। ফলে আকাশ ও স্থল কোথাও নিরাপদে নেই মসুলের বাসিন্দারা।জাতিসংঘের হিসাবে অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া লড়াইতে মসুলে কমপক্ষে ৮ হাজার বেসামরিক হতাহতের শিকার হয়েছে। ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন প্রায় ৬লাখ মানুষ।

ইরাকি বাহিনী এবং পশ্চিমা মিত্রদের দাবি অক্টোবর শুরু হওয়া লড়াই শেষ হতে চলেছে। আইএস এখন মসুলের পুরোনো শহরটির কিছু এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে। ইরাকিদের হিসবে মতে, মসুলে এখন আইএসের হাজার খানেক যোদ্ধা রয়েছে। অক্টোবরে এই সংখ্যা ছিল পাঁচ থেকে ছয় হাজার। তবে জাতিসংঘ জানায়, চূড়ান্ত পর্যায়ের এই লড়াই আটকে পড়া মানুষজনের জন্য ভয়ানক বিপদ ডেকে এনেছে। ইরাকে জাতিসংঘের ত্রাণ সমন্বয়কারী লিজে গ্র্যান্ডে বিবিসিকে বলেছেন, মসুলে জীবনের ঝুঁকির পাশাপাশি পানি এবং বিদ্যুতের সঙ্কট অবর্ণনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে।

শুধু যে আইএসের হাতে প্রাণ যাচ্ছে তাই নয়, ইরাকি বাহিনী এবং তাদের সমর্থিত যোদ্ধাদের গোলাবর্ষণ এবং যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলাতেও প্রাণহানি হচ্ছে। মসুলে আটকা পড়া এক প্রত্যক্ষদর্শী ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ইন্ডিপেন্ডেন্টকে জানায়, টাইগ্রিস নদী পার হওয়ার সময় আইএস ও ইরাকি বাহিনী উভয়ই বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা করছেন।

জসিম নামে ৩৩ বছর বয়সী ওই ইরাকি জানান, ‘আমি আমার মাকে বাঁচাতে চাই। তাকে শহরের পূর্বাঞ্চলে নিয়ে যেতে চাই। কিন্তু এটা খুবই বিপজ্জনক। আমাদের তিন প্রতিবেশী নদী পার হওয়ার সময় মারা গেছেন। দূর থেকে স্নাইপাররা তাদের হত্যা করেছে।’ তিনি বলেন, নদীর ৫ম ও ৬ষ্ঠ ব্রিজে গুলি করে আইএস স্নাইপাররা। রাতেও তারা গুলি করেন। ইরাকি বাহিনী ও ফেডারেল পুলিশ রাতে ওই নদী পার হওয়ার চেষ্টা করা সবাইকেই গুলি করে। কারণ রাতে সেখানে কারফিউ জারি থাকে। তারা মনে করে আইএস সেনারা হয়তো পালানোর চেষ্টা করছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইরাকি বাহিনী এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাও এটা স্বীকার করছেন। তিনি বলেন, বিমান হামলার কারণে অনেক বেসামরিক প্রাণ হারাচ্ছেন। আর রাশিয়ার তৈরি মর্টারগুলোতেও কোন গাইডেন্স সিস্টেম নেই।

যুক্তরাষ্ট্রও স্বীকার করেছে এক মার্চ মাসেই মসুলে তাদের বিমান হামলায় ১০৫ জন ইরাকির জীবন গেছে। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এই সংখ্যা দুই শতাধিক। শুধু যে আইএস যোদ্ধা বা মসুলে আটকে পড়া লোকজনের প্রাণ যাচ্ছে তাই নয়। অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত ছয় মাসে মসুলে ইরাকি সেনাবাহিনীর ৭৭৪ জন মারা গেছে। আহত হয়েছে ৪৬০০।

ইরাকের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই শহরের পূর্বাংশ জানুয়ারিতে সরকারি বাহিনীর কব্জায় চলে আসে। জাতিসংঘ ত্রাণ সমন্বয়কারী বলছেন, ‘একদিকে আইএস এখন সরাসরি সাধারণ মানুষজনকে টার্গেট করছে, অন্যদিকে খাদ্য আর ওষুধের নিদারুণ সঙ্কট চলছে, পানি এবং বিদ্যুৎ বলতে গেলে নেই। ভেতর থেকে পাওয়া খবরাখবরে বোঝা যায় আটকে পড়া লোকজন ঘোরতর বিপদে পড়েছে।’

mosul-children-2

খাবারের অবস্থা নিয়ে জসিম বলেন, আমরা এলাকার মানুষরা ময়লা ফেলার স্থানে গিয়ে সন্ধান যদি কোনও খাবার খুঁজে পাওয়া যায়। গত এক মাস ধরে কোনও সবজি বা ফলমূল নেই। বাচ্চাদের জন্য তার পরিবার অল্প কিছু আটা ও চাল সংরক্ষণ করে রেখেছেন। অন্য এলাকায় খাবারের সন্ধানে বের হন জসিম। তিনি বলেন, যেখানে খাবার পাওয়া যায় তা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। সেখানে অনেকেই ভিক্ষা করেন যেন কেউ খাবার কিনে দেন। নিকটবর্তী একমাত্র কুয়া থেকে পানি নেওয়ার জন্য পেট্রোল দিতে হয়। আর পাম্প চালানোর জন্য এই পেট্রোলও অনেক ব্যয়বহুল।

বেশিরভাগ ইরাকিই এখন শুধু রুটি ও পানি খেয়ে বেঁচে আছেন বলে উল্লেখ করেন তিনি। এছাড়া বিদ্যুৎ সংযোগও খুব সীমিত। তিনদিনে হয়তো দুই ঘণ্টার জন্য বিদ্যুৎ পাওয়া যায়। অনেক জায়গায় হয়তো এক মাসেও দেখা মেলে না বিদ্যুতের। অনেকেই অন্য এলাকায় গিয়ে মোবাইলে চার্জ দেন। শুধুমাত্র রাতেই মোবাইলের নেটওয়ার্ক পাওয়া যায়, কারণ তখন মসুলের পূর্বাঞ্চলে বিদ্যুৎ থাকে আর সেখানেই মোবাইলের নেটওয়ার্ক টাওয়ারগুলো অবস্থিত।

সূত্র: বিবিসি ও দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট

/এমএইচ/