কাতারবিরোধী অবরোধে উদ্বেগ রাশিয়ার

কাতারের বিরুদ্ধে সৌদি আরবের নেতৃত্বে ছয় আরব দেশের স্থল, নৌ ও বিমান অবরোধে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে রাশিয়া। চলমান সংকট নিরসনে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ। শনিবার রাশিয়ার রাজধানী মস্কো-তে কাতারি পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুল রাহমান আল থানি-র সঙ্গে বৈঠকের পর এ আহ্বান জানান রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম রয়টার্স।

বৈঠকে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাতারি মন্ত্রীকে বলেন, রাশিয়ার নীতি হচ্ছে আমরা অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ কিংবা অন্য কোনও দেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বিষয়ে হস্তক্ষেপ করি না। কিন্তু আমাদের অংশীদারদের মধ্যে যখন সম্পর্কের ব্যাঘাত ঘটে সেটা আমাদের জন্য সুখকর নয়। সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো আগ্রহী হলে তাদের সম্মতিতে সংকট নিরসনে মধ্যস্থতা করতে রাশিয়া প্রস্তুত।

সের্গেই ল্যাভরভ বলেন, আমরা সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বিরোধী মীমাংসার আহ্বান জানাচ্ছি।

কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুল রাহমান আল থানি বলেন, তার দেশ আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সংকট উত্তরণে বিশ্বাসী।

এর একদিন আগেই কাতারের ওপর থেকে অবরোধ প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছে জার্মানি। শুক্রবার কাতারি পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুল রাহমান আল থানি-র সঙ্গে বৈঠকের পর এ আহ্বান জানান জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিগমার গ্যাব্রিয়েল।

জার্মানিতে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বিদ্যমান সংকট নিরসনে কূটনৈতিক প্রচেষ্টার ওপর জোর দেন সিগমার গ্যাব্রিয়েল। তিনি বলেন, আরব দেশগুলো কর্তৃক কাতারকে একঘরে করে ফেলা একটা সম্মিলিত শাস্তি। এই অবরোধ আন্তর্জাতিক আইনের পরিষ্কার লঙ্ঘন।

জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের বিশ্বাস কূটনৈতিক উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে পরস্পরের সঙ্গে কথা বলা উচিত। এ বিষয়ে আমাদের মার্কিন সহকর্মী এবং এ অঞ্চলের সব সহকর্মীদের কথা বলতে হবে। আমাদের অবশ্যই সমাধানের পথ খুঁজে বের করার চেষ্টা করতে হবে। বিশেষ করে কাতারের নৌ এবং বিমানসীমায় আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে হবে।

সিগমার গ্যাব্রিয়েল বলেন, খাদ্য সরবরাহসহ আরও নানা বিষয়ে কাতারের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে।

এদিকে কাতারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার পর এবার দেশটির বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের  হুমকি দিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। সৌদি আরবের আরেক মিত্র বাহরাইন বলেছে, দোহা’র বিরুদ্ধে যে কোনও পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়টি আলোচনার টেবিলে রয়েছে।

উত্তেজনা প্রশনে কুয়েতের আমিরের আন্তরিক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও আক্রমণাত্মক ভাষায় কথা বলছে সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন ছয় আরব দেশ। সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনওয়ার গারগাশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, প্রয়োজনে কাতারের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে।

ফ্রান্স ২৪ টেলিভিশনকে তিনি বলেন, পরবর্তী পদক্ষেপের অর্থই হচ্ছে কাতারের ওপর অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করা।

বাহরাইনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ খালিদ বিন আহমেদ আল খলিফা সৌদি সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, কাতার আদৌ তার আচরণ  বদলাবে কিনা-এ ব্যাপারে সন্দেহ রয়েছে।

তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের স্বার্থ রক্ষায় কোনও দ্বিধা করবো না। কাতার থেকে সুরক্ষায় আমাদের সামনে যে রাস্তা কোনও বিকল্প গ্রহণের পথ উন্মুক্ত রয়েছে।’

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তুরস্ক ও ইরানমুখী হচ্ছে দোহা। এছাড়া রাশিয়া, ফ্রান্স ও জার্মানির মতো দেশগুলোর সঙ্গেও যোগাযোগ অব্যাহত রাখছেন কাতারি কর্মকর্তারা। একইসঙ্গে সৌদি আরবের দাবি অনুযায়ী কাতারের পররাষ্ট্রনীতি পরিবর্তন করা হবে না বলে জানিয়েছেন কাতারি পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, পররাষ্ট্রনীতি বিসর্জন দিয়ে কারও বশ্যতা স্বীকার করবে না কাতার। সূত্র: রয়টার্স, আল জাজিরা।

/এমপি/