ইয়েমেনে সৌদি জোটের হামলায় ২০ বেসামরিক নাগরিক নিহত

nonameইয়েমেনে সৌদি জোটের হামলায় অন্তত ২০ বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে একই পরিবারের নারী এবং শিশুরাও রয়েছে। মঙ্গলবার ইয়েমেনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় তাইজ এলাকায় সৌদি জোটের বিমান হামলায় এ প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। ইয়েমেন সরকার এ বিস্ফোরণ ও প্রাণহানির খবর নিশ্চিত করেছে। বুধবার এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে আল জাজিরা।

যে এলাকায় হামলায় এ প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে সেখানে গৃহহীন কয়েকটি পরিবারের সদস্যদের বসবাস ছিল। ফলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, এসব পরিবারের সদস্যরাই মূলত সৌদি জোটের বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন।

মঙ্গলবারের হামলাকে দুর্ভাগ্যজনক আখ্যায়িত করে এ ব্যাপারে সরকারি তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন ইয়েমেনের মানবাধিকার বিষয়ক মন্ত্রী মোহাম্মদ আসকার। এ হামলাকে ভয়ঙ্কর অপরাধ হিসেবে বর্ণনা করে এর নিন্দা জানিয়েছেন হুথি বিদ্রোহী গ্রুপের মুখপাত্র মোহাম্মদ আবদুল সালাম।

এক বিবৃতিতে এ হামলা ও প্রাণহানির ঘটনায় গভীর শোক জানিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইসসিআর।

পুরো ইয়েমেনে এখন বহু স্থানেই চারদিকে ছড়িয়ে আছে ধ্বংসস্তূপ। ভাঙা খাম্বা, ধসে পড়া ছাদ, এবড়োথেবড়ো পথে থাকা লোহা আর মাটিতে মিশে আছে বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী। অথচ এখানেই কয়েকশ বছর ধরে বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী বেচাকেনা হয়েছে। এখন শুধু দেখা যায়, পড়ে থাকা কোকের মতো কয়েকটি কোমল পানীয়ের বোতল, অর্ধেক পুড়ে যাওয়া একটি সোফা। আশপাশে তাকালে হয়তো দেখা যাবে, কাঠের লাঠি হাতে মূল্যবান কিছু খুঁজছে কয়েকটি শিশু। সৌদি জোটের অব্যাহত নির্বিচার সামরিক অভিযানে বিরানভূমিতে পরিণত হয়েছে দেশটির বহু জনপদ। ইসলামিক স্টেট (আইএস)-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ, সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ আর শরণার্থী সংকটের ভিড়ে ইয়েমেন বিশ্বের নজর কাড়তে পারেনি। অথচ এ যুদ্ধে এ পর্যন্ত ১০ হাজারেরও বেশি মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। ঘরবাড়ি হারিয়েছেন অন্তত ৩০ লাখ মানুষ। আর দেশ ছেড়েছেন ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ। দেশটির অর্ধেকেরও বেশি এলাকায় বিরাজ করছে খাদ্যাভাব। অভুক্ত অবস্থায় রয়েছেন ইয়েমেনের বহু নাগরিক।

noname

পরাশক্তিগুলোর ছায়াযুদ্ধের পুতুল হয়ে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইয়েমেনে এ বিভীষিকা ছড়াচ্ছে সৌদি আরব। ইরানের সমর্থন নিয়ে ইয়েমেনের সরকারকে উচ্ছেদ করা হুথি বিদ্রোহীদের দমনে সেখানে একতরফা যুদ্ধ শুরু করেছে সৌদি আরব। সঙ্গে আছে সৌদিপন্থী মধ্যপ্রাচ্যের আরও কয়েকটি দেশ। ফলে ইরান ও সৌদি আরবের বিরোধের বলি হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।

ইয়েমেনের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সবসময়ই জটিল ছিল। দেশটিতে রয়েছে স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী, উপজাতি ও সশস্ত্র বাহিনী। জিহাদিদের লক্ষ্য করে ড্রোন হামলা চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। সৌদি আরবের বিমান হামলার সদর দফতরের পাশে থাকেন যুক্তরাজ্যের সামরিক উপদেষ্টারা।

সাদাহ নগর পরিষদের একজন সদস্য শেখ আহমেদ। তার প্রশ্ন, কেন আমাদের পুরনো বাড়ি ও মার্কেটে বোমা হামলা চালাচ্ছে সৌদি আরব? উত্তরটা তিনি নিজেই দিলেন, সৌদি আরব আমাদের ঘৃণা করে বলেই এ হামলা চালাচ্ছে।

ইয়েমেনের ৮০ শতাংশ মানুষের জরুরি ত্রাণ সহায়তা প্রয়োজন বলে মনে করে খোদ জাতিসংঘ। এ মুহূর্তে দেশটি দুর্ভিক্ষের কাছাকাছি অবস্থায় চলে গেছে বলে মনে করেন সংস্থাটির আন্ডার-সেক্রেটারি-জেনারেল স্টিফেন ও’ব্রায়েন। তিনি জানিয়েছেন, ইয়েমেনের দুই কোটি ২৪ লাখ নাগরিকের মধ্যে দুই কোটি ১২ লাখ মানুষেরই জরুরি ত্রাণ সহায়তা প্রয়োজন। তিন লাখ ৭০ হাজার শিশুসহ অন্তত ২০ লাখ মানুষ ক্ষুধা ও অপুষ্টিতে ভুগছেন।

যুদ্ধ শুরুর পর গত দুই বছরে শিশুদের অপুষ্টি বেড়েছে ২০০ শতাংশ। চিকিৎসা সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর অর্ধেকেরও বেশি ধ্বংস হয়ে গেছে। বাকিগুলোর বেশিরভাগই অর্থের অভাবে চিকিৎসা সেবা বন্ধ করে দিয়েছে। প্রধান প্রধান সড়ক ও সেতু বার বার বোমার আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পরিস্থিতি আরও জটিল করেছে।

জাতিসংঘ কর্মকর্তারা অভিযোগ করেছেন, বিশ্ব ইয়েমেনের মানবিক সংকটের বিষয়টি অগ্রাহ্য করছে। ইয়েমেনে জাতিসংঘের শীর্ষ কর্মকর্তা জ্যামি ম্যাকগোল্ডরিক বলেন, এ অঞ্চল নিয়ে রাজনৈতিক পরিস্থিতি মানবিকতাকে ছাপিয়ে গেছে। এখানে মানবিকতা আর কাজ করছে না। ইয়েমেনে যা ঘটছে তা চোখ বন্ধ করে এড়িয়ে যাচ্ছে বিশ্ব।

/এমপি/