গ্রেনফেলে ব্যবহৃত বিতর্কিত ক্ল্যাডিং যুক্তরাজ্যেও নিষিদ্ধ: ব্রিটিশ অর্থমন্ত্রী

লন্ডনের গ্রেনফেল টাওয়ারে আগুন ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে পড়ার জন্য ভবনে ব্যবহৃত যে বিতর্কিত ক্ল্যাডিংকে দায়ী বলে মনে করা হচ্ছে তা যুক্তরাজ্যেও নিষিদ্ধ বলে জানিয়েছেন ব্রিটিশ অর্থমন্ত্রী ফিলিপ হ্যামন্ড। যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানির উঁচু ভবনে এ বিতর্কিত ক্ল্যাডিং ব্যবহার নিষিদ্ধ হলেও তা যুক্তরাজ্যের ভবনে ব্যবহার করায় এতোদিন সমালোচনা চলছিল। আর এই প্রেক্ষাপটে বিবিসি ওয়ানের অ্যান্ড্রু মার শোতে হ্যামন্ড জানান, কেবল যুক্তরাষ্ট্র আর ইউরোপই নয়, ওই দাহ্য ক্ল্যাডিং যুক্তরাজ্যেও নিষিদ্ধ।

ফিলিপ হ্যামন্ড
১৯৭৩ সালে নির্মিত গ্রেনফেল টাওয়ার ভবনটিকে গত বছরই সংস্কার করা হয়েছিল। সেসময়ই তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ আর আধুনিকায়নের জন্য বৃষ্টি প্রতিরোধী এক প্রলেপ ব্যবহার করা হয়েছিল ভবনে। সে কারণে তৃতীয়/চতুর্থ তলার আগুন খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ধারণা করা হচ্ছে গ্রেনফেলের ভবনে অপেক্ষাকৃত সস্তা ও অনেক বেশি দাহ্য পলিথিলিন কোর ব্যবহার করেছেন ঠিকাদাররা। আর এ দাহ্য ক্ল্যাডিং এর কারণেই আগুন ছড়িয়ে পড়েছে।

অ্যান্ড্রু মার শোতে ফিলিপ হ্যামন্ড বলেন, ‘ক্ল্যাডিংই প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। এ দাহ্য ক্ল্যাডিং যেটি যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে নিষিদ্ধ সেটির ব্যবহারের অনুমতি এখানেও নেই। সুতরাং দুটি আলাদা প্রশ্ন উঠতে পারে। এর একটি হলো: আমাদের কর্তৃপক্ষীয় নিয়ন্ত্রণ ও নির্দেশনা ঠিক আছে কিনা, সঠিক ধরনের উপকরণকে অনুমোদন এবং ভুল জিনিসকে নিষিদ্ধ করা হচ্ছে তো? দ্বিতীয় প্রশ্নটি হলো: কোথায় এটি সঠিকভাবে মেনে চলা হচ্ছে? এ বিষয়গুলোকে মাথায় রেখে তদন্ত চালানো হবে। অপরাধের তদন্তের ক্ষেত্রেও এ বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া হবে।’

হ্যামন্ড বলেন, সংস্কার কাজের সময় গ্রেনফেলে যে ক্ল্যাডিং ব্যবহার করা হয়েছে তা দাহ্য পলিথিলিন যুক্ত বলে বিশ্বাস করেন তিনি। আর, গ্রেনফেলের মতো উঁচু ভবনে সে ক্ল্যাডিং এর ব্যবহার নিষিদ্ধ। এক্ষেত্রে নিয়ম-নীতি ঠিকমতো পালন করা হয়েছিল কিনা তা নিয়েও তদন্ত হচ্ছে বলে জানান হ্যামন্ড। ২০১৬ সালে ভবনটির সংস্কার কাজ করা রাইডন কন্সট্রাকশন অবশ্য দাবি করেছে তারা সবরকম অগ্নি-নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছে। এক বিবৃতিতে তারা জানায়, ‘আমরা গ্রেনফেল টাওয়ারের অগ্নিকাণ্ডের কথা শুনে খুবই মর্মাহত। হতাহত আর তাদের পরিবারের পাশে রয়েছি। রাইডন সংস্কার কাজ শেষ হয়েছে ২০১৬ সালের গ্রীষ্মে। সেসময় সকল প্রকার অগ্নিনিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে।’ তারা আরও জানায়, ‘আমরা এবিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও জরুরি সার্ভিসের সঙ্গে একযোগে কাজ করবো। এদিকে গ্রেনফেল অ্যাকশন গ্রুপ অনেকদিন ধরেই দাবি করে আসছিলো যে ভবনটি নিরাপদ নয়। আগুন লাগার পর তারা আক্ষেপের সঙ্গে জানায়, ‘আমরা বারবার সতর্ক করে দেওয়ার পরও কেউ শোনেননি। আমরা সবসময়ই বলে এসেছি যেকোন সময় এমন দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।’

ক্ল্যাডিং সাধারণত কাঠ,প্লাস্টিক কিংবা মেটাল দিয়ে তৈরি করা হয়। এটি পানি বা বাষ্প বের হওয়ার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করে। এতে করে বৃষ্টির পানি দেয়ালে প্রবেশ করতে পারে না। এছাড়া নিচের প্রলেপে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণেরও ব্যবস্থা রয়েছে। অগ্নি-নিরাপত্তা বিষয়ক বিশেষজ্ঞ গ্রাহাম ফিল্ডহাউস বলেন,‘ক্ল্যাডিংয়ের পেছনের বস্তুগুলো অদাহ্য হওয়ার কথা। আমি জানি না তারা কোনও বিশেষজ্ঞর পরামর্শ নিয়েছে কিনা।’ তিনিও মনে করেন বৃষ্টি প্রতিরোধক এই ক্ল্যাডিংয়ের কারণেই আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে।

/এফইউ/