‘ভারতের সীমানায় ঢুকে দেখুক চীন, বুঝবে কী হয়’

ভারতীয় প্যরা কমান্ডো বাহিনীর একদল সদস্যচীন, ভুটান আর ভারতের সিকিম প্রদেশের সংযোগস্থলে সম্প্রতি চীন ও ভারতের মধ্যে সামরিক উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ভারতীয় নিরাপত্তা বিশ্লেষক মারুফ রাজার বিশ্লেষণ প্রকাশিত হয়েছে বিবিসি’র হিন্দি ওয়েবসাইটে। বিশ্লেষণটির অনুবাদ এখানে তুলে ধরা হলো।

চীন বারবারই ১৯৬২ সালের যুদ্ধের কথা শোনায়। কিন্তু ওরা ভুলে যায় যে, ওই যুদ্ধের পর আরও ৫৫ বছর পেরিয়ে গেছে। ১৯৬৭ সালে নাথুলা পাসে দুই দেশের মধ্যে যে সংঘর্ষ হয়েছিল, তাতে ভারত কী রকম জবাব দিয়েছিল তা বোধ হয় চীন ভুলে গেছে। তারপরেও ১৯৮৭ সালে সুন্দরম চু এলাকা দিয়ে চীনা সেনারা ভারতে ঢোকার চেষ্টা করেছিল। তৎকালীন ভারতীয় সেনাধ্যক্ষ জেনারেল সুন্দরজী তাদেরকে এমন প্যাঁচে ফেলেছিলেন যে, ওদের লুকিয়ে পালাতে হয়েছিল ভারত ছেড়ে।

চীনের মনে রাখা উচিত যে, ১৯৭৯ সালে ভিয়েতনামকে 'উচিত শিক্ষা' দিতে গিয়ে ওদের নিজেদেরই কী শিক্ষা হয়েছিল! সেজন্যই ফালতু আর বাচ্চাদের মতো হুমকি যেন চীন না দেয়।

১৯৬২ সালের যুদ্ধের সময়ে সেনা অভিযানের সব নিয়ন্ত্রণ রাজনৈতিক নেতৃত্ব নিজের হাতে নিয়ে নিয়েছিল। বেশকিছু জেনারেল নিজের দায়িত্ব পুরোপুরি পালন করেননি। এ কারণেই চীনের কাছে পর্যুদস্ত হয়েছিল ভারত।

৬২ সালের যুদ্ধ নিয়ে যত বই বেরিয়েছে, সেগুলো পড়লেই বোঝা যায়, সেনাবাহিনী সব দায় দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রী নেহরু আর তার প্রতিরক্ষামন্ত্রী ভি কে কৃষ্ণ মেননের ওপরে ছেড়ে দিয়েছিল। ভারতীয় সেনাবাহিনী ঠিকমতো যুদ্ধের প্রস্তুতিও নিতে পারেনি। সেই সময়ে বরফে ঢাকা এলাকায় যুদ্ধ করার মতো পোশাক অথবা অস্ত্র - কিছুই ঠিকমতো ছিল না। প্রচণ্ড ঠাণ্ডার মধ্যে টিকে থাকার মতো প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণও তখন ছিল না তাদের। এরমধ্যেই নেহরু আর মেনন ভরসা করেছিলেন যে, তারা সমস্যার একটা রাজনৈতিক সমাধান করে ফেলতে পারবেন। তারা ভেবেছিলেন যে, জাতিসংঘে ভাষণ শুনিয়ে চীনকে পিছু হঠতে বাধ্য করতে পারবেন তারা। তবে তাদের কোনও প্রচেষ্টাই সফল হয়নি।

noname

৫৫ বছর পরে এখন কিন্তু আর সেই অবস্থা নেই। সাড়ে পাঁচ দশক ধরে ভারতীয় সেনাবাহিনী সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে। সঙ্গে রয়েছে বিমানবাহিনীর শক্তিও।

১৯৬২ সালে ভারত বিমানবাহিনীকে ব্যবহার করেনি। কিন্তু এখন ভারতের কাছে সেই শক্তি রয়েছে। শুধু চীনের মোকাবিলা করা যাবে তাই নয়, তাদের পথরোধও করা যাবে। গোটা চীন হয়তো দখল করে নেওয়া যাবে না; কিন্তু মুখোমুখি লড়াই করতে এখন সক্ষম ভারতীয় বাহিনী।

এটা ঠিকই, চীন অর্থনৈতিক আর সামরিকভাবে শক্তিশালী। ভারতের থেকে অনেক বেশিই শক্তিশালী তারা। আণবিক শক্তিতেও তারা ভারতের চেয়ে বেশি ক্ষমতাবান। কিন্তু এখন যে অঞ্চলে দুই দেশের মধ্যে সমস্যাটা বেঁধেছে, সেখানে চীন খুব একটা শক্তিশালী অবস্থানে নেই। এর বেশ কয়েকটা কারণ রয়েছে।

চীন-ভারত সীমান্ত এলাকায় অবস্থিত নাথু লা গিরিপথ

প্রথমত, ওই এলাকায় চীনা সেনাবাহিনীর লজিস্টিকস লাইন আপ অনেকটা দূরে। বহুদূর থেকে তাদের রসদ আনতে হবে। দ্বিতীয়ত, পাহাড়ি এলাকায় যে বাহিনী নিজেদের অবস্থান রক্ষা করছে, তাদের উৎখাত করতে গেলে আক্রমণকারীকে ১০ গুণ বেশি শক্তি প্রয়োগ করতে হয়। এখন সিকিমের ওই অঞ্চলে ভারত কিন্তু নিজেদের এলাকা ডিফেন্ড বা রক্ষা করছে। চীনের মতো আক্রমণাত্মক ভূমিকায় নেই ভারত। তাই ভারতীয় সেনাদের ওখান থেকে সরিয়ে দিতে গেলে চীনা বাহিনীকে অনেক বেশি শক্তি প্রয়োগ করতে হবে। সেটা করার আগে চীন নিশ্চয়ই কয়েকবার ভাববে।

আরেকটা বড় কারণ হল, চীনের চারদিকে ১৪টা দেশ রয়েছে। যদি ভারতের সঙ্গে যুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হয়, তাহলে চীনের বাকি শত্রু দেশগুলো চুপ করে বসে থাকবে না। এটা চীন ভালো করেই জানে। অন্তত জাপান আর ভিয়েতনাম চুপ করে বসে থাকবে না। ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক রয়েছে এরকম আরও কিছু দেশও চীনের ওপর চাপ তৈরি করবে। তাই স্বপ্ন দেখা ছেড়ে দেওয়া উচিত চীনের।

ভারতের বিরুদ্ধে 'অনুপ্রবেশের' অভিযোগ চীনের

১৯৬২ সালের পর থেকে এখন পরিস্থিতি অনেকটাই আলাদা। ভারতীয় সেনাবাহিনীর মনোবল আগের চেয়ে অনেক বেশি। সেনা নায়করাও সেই সময়ের চেয়ে অনেক উন্নত। অস্ত্রসজ্জা, প্রশিক্ষণ, মিসাইল তো রয়েছেই। সঙ্গে আছে বিমানবাহিনীর শক্তি। চীন দখল করতে চায় না ভারত। কিন্তু যদি চীন ভারতের সীমানা লঙ্ঘন করার চেষ্টা করে, তাহলে তাদের হাল খারাপ হয়ে যাবে। সূত্র: বিবিসি বাংলা।

/এমপি/