বাংলাদেশে জঙ্গি কর্মকাণ্ড বাড়লেও দমনে তৎপর সরকার: যুক্তরাষ্ট্র

২০১৬ সালে বাংলাদেশে জঙ্গি কর্মকাণ্ড বেড়েছে বলে দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে একই সন্ত্রাস মোকাবেলায় বাংলাদেশ সরকারের তৎপরতার প্রশংসা করেছে তারা। বুধবার দেশটির পররাষ্ট্র দফতর থেকে প্রকাশিত ‘কান্ট্রি রিপোর্ট অন টেরোরজিম’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে আসে। মার্কিন সরকারের পক্ষ থেকে প্রতি বছর ওই রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়।
মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর

কান্ট্রি রিপোর্ট অন টেরোরজিম শীর্ষক প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, ২০১৬ সালে বিশ্বজুড়ে মোট জঙ্গি হামলা আগের বছরের তুলনায় ৯ শতাংশ কমেছে। এসব হামলায় নিহতের সংখ্যাও কমেছে ১৩ শতাংশ। একই সময়ে বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ড আগের বছরের তুলনায় ‘উল্লেখযোগ্য হারে’ বেড়েছে। তবে গুলশান-শোলাকিয়া হামলার পর জঙ্গিবাদ নির্মূলে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।   

প্রতিবেদনে উঠে আসে ২০১৫ সালের শুরু থেকে ২০১৬ সালের মধ্যভাগ পর্যন্ত একের পর এক কুপিয়ে ও গুলি করে মুক্তমনা লেখক, অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট, বিদেশি, ধর্মীয় সংখ্যালঘু গোষ্ঠীসহ বিভিন্নজনকে ‘টার্গেট কিলিংয়ের’ ঘটনা। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, ওইসব হামলার ঘটনায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট-আইএস এবং আল কায়েদার ভারতীয় উপমহাদেশ শাখা একিউআইসের নামে দায় স্বীকারের খবর আসে। গত বছর ১ জুলাইয়ে গুলশানের কূটনীতিক পাড়ার হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলায় ১৭ বিদেশি ও দুই পুলিশ সদস্যসহ ২২ জনকে হত্যার আলোচিত ঘটনায়ও আইএসের নামে দায় স্বীকারের খবরকে গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর।

বার্ষিক ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, এই অঞ্চলে আইএস ও আল-কায়েদা কয়েকটি হামলার চালানোর দাবি করেছে। আইএস ও আল-কায়েদার মতো জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো বাংলাদেশের সংখ্যালঘু, বিদেশি, পুলিশ, সেক্যুলার ব্লগার ও প্রকাশকদের লক্ষ্য করে হামলা চালায়। নিজেদের কর্মকাণ্ড ও বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য সামাজিক মাধ্যমকে বেছে নিয়েছে জঙ্গিরা। আইএস ও আল-কায়েদার সংশ্লিষ্ট কিছু প্রকাশনা, ওয়েবসাইট ও ভিডিওতে বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। তবে বাংলাদেশ সরকার এসব জঙ্গি হামলার জন্য স্থানীয় জঙ্গি ও বিরোধী দলকে দোষারোপ করে। বিভিন্ন জঙ্গি আস্তানায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের বিষয়টি তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়, “কিছু অভিযান আইশৃঙ্খলা বাহিনী- সুনির্দিষ্টভাবে র‌্যাবের সাজানো বলে পর্যেবেক্ষকদের বিশ্বাস।

তবে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দাবি অনুযায়ী, বিরোধী কিংবা স্থানীয় জঙ্গিদের প্রতি সন্দেহ জারি রাখলেও বাংলাদেশ সরকার সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিতে অবস্থান করছে। আর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সঙ্গে রেখে তারা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।’

জঙ্গি সংগঠনগুলো সামাজিক মাধ্যমের মাধ্যমে নিজেদের বার্তা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়। আইএসের বেশ কয়েকটি ভিডিওতেও বাংলাদেশের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতে, বিদেশি জঙ্গিদের ধরতে প্রয়োজনীয় আইন না থাকলেও বাংলাদেশ সন্ত্রাসী সন্দেহে কয়েকজন বিদেশি সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যৌথভাবে বাংলাদেশ স্থল, জল ও আকাশ সীমারেখা শক্তিশালী করেছে। সামনে এই নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করার পরিকল্পনা রয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাংলাদেশের সীমান্তে অবকাঠামো নির্মাণে সহায়তা করছে।’

জঙ্গিবাদে অর্থায়ন বন্ধে সন্দেহজনক লেনদেন আটকানোসহ ব্যাংকিং ও অন্যান্য খাতে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা বাস্তবায়নের তাগিদ দেওয়া হয় প্রতিবেদনে।

/এমএইচ/বিএ/